বেসামরিক লোকদের ওপর মার্কিন হামলা: ইতিহাসের ন্যাক্যারজনক অধ্যায়
2021-09-03 15:29:23

বেসামরিক লোকদের ওপর মার্কিন হামলা: ইতিহাসের ন্যাক্যারজনক অধ্যায়_fororder_e850352ac65c103814c6ece84bde991ab17e89bc

গত ২৯ আগস্ট আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে  মার্কিন চালকবিহীন বিমান সামরিক হামলা চালিয়েছে। আইএস জঙ্গিরা এ হামলার শিকার বলে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করলেও বর্তমানে তাদের থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়েছে। কারণ গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে তাদের হামলার লক্ষ্য ছিল আবাসিক এলাকার একটি বাসভবন। তাতে ১০ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়। তাদের মধ্যে দুই বছরের শিশুও রয়েছে। শুরুতে মার্কিন বাহিনী একজন সন্ত্রাসীকে হত্যার ঘোষণা করেছিল। ওই সন্ত্রাসী নাকি কাবুল বিমানবন্দরে আত্মঘাতি বোমা বিস্ফোরণে এগিয়ে আসছিল। তবে গণমাধ্যমের কল্যাণে আসল তথ্য সারা দুনিয়ায় রাষ্ট্র হয়ে গেলে মার্কিনীরা সে দাবি থেকে সরে আসে। চায়না মিডিয়া গ্রুপের (সিএমজি) এক সম্পাদকীয়তে সম্প্রতি এসব বলা হয়।

 

চায়না মিডিয়া গ্রুপের কাবুল প্রতিনিধি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, হামলায় আক্রান্ত গাড়িটি ওই বাসভবনের আঙ্গিনায় রয়েছে। পাশের একটি গাড়িও তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েকজন তরুণ ধ্বংসাবশেষ পরিস্কার করছে।

 

তারা এই প্রতিনিধিকে জানান, হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িটি মার্কিনীদের দাবী অনুযায়ী বিমানবন্দরে যাচ্ছিল না। বরং এটি বাইরে থেকে বাড়ীতে ফিরেছে। শিশুরা গাড়ির মালিককে ঘরে স্বাগত জানাচ্ছিল। এরই মধ্যে হামলা হয়।  প্রত্যক্ষদর্শীরাও গাড়িতে কোনো রকম বিস্ফোরক না-থাকার প্রমাণ পেয়েছে।

 

সম্পাদকীয়তে বলা হয়, নিহতদের আত্মীয়রা জানায়, গাড়িটির মালিক একটি বিদেশি সংস্থায় চাকরি করতো। মার্কিন হামলায় প্রাণ হারানোর আগে মার্কিন ভিসা পেয়েছিল সে। বিদেশি সংস্থার আয়োজনে সে কাবুল ত্যাগের অপেক্ষায় ছিল। তবে এখন তাকে সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে। আত্মীয়রা আরও জানান, ঘটনার পর কিছু পশ্চিমা গণমাধ্যম বারবার এসে তাদের জিজ্ঞেস করে, আইএসের সন্ত্রাসী কোথায়? এসব গণমাধ্যমের কর্মীরা নিহত ব্যক্তিটির আত্নীয়দের সন্ত্রাসীকে লোকাতে সাহায্য করেছে কিনা জানতে চায়। গণমাধ্যমের এহেন আচরণে তারা ক্ষুব্ধ বলে জানান।

 

সম্পাদকীয়তে আরো বলা হয়, গত ২০ বছরে মার্কিন বাহিনীর ভুল হামলার ঘটনা অনেক ঘটেছে। গত ২৬ আগস্ট কাবুল বিমানবন্দরে বিস্ফোরণের পর বেসামরিক লোকদের ওপর গুলি বর্ষণ করে মার্কিন বাহিনী। তার পর গত ২৯ আগস্ট আবার ভুল করে আবাসিক বাসভবনে হামলা চালায়। তাই সবাই বলছে আর কত রক্ত ঝরাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র?

 

মার্কিন হামলা প্রসঙ্গে সিএমজির কাবুল প্রতিনিধি আরও জানান, ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর তিনি মার্কিন বাহিনীর মিথ্যাচার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করেন। মার্কিন বাহিনী কাবুল বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে গাড়িটির ওপর হামলা চালিয়েছে বলে ঘোষণা করেছিল। তবে বাস্তবে গাড়িটি বাসভবনের আঙ্গিনায় পার্ক করা ছিল। হতাহতদের আইএস সন্ত্রাসী বলে দাবি করলেও নিহতের ভাইয়ের সাক্ষাত্কার অনুযায়ী, নিহত ব্যক্তি একটি বিদেশি সংস্থায় গত ১৭ বছর ধরে কর্মরত ছিলেন। সে ও তার ছেলে প্রত্যাহার ভিসা পেয়ে কাবুল ত্যাগের অপেক্ষায় ছিল।

 

কাবুল প্রতিনিধি আরো জানান, মার্কিন বাহিনী একটি রকেট নিক্ষেপের পর এমন বিস্ফোরণ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে ঘটনাস্থলে তেমন কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। ফলে মার্কিন বাহিনী সন্ত্রাসী নিধনের নামে নিরীহ লোকদের হত্যা করে বারবার পার পেয়ে গেলেও এবার ফেঁসে গেছে।

রুবি/এনাম