অনুগ্র ও সহনশীল সরকার চায় আফগান জনগণ
2021-09-01 15:06:45

সেপ্টেম্বর ০১: গত সোমবার মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের প্রধান জেনারেল কেনেথ ম্যাকেনজি আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্যদের প্রত্যাহার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছেন। এ দিন সন্ধ্যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা করেন, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২০ বছরের সামরিক উপস্থিতি শেষ হয়েছে।       

মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানের তালিবানের মুখপাত্র সোহাইল শাহীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোষণা করেন, “আফগান সময় রাত ১২টায় সর্বশেষ মার্কিন সেনা আফগানিস্তান ত্যাগ করেছেন। ফলে আমাদের দেশ সম্পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। প্রত্যেক আফগানকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।”

এ সময় আফগান জনগণ প্রত্যাশা করছেন, শান্তিপূর্ন পরিবেশে দেশের পূনর্নির্মাণ ও অর্থনীতির উন্নয়ন হবে।
 
রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম জিলানি জৌক চায়না মিডিয়া গ্রুপকে (সিএমজি) দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে বলেন, কয়েক দশক ধরে বাইরের শত্রুরা আফগানিস্তানে আক্রমণ ও হস্তক্ষেপ করে আসছে। তাতে আফগানিস্তানকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। 

তিনি বলেন, মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তানে ২০ বছর থেকেছে। আফগান জনগণ যুদ্ধের যন্ত্রণায় অতিষ্ট। বড় দেশগুলোর উচিত আফগানিস্তানে হস্তক্ষেপ বন্ধ করা। 

তিনি আরো বলেন, চীন আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপরে হস্তক্ষেপ না-করার নীতি মেনে চলছে। তা আফগানিস্তান ও এ অঞ্চলের স্বার্থের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।  

আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতাকে সম্মান করে আসছে চীন। সেদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ-না করার নীতি পালন করে আসছে বেইজিং। রাজনৈতিক উপায়ে আফগান সমস্যা সমাধান করার জন্য চীন সবসময় গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে আসছে। 

আফগান নেটিজেন আব্দুল হালিল হামিদি বলেন, চীন হচ্ছে আফগানিস্তানের বন্ধুত্বপূর্ণ ও সুপ্রতিবেশী দেশ। চীন সবসময় আফগানদের সহায্য প্রদান করে আসছে। চীন কখনোই দেশটির অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেনি।

আফগানিস্তানের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চীন দেশের সবপক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে একটি উন্মুক্ত ও সহনশীল রাজনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব পেশ করেছে। 

কাবুলকে অনুগ্র, স্থিতিশিল, ও সুষ্ঠু নীতি বজায় রেখে সব ধরনের উগ্র ও সন্ত্রাসীদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছে বেইজিং। 

পাশাপাশি, আফগানিস্তানকে আগামিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে, বিশেষ করে আশেপাশে দেশের সাথে, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার কথা বলেছে চীন।

আফগানিস্তানের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মাতিউল্লাহ খারোতি জানান, দেশটির বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে শান্তিপূর্ন আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে কাজ করছে চীন। চীন আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না-করার অবস্থান মেনে চলছে। চীন কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের মত আফগানিস্তানে শক্তি প্রয়োগ করেনি।

তিনি আরো জানান, চীনের প্রস্তাব সত্যিকারার্থে আফগানিস্তানে শান্তি বাস্তবায়নের জন্য এবং আফগান জনগণের মানবাধিকারের প্রতি সম্মানজনক। তা দেশটির পরিস্থিতি ও জনগণের স্বার্থের সংগে সঙ্গতিপূর্ণ।

তিনি মনে করেন, আফগান জনগণ একটি অনুগ্র ও সহনশীল সরকার চায়। সবার অধিকার নিশ্চিত করা উচিত।

তিনি বলেন, “আশা করি, নতুন সরকার প্রতিষ্ঠার পর অনুগ্র ও স্থিতিশীল নীতি পালন করবে। যাতে আফগান জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকবে। যত দ্রুত সম্ভব অর্থনীতির পুনরুদ্ধার শুরু হবে।”

বর্তমানে শান্তি, স্থিতিশীল ও আন্তর্জাতিক সমর্থন আফগানিস্তানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম জিলানি জৌক বলেন, যদি আফগানিস্তানের নতুন সরকার ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা এড়াতে চায়, তাহলে তাকে আল-কায়েদা ও পূর্ব-তার্কিস্তানসহ সব ধরনের  চরমপন্থী সংস্থার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। 

পাশাপাশি, যদি নিজ দেশের অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়ন চায়, তাহলে তাকে চীনের সাথে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগ সম্প্রাসরণ করতে হবে, যোগ করেন তিনি। 

তাঁর মতে, দেশের পুনর্নির্মাণ ও বিদেশি সহায়তাকারীদের জন্য আফগানিস্তানের একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল পরিবেশ প্রদান করা উচিত। 

চায়না মিডিয়া গ্রুপ(সিএমজি) থেকে আকাশ