আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্যের দ্রুত উন্নতি
2021-10-18 14:35:56

চীনের আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য কয়েক বছর ধরে শক্তি সঞ্চয় করে বর্তমানে দ্রুত উন্নয়নের ‘স্বর্ণযুগে’প্রবেশ করেছে। চীনের আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য সামগ্রিক পাইলট এলাকা ১০৫টি পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছে। গত পাঁচ বছরে আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে চীনের আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্যের আমদানি-রপ্তানি পরিমাণ ছিল ৮৮.৬৭ বিলিয়ন ইউয়ান, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮.৬ শতাংশ বেশি। আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য বৈদেশিক বাণিজ্য উন্নয়নের নতুন চালিকাশক্তি, রূপান্তর ও উন্নতির নতুন চ্যানেল ও উচ্চমানের উন্নয়নের নতুন ধারকে পরিণত হয়েছে।

 

চীনের (নাননিং) আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য সামগ্রিক পাইলট এলাকায় ঘন ঘন যাতায়াত করা মালবাহী ট্রাকগুলো চীন ও আসিয়ানের মধ্যে পণ্য পরিবহন করে থাকে। অনেক তরুণ-তরুণী এখানে আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য নিয়ে লাইভ-সংক্রান্ত কাজ করে থাকে। ২০১৮ সালে নাননিং আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য সামগ্রিক পাইলট এলাকা স্থাপিত হবার পর আন্তঃসীমান্ত ই-বাণজ্যের সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক কার্যক্রম ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য সামগ্রিক পাইলট এলাকায় আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্যের আমাদানি-রপ্তানির মোট পরিমাণ ছিল ৩ বিলিয়ন ইউয়ান।

 

সম্প্রতি বিশ্বায়ন থিংক ট্যাঙ্ক প্রকাশিত “টি-টু-সি আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য প্ল্যাটফর্ম ‘বিদেশ গমন’ গবেষণা রিপোর্টে’ দেখা গেছে,  বর্তমানে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য প্ল্যাটফর্মের প্রধান দেশ। পাশাপাশি, তারা বিশ্ব আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য বিনিময়ের প্রধান বাজার। বিশ্বের প্রায় ২৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্যভোগী (বি-টু-সি) আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য বিনিময় চীনের মূল-ভূভাগে হয়। তাই যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানী ও জাপানকে ছাড়িয়ে চীন এ ক্ষেত্রে প্রথম স্থান দখলে রেখেছে।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য দ্রুত বৃদ্ধির প্রবণতা দেখিয়েছে। চীনের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিনিময় কেন্দ্রের যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ গবেষণালয়ের গবেষক জাং মো নান বিশ্লেষণ করে বলেন, আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য বাণিজ্য ক্ষেত্রে চীন সংখ্যাগত বৃদ্ধি থেকে উচ্চমানের উন্নয়নে রূপান্তর করছে। আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য বিনিময় পণ্যদ্রব্যের রকম অনেক এবং পূর্ণাঙ্গ। প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিষ্ঠান (বি-টু-বি) আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য বিনিময়ের পরিমাণ স্পষ্টভাবে বেড়েছে। প্রচুর মাঝারি ও ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্যে যোগ দিয়ে চীনের সামগ্রিক শিল্প দক্ষতা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা শক্তি উন্নত করছে। উদ্ভাবনী বাজারে চীনের বাণিজ্যিক বৃদ্ধি স্পষ্টভাবে দ্রুত হচ্ছে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ল্যাটিন-আমেরিকা ও আফ্রিকাসহ ‘এক অঞ্চল এক পথ’ বরাবর দেশে আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্যের বৃদ্ধির গতি খুবই বেশি।

 

জাং মো নান বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের ডিজিটাল অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে নতুন প্রজন্মের তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার এবং চীনের ডিজিটাল অবকাঠামো নির্মাণ জোরদার আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্যের জন্য সুষ্ঠু শিল্প ভিত্তি ও পরিবেশ সরবরাহ করেছে। চীনের ১০৫টি আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য সামগ্রিক পাইলট অঞ্চল সারা দেশে ছড়িয়ে রয়েছে।

 

 

পাইলট অঞ্চলের পরিপক্ব অভিজ্ঞতা ও ব্যবস্থার সৃজনশীলতা সারা দেশে তুলে ধরা হচ্ছে। চীন সরকার অব্যাহতভাবে বাণিজ্যিক বিনিয়োগ সুবিধা সমর্থনকারী নীতি প্রণয়ন করছে, উন্মুক্তকরণের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা অন্বেষণ করছে এবং আমদানি মেলা, ক্যান্টন ফেয়ার ও পণ্যভোগ মেলাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী বা মেলায় আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্যের ‘ক্লাউড প্রদর্শনী’র মাধ্যমে স্পষ্ট নমুনা স্থাপন করছে।

 

আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্যের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোর অন্যতম হিসেবে চীন বিদেশে গুদাম নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে, যা আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্যের উন্নয়নে নিশ্চয়তা প্রদান করছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত বছর চীনের বিদেশে গুদামের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮শ’টি এবং তাদের আয়তন ছিল ১২ মিলিয়ন বর্গমিটার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে ৮০ ও ৫০ শতাংশ বেশি। চলতি বছর বিদেশে গুদামের সংখ্যা ও মাত্রা অধিকতরভাবে সম্প্রসারিত হয়ে ১ হাজার ৯শ’টিতে দাঁড়িয়েছে, যাদের আয়তন ১ হাজার ৩৫০ বর্গমিটার। চীনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে। এর মধ্যে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ায় বিভিন্ন অঞ্চলে চীনের গুদাম সংখ্যা অঞ্চলগুলোর মোট গুদাম সংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ দখল করে আছে।

 

চলতি বছরের জুলাই মাসে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের কার্যালয় প্রকাশিত ‘বৈদেশিক বাণিজ্যের নতুন কার্যক্রম ও উন্নয়ন বেগবান সংক্রান্ত প্রস্তাবে’অধিকতরভাবে আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য ক্ষেত্রে আরো ভাল নীতির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সক্রিয়ভাবে নতুন প্রযুক্তি ও নতুন যন্ত্র কাজে লাগিয়ে বৈদেশিক বাণিজ্যিক উন্নয়নকে সমর্থন দেয়ার কথা বলা হয়। পাশাপাশি, আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য সামগ্রিক পাইলট অঞ্চলের পরীক্ষামূলক মাত্রা সম্প্রসারণ, সুদক্ষ বিদেশি গুদাম সংরক্ষণ, পৃথিবীজুড়ে গুদাম নেটওয়াক পূর্ণাঙ্গ করা, এবং মাঝারি ও ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের বিদেশি বাজারে নেতৃত্ব দানে সহায়তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তি বলেন, ‘চতুর্দশ পাঁচশালা পরিকল্পনা’ চলাকালে উন্মুক্তকরণ ও পারস্পরিক কল্যাণের উদ্যোগের মাধ্যমে আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য ও বিদেশি গুদামের উন্নয়নকে সমর্থন হবে বাণিজ্য বিভাগের প্রধান কাজ। বর্তমানে চীন ২২টি দেশের সঙ্গে ‘সিল্ক রোড ই-বাণিজ্য’ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতামূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। নীতিগত যোগাযোগ, ব্যবস্থাপনার সংযুক্তি, শিল্প ত্বরান্বিকরণ, স্থানীয় সহযোগিতা ও দক্ষতা নির্মাণসহ বহু পর্যায় ও বহু ক্ষেত্রে সহযোগিতা চালানোর মাধ্যমে ‘এক পথ এক অঞ্চল’ বরাবর দেশের ই-বাণিজ্য উন্নয়নের জন্য কল্যাণকর পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে।

 

আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্যে সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ডিজিটাল অর্থনীতির ক্ষেত্রে চীন নতুন রেসিং ট্র্যাকে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জাং মো নান মনে করেন, আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান বিদেশে গেলে তাদের পণ্যদ্রব্যের মান, সৃজনশীলতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা শক্তি উন্নত করার পাশাপাশি স্থানীয় বাণিজ্যিক নিয়ম মেনে চলা এবং উচ্চমানের উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দেয়া উচিত। চীনের আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য উন্নয়নে শুধু ‘বিভক্ত নীতি’ নয়, বরং ব্যবস্থার সৃজনশীলতা ও তত্ত্বাবধান জোরদার, প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজেদের আচরণ মানসম্পন্ন, এবং সামাজিক দায়িত্ব পালন করা দরকার। বিভিন্ন পক্ষকে যৌথভাবে আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্যের সুষ্ঠু শিল্প পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে চীনের আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্যের জন্য আরো বেশি ভালো পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়।

 

(প্রেমা/এনাম)