চীনের খেলোয়াড় পিং ইয়ান লিয়ের গল্প
2021-10-08 20:46:52

অক্টোবর ১০: ১৯৮৪ সালের সপ্তম প্যারালিম্পিক গেমসে নারীদের বি-টু লেবেল লং জাম্প প্রতিযোগিতায় চীনের খেলোয়াড় পিং ইয়ান লি স্বর্ণপদক লাভ করেন। আজ আমরা তাঁর গল্প আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব। 

১৯৮৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত সপ্তম প্যারালিম্পিক গেমসের ফাইনালে নারীদের লং জাম্প প্রতিযোগিতায় ভাল পারফর্ম করে চীনের খেলোয়াড় পিং ইয়ান লি স্বর্ণপদক বিজয়ী হন। এটি ছিল চীনের প্রথম অলিম্পিক স্বর্ণপদক। তিনি একটি নতুন ইতিহাস রচনা করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ টিভির মাধ্যমে তাঁকে দেখেন। 

কয়েক দিন পর পিং ইয়া লি চীনের প্রতিবন্ধী ফেডারেশনের একজন নেতার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। ওই নেতা তাঁকে বলেন, “কমরেড পিং ইয়া লি, চীনের প্রতিবন্ধী খেলাধুলার জন্য আপনি অসাধারণ অবদান রেখেছেন। এজন্য আপনাকে আমরা তিনশ’ ইউয়ান বোনাস দেব এবং আপনার জন্য দুটো অ্যাপার্টমেন্ট বরাদ্দ করব। কেমন?”

পিং ইয়া লি উত্তরে বলেন, “স্যার, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ! এ বিষয়ে আমি আমার আব্বুর সাথে আলোচনা করেছি। আব্বু বলেছেন, একটি অ্যাপার্টমেন্ট হলেই চলবে, দু’টি লাগবে না। একটিই যথেষ্ট স্যার। অন্য একটি যাদের প্রয়োজন, তাদের বরাদ্দ দেন, স্যার।”

ওই নেতা জবাবে বলেন, “ঠিক আছে, আমরা আপনার সিদ্ধান্তকে সম্মান করব। কমরেড পিং ইয়া লি, আপনি হলেন চীনের প্রথম অলিম্পিক স্বর্ণপদক জয়ী। আপনি হলেন অলিম্পকি চ্যাম্পিয়ন। দেশের সবাই আপনার দিকে তাকিয়ে আছেন। আপনি সব সময় নিজকে উন্নত করতে থাকুন। চীনের সব প্রতিবন্ধীদের জন্য আপনি একটি মডেল সৃষ্টি করবেন, কেমন?”

পিং ইয়া লি উত্তরে বলেন, “জ্বী স্যার! অবশ্যই আমি সেটা করব।”

পরে তিনি বিয়ে করেন। কয়েক বছর তিনি দিনের বেলায় বেইজিংয়ের একটি কারখানায় তাঁর আগের চাকরি করেন; সন্ধ্যার পর খেলাধুলা প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন। ১৯৯১ সালে তাঁর ছেলের জন্ম হয়। তখন তাঁকে খেলাধুলার প্রশিক্ষণ বন্ধ রাখতে হয়। তিনি দিনের বেলায় কারখানায় কাজ করেন, এবং সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে ছেলের যত্ন নেন। 

তারপর পিং ইয়া লির কারখানা পরিচালনায় সমস্যা দেখা দেয়। তিনি চাকরি হারান। সে দিন থেকে তাঁর স্বামীর বেতন পরিবারের একমাত্র অবলম্বনে পরিণত হয়। তাঁর ছেলেও অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাঁকে সারা দিন ছেলের যত্ন নিতে হয় । তাঁর স্বামী আস্তে আস্তে পরিবর্তন হতে থাকেন। তিনি বাসায় কম আসতে থাকেন। অবশেষে তাদের বিচ্ছেদ হয়।  

পরিবারকে সমর্থন করার জন্য বন্ধু-বান্ধবী ও প্রতিবেশীদের সাহায্যে পিং ইয়া লি তাঁর নিজের বসবাসের অ্যপার্টমেন্টটির একটি কক্ষকে “পিং ইয়া লি মাসাজ ঘরে” পরিণত করেন। এভাবেই তাঁর নতুন জীবন শুরু হয়। 

প্রতিদিন তিনি অনেক পরিশ্রম করেন; খুব সকালে“পিং ইয়া লি মাসাজ ঘর” খুলেন এবং সন্ধ্যার অনেক পর বন্ধ করেন। 

সন্ধায় শেষ গ্রাহক চলে যাওয়ার পর পিং ইয়া লি অনেক কষ্ট করে বিছানায় শুতে যান। তখন তাঁর সারা শরীর একেবারে ক্লান্ত, বিশেষ করে তাঁর দুটি হাঁটুতে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার কারণে অনেক ব্যাথা হয়ে যায়। প্রতিদিন প্রত্যেক গ্রাহককে পিং ইয়া লি মন দিয়ে সেবা করেন। 

তিনি সিসিটিভির একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। উপস্থাপক তাঁকে জিজ্ঞেস করেন: “ইয়া লি, আপনি ১৯৮৪ সালে চীনের জন্য প্রথম অলিম্পিক স্বর্ণপদক অর্জন করার পর আমরা আপনার খবর অনেক কম জানি। আমরা জানতে পেরেছি, তারপরের বছরগুলোতে আপনি অনেক কষ্টকর জীবনযাপন করেছেন। আপনার চাকরি চলে গেছে। বিচ্ছেদ হয়েছে। আবার আপনি মাসাজ ঘর প্রতিষ্ঠা করেছেন। কোন জিনিষ আপনাকে সবচেয়ে বেশি সমর্থন করেছে? 

তিনি উত্তরে বলেন, “চাকরি হারানোতে আমার কোন হাত ছিল না। তবে, আমি একজন মা, মায়ের দায়িত্ব আমার সারা জীবন পালন করতে হবে। বিশেষ করে আমার বাচ্চাও একজন প্রতিবন্ধী, তাই আমার দায়িত্ব কখনো শেষ হবে না। সবার চোখে হয়তো আমি অলিম্পিক খেলার মাঠ থেকে অনেক দূরে চলে গেছি, তবে আমার মতে, জীবন একটি কখনো পর্দ না-নামা অলিম্পিক গেমসের মত, তাইনা?”
(আকাশ/এনাম/রুবি)