জীববৈচিত্র্য রক্ষায় চীনের অবদান
2021-10-13 10:30:16

বর্তমানে চীনের ইউননান প্রদেশের খুন মিং শহরে চলছে জীববৈচিত্র্য চুক্তি স্বাক্ষরকারীদের ১৫তম সম্মেলনের (কোপ১৫) প্রথম পর্যায়ের  অধিবেশন। ‘প্রাকৃতিক সভ্যতা: পৃথিবীতে জীবনের অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠন এবং ভবিষ্যত মানবজাতির সুন্দর প্রত্যাশা’কে প্রতিপাদ্য হিসেবে ধারণ করে গত সোমবার শুরু হয়েছে এবারের অধিবেশন।

২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জাতিসংঘ জীববৈচিত্র্য শীর্ষ সম্মেলনে একটি ভিডিও ভাষণ দিয়েছিলেন। তাতে তিনি বলেছিলেন, মানবজাতির সভ্যতার দায়িত্ব পালন করে প্রকৃতিকে সম্মান করবে, রক্ষা করবে, এবং প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে চলবে। প্রকৃতি ও মানবজাতির সঙ্গে সম্প্রীতিমূলক সহাবস্থান করার  উপায় অনুসন্ধান করবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক সংরক্ষণের সমন্বয় এগিয়ে নিয়ে যাবে। সবাই মিলে একটি সমৃদ্ধ পরিষ্কার ও সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলবে।

জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণে চীনের কথা ও কাজের মিল

গত ৮ অক্টোবর প্রকাশিত চীনা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ শ্বেতপত্রে বলা হয়, চীনে ৯০ শতাংশ স্থলজ বাস্তুতন্ত্র এবং ৭১ শতাংশ জাতীয় সংরক্ষণ বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদ কার্যকরভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। আমাদের ‘পুবের জানালা’ অনুষ্ঠানে আগে আমরা এশিয়ান বন্য হাতির গল্প বলেছিলাম। তারা সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে বেরিয়ে লোকালয়ের দিকে অনির্দিষ্ট পথে ৫০০ কিলোমিটারের মতো পথ হাঁটে। পরে অবশ্যই সবার সাহায্যে তারা নিরাপদে আবার বনে ফিরে যায়। চীনের সরকার ও জনগণ বন্য হাতি সংরক্ষণে যেসব কাজ করেছে, তা বিশ্বের স্বীকৃতি পেয়েছে। চীনে এশীয় বন্য হাতির সংখ্যা গত শতাব্দীর ৮০ দশকের ১৮০টি থেকে বেড়ে বর্তমানে ৩০০টিতে দাঁড়িয়েছে।

চলতি বছর চীনে প্রথম বারের মতো বন্য সাইবেরিয়ান বাঘ উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে বনে অবমুক্ত করা হয়েছে। সাইবেরিয়ার বাঘের জন্য সংরক্ষিত জাতীয় পার্কের আয়তন ১৪ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর ছাড়িয়েছে। সেখানে তিব্বতি মৃগীসহ নানা পশুপাখির সংখ্যা অনেক বেড়েছে।

চীনে রয়েছে সারা বিশ্বে থাকা সবচেয়ে বেশি উদ্ভিদ প্রজাতি। বিশ্বের ১০ শতাংশ উচ্চ পর্যায়ের উদ্ভিদ  চীনে রয়েছে। এমন অনেক উদ্ভিদ রয়েছে, যাদের অর্ধেকই কেবল চীনে বিদ্যমান।

বন্য পশুপাখি ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ করলে প্রাকৃতিক ব্যবস্থা রক্ষার পাশাপাশি জিনগত বৈচিত্র্য রক্ষা হয়। একটি প্রজাতি একটি জিন পুল। থু ইউ ইউ আর্টেমিসিনিন উদ্ভিদ থেকে ম্যালেরিয়ার  ওষুধ আবিষ্কার করেন। ইউয়ান লং পিং বন্য ধানের জিন থেকে হাইব্রিড ধান প্রচলন করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন  বীজ সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। সারা দেশ থেকে ২০ হাজারের বেশি বিরল বন্য উদ্ভিদের বীজ সংগ্রহ করা হয়েছে।

সভ্যতার উন্নয়নের ওপর নির্ভর করে সংস্কৃতির উন্নয়ন। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ হল মানবজাতির বেঁচে থাকা এবং উন্নয়নের ভিত্তি, তার পরিবর্তন সরাসরি সভ্যতার উত্থান এবং পতনের ওপর প্রভাব ফেলে।

পাহাড় ও সমুদ্রের কাছে থাকলে তার ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকা যায়। তবে এখন প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের পদ্ধতি অনেক পরিবর্তন হয়েছে। পশুপালক বন রক্ষকে পরিণত হয়েছে, খনি কর্মী এখন পর্যটন ব্যবসা করছেন। জেলেরা এখন মাছ রক্ষার কাজ করেন। আজকের চীনের বুদ্ধি ও পরিকল্পনা বিশ্বের স্বীকৃতি পেয়েছে। গত বছর প্রকাশিত বিশ্ব জীববৈচিত্র্য পূর্বাভাস প্রতিবেদনে ১৩ বারের মতো চীনের অভিজ্ঞতার উল্লেখ করা হয়। জীববৈচিত্র্য চুক্তি সচিবালয়ের নির্বাহী সচিব এলিজাবেথ মুরেমা বলেন, চীন বিশ্ব জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের শক্তিশালী সমর্থক ও অবদানকারী। চীন উত্থাপিত প্রাকৃতিক সভ্যতার ধারণা বিভিন্ন দেশের জীববৈচিত্র্য লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং মানুষ ও প্রকৃতির সহাবস্থানের ক্ষেত্রে চীনের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পারে নানা দেশ।

জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯০-২০২০ সালে বিশ্ব বনাঞ্চল ১৭ লাখ ৮০ হাজার বর্গকিলোমিটার হ্রাস পায়। তা লিবিয়ার আয়তনের সমান। লাইভ কোরালের আয়তন গত দেড় শতাব্দীতে অর্ধেক কমে গেছে। গত দু-তিন দশকে আরও দ্রুত গতিতে কমছে। বিশ্বে ১০ লাখের বেশি প্রাণী ও উদ্ভিদ বিলুপ্তির মুখে রয়েছে। আগামি কয়ক দশকে তারা বিলুপ্ত হতে পারে।

প্রকৃতি সাহায্যের জন্য আহ্বান করছে, তাই মানবজাতিকে তাদের উত্তর দিতে হবে। বর্তমানে আমরা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নের চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। বৈশ্বিক সংকট ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন মানবজাতি ও প্রকৃতি অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি।

সুন্দর একটি পৃথিবী গড়ে তুলা চীনের প্রতিশ্রুতি এবং চীন নিজের দায়িত্ব পালন করে আসছে। কেনিয়া, পাকিস্তানসহ যেখানেই চীনা কোম্পানি কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করে, সেখানেই তারা স্থানীয় বন্য প্রাণী এবং উদ্ভিদ সংরক্ষণের ব্যাপার বিবেচনা করে।  বড় পশু যেমন জিরাফের আসা-যাওয়ায় বিঘ্ন না-ঘটাতে কেনিয়ায় চীন নির্মিত রেলপথ দেশটির জাতীয় পার্ক সেতুতে পরিণত হয়েছে। ঘানায় সামুদ্রিক কচ্ছপ সংরক্ষণে বন্দর নির্মাণের সময় চীন একটি সামুদ্রিক কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্র নির্মাণ করে, সেখানে জন্ম হয়েছে হাজার হাজার সামুদ্রিক কচ্ছপ। এমন গল্প সারা বিশ্বে প্রচুর রয়েছে।

চীনারা প্রতিশ্রুতি রক্ষায় গুরুত্ব দেয়। কোপ১৫-এর চলমান অধিবেশনের আয়োজক ও সভাপতি দেশ হিসেবে চীন প্রাকৃতিক সভ্যতার অনুশীলনকারী এবং উদ্যোক্তার দায়িত্ব পালন করে টেকসই উন্নয়নের পথে চলবে। প্রাকৃতিক ব্যবস্থার মান ও স্থিতিশীলতা উন্নয়ন, এবং কার্বন নিরক্ষেপতা বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা চালাবে। মানব জাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠনে আরও ভূমিকা পালন করবে চীন। (শিশির/এনাম/রুবি)