অ্যানিমেশনের মাধ্যমে চীনা গল্প তুলে ধরা তরুণ-তরুণী
2021-04-15 15:58:38

অ্যানিমেশনের মাধ্যমে চীনা গল্প তুলে ধরা তরুণ-তরুণী_fororder_zhuiguang

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের সমাজ ও অথনীতির উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক প্রভাব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চীনা সংস্কৃতির প্রভাবও অব্যাহতভাবে বাড়ছে। চীনা গল্প, চীনবিষয়ক বিভিন্ন বস্তু ও চীনা উপাদান অধিক থেকে অধিকতর চলচ্চিত্র ব্যক্তিদের রচনার অনুপ্রেরণার উত্স হয়ে ওঠে। চলচ্চিত্রের ব্যাপক ধরণের মধ্যে অ্যানিমেশন নিঃসন্দেহে আরো প্রচলিত ও গ্রহণযোগ্য। যা আরো ভালোভাবে সংস্কৃতির পার্থক্য অতিক্রম করতে এবং বিভিন্ন দেশ ও জাতির মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় বাস্তবায়ন করতে পারে।

চলতি বছর বসন্ত উত্সবের ছুটির সময় প্রদর্শিত ৭টি চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘New Gods: Nezha Reborn’ নামে অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রটি চীনের পুরাণ অনুযায়ী বিশেষ ভিজুয়াল স্টাইল দিয়ে চলচ্চিত্র মহল এবং দর্শকদের স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রাচীন পুরাণ এবং আধুনিক নান্দনিকতা এ চলচ্চিত্রে সমন্বয় করা হয়। এই সাহসী ও কল্পনায় ভরপুর সৃজনশীলতা বেইজিংয়ের একদল জাতীয় অ্যানিমেশন প্রেমী থেকে আসে। ‘New Gods: Nezha Reborn’ নামে অ্যানিমেশন হলো ‘New Gods’ নামে তাদের সিরিজ অ্যানিমেশনের প্রথম পর্ব। ‘New Gods’ হবে চীনা পৌরাণিক নায়ক গল্প অবলম্বনে নির্মিত পুরো বিশ্বদর্শনসম্পন্ন আধুনিক সংস্করণ।

তারা চীনের জাতীয় সংস্কৃতির ভিত্তিতে ঐহিত্যবাহী এবং আধুনিক উপাদানে মিল খুঁজে পেয়ে আধুনিক পদ্ধতি ও তরুণের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে চীনা গল্প প্রকাশ করেন। বিশ্বের কাছে চীনা গল্প ও চীনা সংস্কৃতির কাছাকাছি চলে যাওয়ার নিরলস প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তারা।

ব্রিটেনের বিখ্যাত পরিচালক ম্যালকোম ক্লার্ক চীন ও পশ্চিমা জগতের মধ্যে সেতু তৈরি করতে চান

অ্যানিমেশনের মাধ্যমে চীনা গল্প তুলে ধরা তরুণ-তরুণী_fororder_jilup1

‘চীনের পুনরুত্থান হলো ২১ শতকের বৃহত্তম সংবাদ’। ৮ এপ্রিল সিনহুয়া বার্তা সংস্থার কাছে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে অস্কার বিজয়ী ব্রিটিশ তথ্যচিত্র পরিচালক ম্যালকোম ক্লার্ক একথা বলেছেন। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পশ্চিমা জগতের সঙ্গে চীনের বন্ধুত্বের সেতু স্থাপন করতে চান তিনি।

৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি তথ্যচিত্র ও নাটকের সৃষ্টি কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি পা রাখেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন তার সৃষ্টির গুরুত্বপূর্ণ প্রতিপাদ্য।

৮ এপ্রিল তার তৈরি ছোট একটি ভিডিও শাংহাইয়ে প্রকাশিত হয়। ভিডিওতে তিনি সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পর চীনের বিশাল পরিবর্তনগুলো তুলে ধরেছেন।

গত শতাব্দীর ৮০’র দশকে ম্যালকোম ক্লার্ক শুটিং কাজের কারণে চীনে আসেন। ৯ মাসের মধ্যে তিনি বিভিন্ন শহরে ঘুরে বেড়ান। ‘সেই সময় চীন দরিদ্র এবং চীনা জনগণ কঠিন জীবন কাটালেন।’ তিনি এভাবে স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতি চালু হওয়ার শুরুতে চীন তেমন উন্নত ছিলো না।’

 

২০১৩ সালে ‘Better Angels’ নামে এক তথ্যচিত্রটি নির্মাণের জন্য তিনি আবার চীনে ফিরে আসেন। তারপর তিনি আবিষ্কার করেন যে, চীনে বিশাল পরিবর্তন ঘটেছে এবং তিনি অনেক কিছুই চিনতে পারছেন না। আকাশচুম্বী ভবন, প্রাণবন্ত শহর, চীনের সবকিছু আমার মনে গভীর দাগ কাটে। তিনি বলেন, এত স্বল্প সময়ের মধ্যে এত বিশাল সাফল্য অর্জন করা যায়, চীন ছাড়া, এই বিশ্বে আর কোনো দেশ খুঁজে পাওয়া যায় না।’

সেই সময় থেকে চীন তার রচনা ও জীবনের কেন্দ্রীয় বিষয়ে পরিণত হয়। তিনি চীনে দারিদ্র্যমুক্তিসহ ধারাবাহিক সাফল্যও খুব কাছে থেকে দেখেছেন। তিনি বলেন- চীনে আপনি বিশ্বের ভবিষ্যত দেখতে পারবেন।

শাংহাইয়ে তার এই ভিডিও প্রকাশের দিনটি ছিলো উহান শহর থেকে লকডাউন ব্যবস্থা প্রত্যাহারের প্রথম বার্ষিকী। উহানে মহামারী প্রতিরোধের প্রত্যক্ষদর্শী ও অংশগ্রহণকারী হিসেবে তিনি এবং তার গ্রুপ উহানে গিয়ে ৫৫ দিন দিয়ে স্বাস্থ্যকর্মী ও সেচ্ছাসেবকসহ সাধারণ চীনা জনগণের মহামারী প্রতিরোধের গল্প রেকর্ড করেন।

 

তথ্যচিত্র নির্মাণের সময় তিনি দেখতে পান যে, হাজার হাজার স্বাস্থ্যকর্মী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে উহান শহরে ছুটে আসছেন, নির্মাণ শ্রমিকরা পরিশ্রমী হাত দিয়ে ‘চীনের গতি’ প্রমাণ করছেন। মহামারী প্রতিরোধের ব্যবস্থার দ্রুত প্রতিক্রিয়া বা দক্ষ ও শক্তিশালী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা; যাই হোক না কেন, মহামারীর সময় চীনের নানা দিক দেখে তিনি ও তার সহকর্মীরা উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠেন। তারা ক্যামেরার মাধ্যমে এসব অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা রেকর্ড করতে চান। তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু অসত্ তথ্য ও ভ্রান্ত সংবাদের কারণে এখনও কিছু লোক মনে করেন, চীন মহামারীর জন্য দায়ী।’ তিনি বলেন,


উহানে মহামারী প্রতিরোধের তথ্যচিত্রটির সম্পাদনা কাজ এখনও চলছে। তথ্যচিত্রটি মুক্তির পর চীন নিয়ে অনেক ভুল ধারণা দূর হবে বলে আশা করেন তিনি। তার তথ্যচিত্রের মাধ্যমে আরো বেশি মানুষ মহামারী প্রতিরোধে চীনের অবদান বুঝতে পারবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

 

তিনি বলেন, এখন তার পরিচালিত আরেকটি নাটকের নির্মাণকাজ চলছে। এ নাটকের মোট ৬টি পর্ব আছে। এতে একজন ব্রিটিশ অধ্যাপকের চীনের জীবন তুলে ধরা হয়। তিনি বলেন, আমি চীনে আরো বেশি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাই। একজন ব্রিটিশ পরিচালক হিসেবে ক্লার্কের একটি চীনা স্বপ্ন আছে। তা হলো- চীনে ঘটে যাওয়া সত্যিকারের ঘটনাগুলো সঠিকভাবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরা।

 

তিনি মনে করেন, বাস্তব দৃশ্যের শক্তি হাজারবার বলা কথার চেয়েও শক্তিশালী। চীন সম্পর্কে বিশ্ব কম জানে। একজন পশ্চিমা পরিচালক হিসেবে একদিকে তিনি নিজের ক্যামেরায় চীনা জনগণের সুখ, রাগ, বেদনা ও আনন্দ তুলে ধরতে চান, অন্যদিকে তার প্রচেষ্টায় বিশ্ব আরো ভালোবাবে চীনকে জানতে পারবে।

 

 (লিলি/তৌহিদ/শুয়েই)