সাইহানপার অতীত, বর্তমান এবং চেতনা
2021-08-27 19:05:45

সম্প্রতি জাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় হাকাইন্দে ছিলেমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।

 

অভিনন্দন বার্তায় সি চিন পিং বলেন, চীন ও জাম্বিয়া ভালো বন্ধু, অংশীদার ও ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ। কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থা বেড়েছে এবং নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা ফলপ্রসূ হয়েছে। পরস্পরের কেন্দ্রীয় ও গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ-সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং পারস্পরিক সমর্থন বেড়েছে।

 

চীন-জাম্বিয়া সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, তিনি নয়া প্রেসিডেন্টের সঙ্গে নানা ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আগ্রহী।

 

 

গত ২৪ আগস্ট চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং হ্যপেই প্রদেশের ছেংত্য শহর পরিদর্শন করেছেন।

 

সেখানে তিনি ছেংত্য রাজকীয় গ্রীষ্মকালীন রিসোর্ট, পুনিং মন্দির, ছেংত্য জাদুঘর, তা কুই কৌ গ্রাম এবং পেনশন সেন্টার ঘুরে দেখেন।

এ সময় তিনি স্থানীয় ঐতিহ্য ধারণ, ধর্মীয় কার্যক্রম, জাতীয় ঐক্য, গ্রামাঞ্চলের পুনরুত্থান, এবং পেনশন সেবাসহ নানা বিষয়ে দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।

সাইহানপার অতীত, বর্তমান এবং চেতনা_fororder_9358d109b3de9c82a51d77ca1ee3860318d843e2

উল্লেখ্য, ১৭০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত গ্রীষ্মকালীন রাজকীয় রিসোর্ট বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত রাজকীয় উদ্যান। এটি বেইজিংর পর দ্বিতীয় রাজনৈতিক কেন্দ্র।

 

রিসোর্টের উত্তরাঞ্চলে উত্তর চীনের বৃহত্তম তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্মের পুনিং মন্দির অবস্থিত। চীনের ছিং সাম্রাজ্যের রাজারা এটি সিনচিয়াং ও তিব্বতসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতির জন্য নির্মাণ করেন।

 

সেদিন বিকেলে সি চিন পিং তা কুই কৌ গ্রামে পুনরুত্থান কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রামটি লিয়ান হুয়া পাহাড়ের সম্পদের উপর নির্ভর করে পর্যটন শিল্প ও আধুনিক কৃষির উন্নয়ন করেছে।

 

গত বছর  গ্রামের আয় ছিল ১৬.৫ লাখ ইউয়ান। আর গ্রামবাসীর মাথাপিছু আয় ছিল ১৭ হাজার ইউয়ান।

 

কাও সিন অঞ্চলের বিন হ্য কমিউনিটির পেনশন সেবা কেন্দ্রও পরিদর্শন করেন সি চিন পিং। এ কেন্দ্র নানা পদ্ধতিতে প্রবীণদের আরামদায়ক অবসর জীবন কাটাতে সহায়তা করে।

 

গত ২৩ আগস্ট চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও দেশের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং হ্যপেই প্রদেশের সাই হান পা বনাঞ্চল পরিদর্শন করেছেন।

 

সেখানে তিনি হ্যপেই প্রদেশের পরিবেশ সুরক্ষা সম্পর্কিত পরিস্থিতি এবং বনরক্ষীদের খোঁজ-খবর নেন। 

 

সেসময় বনাঞ্চলের উচ্চমানের গুণগত উন্নয়ন এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন তিনি। 

 

অতীতে সাই হাং পায়ে অনেক ঘাষ ও বন ছিল। তবে গত শতাব্দীর শুরুতে সেখানে গুরুতর মরুকরণ হয়। ফলে ১৯৬২ সালে চীনের বন মন্ত্রণালয় সাই হাং পায়ে বড় আকারের বনায়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে। গত ৫৯ বছরের প্রচেষ্টার পর এখন সাই হাং পা বিশ্বের বৃহত্তম কৃত্রিম বনাঞ্চলে পরিণত হয়েছে।

 

২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সান হাং পা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ দিক-র্নিদেশনা দেন। সব সিপিসি সদস্যদের ও দেশবাসীকে সবুজ উন্নয়নের ও ‘সাই হান পা’ চেতনা ধারণ করার আহ্বান জানান। 

 

এবারের পরিদর্শনের সময় সি চিন পিং বলেন, ‘সাই হান পা’ চেতনা হচ্ছে সিপিসির চেতনার একটি অংশ। সিপিসির সব সদস্যদের ও দেশবাসীকে এ চেতনার আলোকে সবুজ অর্থনীতির সুষ্ঠু উন্নয়ন করতে হবে। সাই হান পাকেও নতুন যাত্রায় আরো সুফল অর্জনের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। 

 

২. সাইহানপার অতীত, বর্তমান এবং চেতনা

সাইহানপার অতীত, বর্তমান এবং চেতনা_fororder_fc1f4134970a304e1bae68d5a4aaa18fc8175cf8

যেমনটি বলছিলাম, সম্প্রতি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং হ্য পেই প্রদেশের উত্তরাঞ্চলের সাইহানপা জাতীয় উদ্যান পরিদর্শন করেছেন।

সাইহানপা ‘সবুজ মুক্তা’ হিসেবেও চিহ্নিত হয়। বেইজিং ও থিয়ানচিনের প্রকৃতির রক্ষক এই বনাঞ্চল আজ থেকে অর্ধ শতাব্দী আগে ছিল মরুভূমি।  তাই একে মরুকরণ থেকে রক্ষা করে পুনরায় বনাঞ্চলে রূপান্তরের উদ্যাগ নেই চীন। ফলে গত অর্ধ শতাব্দী ধরে তিন প্রজন্মের বন রক্ষণাবেক্ষনের পরিশ্রমের ফলে সেখানে গড়ে ওঠেছে বিশ্বের বৃহত্তম কৃত্রিম বনাঞ্চল।

 

২০১৭ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়ে বলেছিলেন, পুরো পার্টি ও সমাজের উচিত সবুজ উন্নয়নের চেতনায় সাইহানপা চেতনা সম্প্রসারণ করা।

 

গত ২৩ আগস্ট সি চিন পিং সাইহানপা চি সিয়ে বনখামার পরিদর্শনের সময় তিনি বনাঞ্চলের কর্মীদের নতুন যাত্রা উন্মোচনে উত্সাহিত করেন।

 

১৯৬২ সালে সাইহানপা চি সিয়ে বন খামার গড়ে তোলা হয়। হ্য পেই প্রদেশের চেংতে কৃষি একাডেমির সদ্য স্নাতক তরুণ চাও জেন ইয়ুসহ মোট ৩৬৯ জনকে নিয়ে খামার কর্মীদল গঠিত হয়।

 

চাও জেন ইয়ু’র মতো অনেক তরুণ মরভূমিতে সাইহানপা বণাঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে যান। তারাই সাইহানপা বনাঞ্চলের প্রথম প্রজন্মের রক্ষকে পরিণত হন।

 

চাও জেন ইয়ু বলেন, ‘প্রথম দিকে সেখানকার এত কঠিন পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতাম না। আবহাওয়া খুব খারাপ ছিল। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৪৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বরফ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসও ছিল। মুখ না ঢেকে দিলে সমস্যায় পড়তে হতো।’

 

তবে সব ধরণের বিরূপ পরিস্থিতি উপেক্ষা করে চাও জেন ইয়ু সাইহানপা’তে কয়েক ডজন বছর ধরে কাজ করেন। তিনি তার সবচেয়ে সুন্দর সময় সেখানে উত্সর্গ করেন।

 

বণাঞ্চলে অগ্নিকান্ড রোধ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওয়াং হাই ভবনকে খাবারের চোখ হিসেবে গণ্য করে সাইহানপা’র কর্মীরা। সাতান্ন বছর বয়সী ইয়ু ছেং ২০ বছর ধরে এ ভবনের দেখবালের কাজ করছেন। তার বাবা প্রথম প্রজন্মের রক্ষক। ইয়ু ছেং’র স্ত্রীও তার সাথে এখানে আছেন। এ দম্পতি একসাথে বনাঞ্চল এবং তাদের বাড়ী রক্ষা করেন।

 

১৯৮৯ সালে জন্মানো চৌ চিয়ান মিং তৃতীয় প্রজন্মের রক্ষক। হ্য পেই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক লাভ করার পর তিনি তার বাবার কাছ থেকে বনাঞ্চল রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, “আমি এখানে জন্মগ্রহণ করেছি। এখানে জীবন শুরু করেছি। এখানকার পাহাড়, পানি, গাছপাতা ও ঘাসসহ সবকিছু আমার দাদা, বাবাসহ প্রথম ও দ্বিতীয় প্রজন্মের রক্ষকদের হাতে গড়া। তাদের কাজ ও চেতনা ধারণ করা আমার মতো তৃতীয় প্রজন্মের রক্ষকের অভিন্ন দায়িত্ব।