‘চীনের পুরাকীর্তি রক্ষা কর্মদল’ বিদেশি সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি পুনরুদ্ধারের ‘গোল্ডেন সাইনবোর্ড’ হয়ে উঠেছে
2021-08-24 13:29:46

‘চীনের পুরাকীর্তি রক্ষা কর্মদল’ বিদেশি সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি পুনরুদ্ধারের ‘গোল্ডেন সাইনবোর্ড’ হয়ে উঠেছে_fororder___172.100.100.3_temp_9500031_1_9500031_1_1_1989f4cb-d884-47ab-82a0-e1d7b58489c4

চীন ১৯৮৫ সালে ‘বিশ্বের সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা কনভেনশন’-এ যোগ দিয়েছিল। বর্তমানে ছুয়ানচৌ-সহ চীনের মোট ৫৬টি বিশ্ব ঐতিহ্য রয়েছে। চীন হলো অসংখ্য বিশ্ব ঐতিহ্যের অধিকারী দেশ। চীন বিশ্ব ঐতিহ্য খাতের বৈশ্বিক প্রশাসনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। চীন চারবার বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছে, বিশ্ব ঐতিহ্য খাতে বৈশ্বিক প্রশাসনে অবদান রেখেছে। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ খাতে ইউনেস্কোর ‘আফ্রিকা অগ্রাধিকার’ কৌশল বাস্তবায়নে সমর্থন দিয়েছে এবং আফ্রিকাকে ঐতিহ্য রক্ষায় সহায়তা দিয়েছে চীন। চীনও কম্বোডিয়া, কেনিয়া, নেপালসহ বিভিন্ন দেশকে ঐতিহ্য রক্ষা ও পুনরুদ্ধারে সমর্থন জানায়। ‘চীনের বিদেশে সহায়তা সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি কর্মদল’ ধীরে ধীরে বিদেশি সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি পুনরুদ্ধারের ‘সুবর্ণ কার্ড’ হয়ে উঠেছে, যা চীনা এবং বিদেশি সভ্যতার বিনিময় ও পারস্পরিক শিক্ষার ভালো সুযোগ করে দিয়েছে।

 

কম্বোডিয়ার সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি পুনরুদ্ধারে চীনের সহায়তা দলের তরুণ সদস্য ওয়াং চিন অ্যাংকর প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ অনুসন্ধান করছেন। কম্বোডিয়ার অ্যাংকর রাজকীয় প্রাসাদ ধ্বংসাবশেষের তৃতীয় পর্বের পুনরুদ্ধার প্রকল্পের দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে, ওয়াং চিন ও তার সঙ্গীরা ১১ বছরে এ রাজকীয় ধ্বংসাবশেষ পুনরুদ্ধারের কাজটি করবে। ওয়াং চিন বলেন, “এই প্রকল্প ২০১৯ সালে শুরু হয়েছে এবং ২০৩০ সাল পর্যন্ত চলবে। রাজকীয় প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ সমগ্র অ্যাংকরের একটি মূল স্থানে রয়েছে। অ্যাংকর থামের কেন্দ্রীয় অংশ ছাড়া, সবচেয়ে বিখ্যাত হলো অ্যাংকরের ‘খেমার স্মাইল’ (Khmer Smile) এর মূল ভবন। আসলে রাজকীয় প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ প্রায় চার-পাঁচশ বছর ধরে অ্যাংকর রাজবংশের প্রাসাদের আসন হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

 

১৯৯২ সালে এটি বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। ১৯৯৩ সালে কম্বোডিয়া সরকার ও ইউনেস্কোর যৌথ উদ্যোগে ‘অ্যাংকর মনুমেন্টস সংরক্ষণ’ প্রকল্প শুরু হয়। এতে দশটিরও বেশি দেশ থেকে ধারাবাহিক তহবিল ও প্রযুক্তিগত সহায়তা এসেছে। অ্যাংকর মনুমেন্টস সংরক্ষণ পদক্ষেপ প্রথম দফার আন্তর্জাতিক উদ্যোগের মধ্যে একটি। চীন গত শতাব্দীর ৯০ দশক থেকে অ্যাংকর মনুমেন্টস সংরক্ষণ পদক্ষেপে অংশ নেয় এবং কম্বোডিয়ায় ধসে পড়া ও ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ও প্রাচীন ভবন মেরামতে সাহায্য করে। এখন পর্যন্ত দু’টি মন্দির মেরামতে প্রকল্প শেষ হয়েছে।

‘চীনের পুরাকীর্তি রক্ষা কর্মদল’ বিদেশি সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি পুনরুদ্ধারের ‘গোল্ডেন সাইনবোর্ড’ হয়ে উঠেছে_fororder___172.100.100.3_temp_9500031_1_9500031_1_1_35901862-3aa5-4219-bef3-27b2cccb4b37

ওয়াং চিন মনে করেন, চীনের সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ পুনরুদ্ধার দল প্রাসাদের পুনরুদ্ধার প্রকল্প সম্পন্ন করতে পারবে। ইতোমধ্যে চীনা পুনরুদ্ধার দলের সাফল্য স্থানীয় সরকার এবং আন্তর্জাতিক সমাজের স্বীকৃত পেয়েছে। ওয়াং চিন বলেন, “১৯৯৮ সালে চীনের জাতীয় পুরাকীর্তি ব্যুরো আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের পুরাকীর্তি গবেষণালয়কে (বর্তমানে চীনা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গবেষণালয়) অ্যাংকর মনুমেন্টসের ছাউসে তেভোদা মন্দির রক্ষা ও পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব দেয় এবং চীন কম্বোডিয়ার অ্যাংকর মনুমেন্টসের রক্ষাকারী দল প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি হলো চীনের সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি রক্ষা দলের বিদেশে গিয়ে সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি রক্ষায় চীন সরকারের পক্ষ থেকে প্রথম বৈদেশিক সহায়তা প্রকল্প। প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে আট বছর লেগেছে। কর্মদল কম্বোডিয়া ও ইউনেস্কোর সংশ্লিষ্ট বিভাগের উচ্চ পর্যায়ে প্রশংসিত হয়েছে। চীনের প্রত্নতাত্ত্বিক দলের সদস্য স্যু ইয়েন অ্যাংকর মনুমেন্টস সংরক্ষণে অসামান্য অবদানের জন্য কম্বোডিয়া রাজ্যের নাইটস উপাধি পেয়েছেন। আরেকটি বিষয় হলো অ্যাংকরের প্রিয়েহ ভিহেয়র টেম্পল (Preah Vihear Temple) পুনরুদ্ধারের কাজও চীনা সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ পুনরুদ্ধার দলকে দিয়েছে কম্বোডিয়া। কম্বোডিয়ান পক্ষ রাজকীয় প্রাসাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ হেরিটেজ চীনা দলের কাছে পুনরুদ্ধারের জন্য হস্তান্তর করে আমাদের সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধার কাজের স্বীকৃতি দিয়েছে।”

 

৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ পুনরুদ্ধারে নিযুক্ত থাকা স্যু ইয়েন বলেন, তিনি এই কাজে কখনও বিরক্ত হন না। যতই দিন যায় ততই এটি আকর্ষণীয় ওয়ে ওঠে। ভূমিকম্পের পর ক্ষতিগ্রস্ত নয়তলা মন্দির পুনরুদ্ধারে নেপালকে সহায়তা করা হলো স্যু ইয়ানের সর্বশেষ বৈদেশিক সাহায্য প্রকল্প। প্রতিটি নতুন প্রকল্প একেকটি নতুন অভিজ্ঞতা। তিনি বলেন, “প্রত্নতত্ত্বের ধারণাটি দশম শতাব্দীতে উল্লেখ করা হয়। তাই এখন পর্যন্ত ,আমারা খুব সম্পূর্ণ ও উন্নত প্রত্নতাত্ত্বিক পদ্ধতির সেট তৈরি করেছি। আমি মনে করি, সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ রক্ষা এবং ভবন পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে আমাদের পদ্ধতি ও তত্ত্ব খুব ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। আমাদের জন্য, অন্য দেশকে সহায়তা করা শেখার ও গবেষণার সুযোগ। প্রকল্পগুলির মাধ্যমে আমাদের সঞ্চিত অভিজ্ঞতা এবং কাজের পদ্ধতিগুলি আরও যাচাই করা যায়; এতে আমাদের ভবিষ্যতের কাজ উন্নত করা সম্ভব।”

 

সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞান প্রয়োজন। যেমন, চীনা সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ পুনরুদ্ধার দলে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা, স্থাপত্য, ভূদৃশ্য, পাথর খোদাই কাজ এবং উদ্ভিদ রক্ষা পেশাদারী কাজের অন্তর্ভুক্ত। ওয়াং চিন বলেন, “প্রথমত একটি পেশাদার, শক্তিশালী প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা দল থাকবে যা অনেক বছর ধরে প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ পুনরুদ্ধার করবে। এমন একটি দল আমাদের প্রাসাদ পুনরুদ্ধার গবেষণাকে সমর্থন করতে পারে। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা দলের মধ্যে রয়েছে বহু বছরের কাজের অভিজ্ঞতা-সম্পন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষক। সেই সাথে অনেক গবেষক যারা দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় শিল্প ও আর্টস ইতিহাস গবেষণা, ধর্মীয় প্রত্নতত্ত্ব এবং স্থাপত্য প্রত্নতত্ত্বের বিশেষজ্ঞ। আরেকটি হলো- ভবন পুনরুদ্ধার দল। এটি স্থাপত্য, নগর পরিকল্পনা, ভূদৃশ্য ও অন্যান্য পেশাজীবীদের নিয়ে গঠিত। তা ছাড়া, আমাদের একটি পাথর খোদাইকারী দল এবং একটি উদ্ভিদ গবেষণা দল আছে।”

 

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি বড় দেশ হিসেবে, বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় চীনের অবদান শুধু একটি গণ-কল্যাণকর কাজই নয়, বরং মানুষের মধ্যে বন্ধনও জোরদার করে। চীনা সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ পুনরুদ্ধার দলের সঙ্গে কাজ-করা নেপালি স্থানীয় একজন কর্মী টারু বলেন, “দরবার স্কয়ার একটি বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক আসে। এটি নেপালের গর্ব। আমি এখন মন্দির পুনরুদ্ধারের কাজে নিয়োজিত এবং আমি খুব গর্বিত। আমি জানি যে, নেপাল সরকার একা নয়তলা মন্দিরের পুনর্নির্মাণ সম্পন্ন করতে পারবে না। তাই  পুনরুদ্ধার প্রকল্প একটু একটু করে সম্পন্ন হতে দেখে আমি খুব খুশি।”