ইয়ুননান প্রদেশের প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের চতুর্থটি হলো চেংচিয়াং জীবাশ্ম ভূমি। ইয়ুননান প্রদেশের চেংচিয়াংয়ের ফুসিয়ান নদীর উত্তর তীরে, ১৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি পাহাড় আছে, এটি খড়ের টুপি দেখতে মত ‘মাও (টুপি) থিয়েনসান নামকরণ করা হয়। আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সমাজে এটি ‘বিশ্বমানের জীবাশ্মের ধনভাণ্ডার’ হিসেবেও পরিচিত; যা চেংচিয়াং বায়োগ্রুপের প্রথম আবিষ্কারের মর্যাদা পেয়েছে। চেংচিয়াং জীবাশ্ম গ্রুপ হলো ক্যামব্রিয়ান লাইফ’স এক্সপ্লোশনের (Cambrian Life's Explosion) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ এবং পৃথিবীতে প্রাথমিক জীবন বিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এটি বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বিস্ময়কর বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার। এটি চীনের প্রথম ও এশিয়ার একমাত্র প্রাচীন জীবজন্তুর জীবাশ্ম ঐতিহ্য।
১৯৮৪ সালের পয়লা জুলাই, চীনের বিজ্ঞান একাডেমির একজন নানচিং ইনস্টিনিউট অব জিওলজি অ্যান্ড প্যালিওন্টোলজির হৌ সিয়েন কুয়াং মাও থিয়েনসান পর্বতের পশ্চিম ঢালে একটি দীর্ঘ লেজের পতঙ্গ খুঁজে পান। তার আবিষ্কার ক্যামব্রেইন (Cambrian) যুগে প্রাথমিক জীবন গবেষণার দরজা খুলে দিয়েছে।
পৃথিবীর দীর্ঘ ইতিহাসে ৫৪২ মিলিয়ন থেকে ৪৮৮ মিলিয়ন বছর আগের সময়কে ক্যামব্রিয়ান (Cambrian) সময় বলা হয়। ক্যামব্রিয়ান ছিল পৃথিবীর প্রাণের বিবর্তনের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়। ক্যামব্রিয়ান সময়ে পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রাণীর আকস্মিক উত্থানকে ‘ক্যামব্রিয়ান লাইফ’স এক্সপ্লোশন’ (Cambrian Life's Explosion) বলা হয়, যা পৃথিবীতে প্রাণী বিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। চেংচিয়াং জীবাশ্ম গ্রুপ ভূমিতে এখন পর্যন্ত পাওয়া ক্যামব্রিয়ান বিরল প্রাণী ও উদ্ভিদের মধ্যে জীবাশ্ম ২০টি বিভাগ, ২৮০টিরও বেশি প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই নতুন প্রজাতি। প্রায় সব জীবন্ত প্রাণীর প্রজাতির পূর্বপুরুষ এখানে রয়েছে। ২০১২ সালের পয়লা জুলাই, ‘চেংচিয়াং জীবাশ্ম ভূমি ঐতিহ্যের’ সফল আবেদন করা হয় এবং চীনের প্রথম, এশিয়ার একমাত্র এবং বিশ্বের মাত্র তিনটি জীবাশ্ম বিভাগের প্রাকৃতিক হেরিটেজ তালিকাভুক্ত হয়েছে। এদিন ‘ইয়ুননান চেংচিয়াং জীবাশ্ম ভূমি বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা বিধি’ কার্যকর করা হয়।
২০২০ সালের অগাস্ট মাসে চেংচিয়াং জীবাশ্ম ভূমি প্রাকৃতিক যাদুঘর চালু হয়। এটি ছয় বছর ধরে তৈরি হয়েছে। যাদুঘরে সারা বিশ্ব থেকে ৬০ হাজারেরও বেশি বিরল প্রাচীন জীবজন্তুর জীবাশ্ম এবং বর্তমান জীবন্ত প্রাণীর জীবাশ্ম নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ভিআর, বুদ্ধিমান সোমাটোসেন্সরি মিথস্ক্রিয়া এবং ফোর-ডি সিনেমাসহ বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্যামব্রিয়ান লাইফ’স এক্সপ্লোশনের (Cambrian Life's Explosion) দৃশ্য এবং পৃথিবীতে জীবন বিবর্তনের প্রক্রিয়া প্রদর্শন করা হয়েছে। যাদুঘর খোলার পর থেকে জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত ছয় লাখেরও বেশি পর্যটক যাদুঘর ভ্রমণ করেছেন।
পঞ্চম ইয়ুননান বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্য হলো হংহ্য হানি টেরেস (Honghe Hani Terries)। হংহ্য হানি টেরেস ইয়ুননান প্রদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত। যা হংহ্য হানি জাতি ও ই জাতি স্বায়ত্তশাসিত প্রিফেকচারের ইউয়ান ইয়াং, হংহ্য, চিনফিং ও ল্যুছুন চারটি কাউন্টিতে অবস্থিত। এর আয়তন এক মিলিয়ন মু ছাড়িয়ে গেছে। এতে প্রচুর পরিমাণে জল ধারণ করা হয়। আর্দ্র বায়ু ও বাষ্পীয় কুয়াশা দেখা যায়। যা টেরেসকে প্রাণবন্ত ও সুন্দরভাবে সাজিয়ে একটি সুন্দর প্রাকৃতিক ছবি তৈরি করেছে।
২০১৩ সালে হংহ্য হানি টেরেস বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটি চীনের ৫৪তম বিশ্ব ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে এবং চীনের বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের সংখ্যা স্পেনকে ছাড়িয়ে ইতালির পরে দ্বিতীয় স্থানে উন্নীত হয়েছে। বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর হংহ্য হানি টেরেস আরো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যা স্থানীয় অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও পর্যটন উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়েছে। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে স্থানীয় গ্রামবাসীরা এ বিষয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন।
একজন গ্রামবাসী এ কথা বলেন, “আমাদের পূর্বপুরুষ আমাদের টেরেস দিয়েছেন, তা আমারা ধ্বংস করতে পারি না। আমাদের অবশ্যই টেরেসগুলোতে চাষাবাদ চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু এখন তরুণরা আয় বাড়ানোর জন্য জন্মস্থান ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে তারা চাষাবাদ বন্ধ করে দিচ্ছে।”
কৃষিকাজের লোকজন চলে যাওয়ার সমস্যা মোকাবিলায়, ইউয়ান ইয়াং জেলা হংহ্য হানি টেরেসে বেশ কিছু নীতি গ্রহণ করা হয়। যা জেলার গ্রামবাসীদের আয় বৃদ্ধি করেছে। এটি অনেক গ্রামবাসীকে জন্মস্থানে আকর্ষণ করছে।
হংহ্য হানি টেরেস পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। যা হানি জাতির গ্রামবাসীদের হৃদয়ের ‘আত্মা’। বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম স্থান হানি টেরেস কার্যকরভাবে রক্ষা করা এবং ব্যবহার করার জন্য, স্থানীয় সরকার ও জনগণ অনেক চেষ্টা করেছে। হংহ্য হানি টেরেসের হাজার বছরের ইতিহাস আছে। এটি বিশ্বাস করা হয় যে বিশ্ব হেরিটেজ রক্ষার কাজ পরবর্তী হাজার বছর আরও সুন্দর হবে।