মহাকাশে চীনা নভোচারীদের জীবন
2021-08-25 10:42:38

‘শেন চৌ-১২’ মহাকাশযান উতক্ষেপনের পর থেকে চীনের তিনজন নভোচারী দুই মাসের মতো মহাকাশে থাকেন। মহাকাশে তাদের জীবনযাপন কেমন ছিল? তারা কী কী খেয়েছেন? তাদের জন্য কোন বিনোদন ব্যবস্থা ছিল কিনা? আজকের অনুষ্ঠানে আমরা সেসব নিয়ে কথা বলব।

গত ১৭ জুন ‘শেন চৌ -১২’ মনুষ্যবাহী মহাকাশযান সফলভাবে উতক্ষেপন করা হয়। নিয়ে হাই শেং, লিউ পো মিং, ও থাং হং পো নামের তিনজন নভোচারী তাতে চড়ে মহাকাশে পাড়ি জমান। সেখানে তারা দুই মাস অবস্থান করেন। সেসময়ে তারা মহাকাশযানের বাইরে এসে হাঁটাহাঁটি করেছেন, সরঞ্জাম পরিবর্তন করেছেন, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করেছেন, মহাকাশযানে তাদের কক্ষ সাজিয়েছেন। এক কথায় মহাকাশের নতুন ‘বাড়ি’তে তারা সুখি ও মজার জীবন যাপন করছেন।

মহাকাশে খাবার

চীনা নভোচারীদের প্রথম যে কাজ ছিল- তা করতে তাদের সাত ঘন্টার মতো সময় লেগেছে। মহাকাশে এত সময় কাজ করতে প্রচুর শক্তি দরকার। তাই তারা প্রচুর খাবার খেয়েছেন। মহাকাশ স্টেশনে তাদের জন্য ছিল প্রচুর খাবার। বর্তমানে চীনের স্টেশনে ১০০টির বেশি ধরনের খাবার রয়েছে। তাতে জনপ্রিয় খাবরসমূহের প্রায় সবকিছুই রয়েছে। নভোচারীদের জন্য আরো পুষ্টির খাবার তৈরি নিয়ে গবেষণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আমরা চীনা নভোচারীদের এক দিনের খাবার তালিকা একটু দেখব। সকালে জাউ, রুটি এবং সস থাকে, দুপুরে থাকে মাংস, শাকসবজি, গরুর মাংসের স্যুপ এবং জংজি ( এক ধরনের আঠালো চালের মিষ্টি) । রাতে তারা খান মুরগি ও মাছ। তাছাড়া, চকলেট, কুকিজ এবং ফল খেতে পারেন তারা। স্টেশনের রান্নঘরে এ খাবারগুলোকে গরম করার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রত্যেক নভোচারী নিজের প্রিয় খাবার খেতে পারেন। তাদের ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী মেনু তৈরি করা হয়।

মহাকাশে পানীয়

প্রতিদিন জেগে উঠার পর নভোচারীরা কিছু পানীয় পান করেন। তারা একটি স্বচ্ছ ব্যাগের পানীয় খান। মহাকাশে কোন পানি থাকে না, তাই তাদের নিরাপদ ও বিশ্বাসযোগ্য পানীয় পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের কি মনে আছে? শেন চৌ-১২ মহাকাশযান উতক্ষেপনের আগে চীন ‘থিয়ান চৌ-২’ মহাকাশযানের মাধ্যমে  অনেক সামগ্রী স্পেস স্টেশনে পাঠায়। এর মধ্যে ছিল ১০টি পানীয় ভান্ডার। তাছাড়া, পুনর্ব্যবহৃত এবং পুনরুদ্ধারকৃত পানীয়ও ব্যবহার করেন তারা। প্রযুক্তির সাহায্যে তাদের শ্বাসের পানি আবার তারা সংগ্রহ করতে এবং প্রয়োজনে তাদের প্রস্রাবকে বিশুদ্ধ পানিতেও রূপান্তর করতে পারেন।

মহাকাশে শারীরচর্চা

অধিকাংশ সময় তিনজন নভোচারী নীল রঙের ইউনিফর্ম পরে কাজ করেন।  বিভিন্ন পরিবেশে মাধ্যাকর্ষণ ভিন্ন হয় এবং তাদেরর উপর চাপও পরিবর্তন হয়। তাই তাদের জন্য পরিবেশ বান্ধব এবং ইলাস্টিক উপকরণ দিয়ে বিশেষ জুতা তৈরি করা হয়।

স্টেশনে শরীরচর্চা জোন আছে। সেখানে তারা দৌড়াতে পারেন। পেশীর প্রশিক্ষণ এবং সাইকেলিংসহ নানা রকম শরীরচর্চা করতে পারেন। মহাকাশে শরীরচর্চা করলে পেশী এবং হাড় ক্ষয় প্রতিরোধ হয়। তারা ওজন কমানোর জন্য নয়, বরং ওজনহীনতায় নিজের  পেশী ও হাড়কে শক্তিশালি করতে শরীরচর্চা করেন।

শারীরিক পরীক্ষা

মহাকাশে দীর্ঘে সময় বাস করলে অসুস্থ হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তাই নভোচারীরা সেখানে নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করান। অন্ধকার রুমে তারা পরস্পরের চোখের পরীক্ষা করেন এবং যন্ত্রের মাধ্যমে হাড়ের ঘনত্বের পরীক্ষা করেন। পাশাপাশি, তারা নিয়মিত নিজেদের পরীক্ষা করেন। প্রতি ৪-৫ সপ্তাহে তারা চিকিত্সা সরঞ্জাম দিয়ে আল্ট্রাসাউন্ড, ও রক্তের নানা রকম  পরীক্ষা করেন। তারা একে অপরের চিকিত্সকের মতো রক্ত পরীক্ষা, কার্ডিয়াক ও পেটের আল্ট্রাসাউন্ড করতে পারেন।

মহাকাশে বিনোদন

স্পেস স্টেশনে পৌঁছানোর পরপরই তিনজন নভোচারী ওয়াইফাই স্থাপন করেন এবং স্মার্ট হোম তৈরি করেন। স্টেশনে রয়েছে ১০টির বেশি ক্যামেরা, ইয়ারফোন, মোবাইলফোন, প্যাড ও নোটবুকসহ নানা বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম। তারা পৃথিবীতে সহকর্মী, ও পরিবারের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ বজায় রাখতে পারেন এবং ভিডিও ফোন করতে পারেন।

তারা বিশেষ এক ধরণের হেডফোন ব্যবহার করেন, যা বেশি সময় ধরে  পরে থাকলেও কান ব্যাথা হয় না। ব্লুটুথ ও ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে তিনজন নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারেন। অবশ্যই পৃথিবীর সঙ্গেও কথা বলতে পারেন।

দীর্ঘ সময় আবদ্ধ স্থানে থাকলে মানসিক চাপ বেশি হতে পারে। তাই নভোচারীদের মানসিক সুরক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ একটি কর্তব্য। তারা অনলাইনে নিউজ পড়েন, ইমেল পাঠান ও গ্রহণ করেন, পরিবারের সঙ্গে ফোন করেন এবং উত্সব ও জন্মদিনসহ বিশেষ দিন পৃথিবীর সাথে উদযাপন করেন। পৃথিবীর লোকজনও নভোচারীদের চাহিদা অনুযায়ী বিনোদন অনুষ্ঠান পাঠান। কিছু দিন আগে তিনজন নভোচারী টোকিও অলিম্পিক গেমস দেখেছেন।

পাশাপাশি, স্পে স্টেশনে তারা চলচ্চিত্র দেখতে পারেন, সংগীত শুনতে পারেন, বই পড়তে পারেন এবং প্রজেক্টর, বাঁশি এবং হারমোনিয়ামসহ ব্যক্তিগত বিনোদন সরঞ্জাম আছে তাদের। প্রযুক্তিগত  গবেষকরা সেখানে একটি মানসিক প্রশান্তিময় ব্যবস্থা তৈরি করেছেন। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে তিনজন পরিবার, পৃথিবীর দৃশ্য ও পরিচিত জীবনের দৃশ্য দেখতে পারেন। ব্যক্তিগত ভয়েস চ্যানেলও আছে। এর মাধ্যমে নভোচারীদের পরিবারের সাথে ফোনালাপের সব বিষয়বস্তু গোপন থাকে। (শিশির/এনাম/রুবি)