ভুলের ভূবনে বাস: বিষণ্ণতা সম্পর্কে এগুলো সবই ভুল ধারণা
2021-04-16 18:26:36

ভুলের ভূবনে বাস: বিষণ্ণতা সম্পর্কে এগুলো সবই ভুল ধারণা_fororder_shengwu

ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা একটি মানসিক রোগ। আধুনিক জীবনযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)’র হিসাব মতে, সারা বিশ্বে ২৬ কোটি ৪০ লাখ বিষণ্ণতায় ভুগছে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগ নারী। সংস্থার ধারণা, বিশ্বে প্রতিবন্ধিতার ও নানা রোগব্যাধির অন্যতম কারণ বিষণ্ণতা এবং ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বে আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে বড় সংকটের তৈরি করতে যাচ্ছে এই রোগ। বাংলাদেশের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে ঢাকায় পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, শিশু কিশোরদের ১৮ শতাংশের বেশি বিষণ্ণতায় আক্রান্ত। গবেষক ও চিকিত্সকরা মনে করেন, সাধারণভাবে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন তার জীবদ্দশায় কখনও না কখনও বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয় বা হতে পারে। বিষণ্ণতা অনেক সময় আত্মহত্যার দিকে ঢেলে দেয় মানুষকে। তবে এই রোগটি নিয়ে নানা রকমের ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে সমাজের বহু মানুষের মধ্যে।

জানিয়ে দিচ্ছি এমন ভুল ধারণাগুলো সম্পর্কে:

মন খারাপের গল্প: যেহেতু এই রোগের লক্ষণ সবসময় প্রকটভাবে চোখে পড়ে না, তাই এটি বুঝে ওঠা অনেক সময় কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। সেকারণে বিষণ্ণতায় একজন একজন মানুষ যখন তার অবসাদগ্রস্ততার কথা বলে, তখন অনেকেই মনে করে বানিয়ে বানিয়ে মন খারাপের গল্প বলছে। এমন ধারণা একেবারে ঠিক না। কেউ বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়েছে এটা জানা গেলে বরং তাকে মানসিক রোগের কাছে নেওয়া উচিৎ।

ভালোবাসায় বিষণ্ণতা সারে: এটা অনেকেরই ধারণা যে, পরিবার ও কাছের মানুষদের ভালোবাসা, সহায়তা ও যত্ন পেলে বিষণ্ণতা দেখা দেয় না, বা দেখা দিলেও সেরে যায়। এমন ধারণার কোনও ভিত্তি নেই। অবসাদগ্রস্ততার সঙ্গে ভালোবাসা বা যত্নের বিশেষ কোনও সম্পর্ক নেই। তবে একথা ঠিক ভালোবাসা ও যত্ন পেলে এই রোগে মোকাবিলা করা সহজ হয়ে ওঠে।

চারিত্রিক মানসিক দুর্বলতার জন্য হয়: অনেকে মনে করেন, বিষণ্ণতার মূল কারণ চারিত্রিক ও মানসিক দুর্বলতা। তারা বিশ্বাস করেন, কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করার মতো মানসিক ও চারিত্রিক দৃঢ়তা যাদের নেই, তারাই মূলত বিষণ্ণতার শিকার হয়। এই মনোভাবেরও কোনও ভিত্তি নেই। আসলে বিষণ্ণতারর সঙ্গে কারও মানসিক বা চারিত্রিক দৃঢ়তার সামান্যতম সম্পর্কই নেই।

কোনও দুর্ঘটনা দায়ী: বিষণ্ণতার ব্যাপারে এটাও একটি সাধারণ ভুল ধারণা যে, কোনও দুর্ঘটনা বা অপ্রিয় ঘটনার জন্যে কেউ মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এটা কোনও কোনও ক্ষেত্রে সঠিক হলেও, সবক্ষেত্রে নয়। বিষণ্ণতার কারণগুলোর মধ্যে প্রধান হলো জীনগত ত্রুটি ও মস্তিষ্কে রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতা। এছাড়া জৈবিক বা অন্তর্গত নানা কারণে যে কেউ বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হতে পারে।

বিষণ্ণতা সারে না: কেউ কেউ মনে করেন, কেউ একবার বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হলে সে আর সুস্থ হয় না এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে না। এটি একটি ভুল ধারণা। সঠিক চিকিৎসা করালে বিষণ্ণতা থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব। বিষণ্ণতায় যে আক্রান্ত হয়েছে চিকিত্সার পাশাপাশি তার প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ শারীরিক পরিশ্রম। একজন আক্রান্ত মানুষ শারীরিকভাবে যত সক্রিয় থাকবে, এ সমস্যা মোকাবিলা তার জন্য তত সহজ হবে।

(রহমান / আনন্দী)