চীনের দারিদ্র্যবিমোচনের অভিজ্ঞতা শিক্ষণীয়: বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ
2021-03-01 14:48:04

মার্চ ১: আন্তর্জাতিক সমাজ দারিদ্র্যবিমোচন খাতে চীনের অর্জিত বিরাট সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করে। বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদ সম্প্রতি চায়না মিডিয়া গ্রুপের সাংবাদিককে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাত্কারে বলেন, চীনের দারিদ্র্যবিমোচনের সফল অভিজ্ঞতা বিশ্বের জন্য দৃষ্টান্ত  স্থাপন করেছে। এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্য শিক্ষণীয়। এখন শুনুন এ সম্পর্কিত একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন।

চীনের দারিদ্র্যবিমোচনের অভিজ্ঞতা শিক্ষণীয়: বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ_fororder_shishi2

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আইনুল ইসলাম

 

বাংলাদেশের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আইনুল ইসলাম মনে করেন, চীনের প্রয়োগ করা ‘সুনির্দিষ্ট দারিদ্র্যবিমোচন নীতি’ সত্যিকার অর্থেই দারিদ্র্যবিমোচনের লক্ষ্য পূরণ করেছে। শহর ও গ্রামের সংযোগ এবং সহযোগিতা-ভিত্তিক অর্থনৈতিক তত্পরতা গ্রাম ও দূরবর্তী এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তা কার্যকরভাবে আঞ্চলিক অর্থনীতিকে প্রাণচঞ্চল করেছে। দারিদ্র্যবিমোচনে অন্য জায়গায় স্থানান্তরের পদ্ধতির কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। যারা দূরবর্তী জায়গায় থাকে, সেখানকার চরম দরিদ্র মানুষরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছে। চীন সত্যি বিশ্বের কাছে ভালো দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে। তিনি বলেন,

করোনাভাইরাসের মহামারি শুরু হলে বিশ্ব অর্থনীতি হ্রাস পাচ্ছে। অনেক দেশের দারিদ্র্যবিমোচনের কাজ নিশ্চল হয়ে পড়েছে। এমন সময় চীনে প্রায় ১০ কোটি মানুষ দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে। চীনের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি, পরিচালনার ব্যবস্থা এবং ত্যাগের চেতনা ছাড়া মহান এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতো না।

চীনের দারিদ্র্যবিমোচনের অভিজ্ঞতা শিক্ষণীয়: বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ_fororder_shishi1

 ড. সায়মা হক বিদিশা

 

বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর ড. সায়মা হক বিদিশা মনে করেন, চীন দারিদ্র্যবিমোচনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে। এর পিছনে শিল্পায়ন জোরদার করা, পেশাদার শিক্ষা জনপ্রিয় করা, সামাজিক নিশ্চয়তা ব্যবস্থা সুসংহত করা এবং শহরায়ন দ্রুততর করা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

তিনি বলেন,

আমার মনে হয়, প্রথমত- শিল্পায়ন। শিল্পায়নের জোরদার করার ফলে একদিকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে জনসাধারণের আয় বেড়েছে। দ্বিতীয়ত- শিক্ষা। বিশেষ করে পেশাদারি প্রযুক্তিগত শিক্ষার জনপ্রিয়তা। যা চীনের কর্মসংস্থানের সমস্যা সমাধানে খুব সহায়ক। তৃতীয়ত- সুসংহত সামাজিক নিশ্চয়তা ব্যবস্থা। সামাজিক নিশ্চয়তা ব্যবস্থার বিনির্মাণে চীন অনেক বরাদ্দ দিয়েছে। এর ফলে নিম্ন আয় ও দরিদ্র মানুষের মৌলিক আয় নিশ্চিত হয়েছে। চতুর্থত- শহরায়ন। চীনে নতুন শহর নির্মাণ এবং গ্রামীণ মানুষের আয়ের পার্থক্য কমিয়ে আনা হয়েছে।

ড. ইসলামের কাছে চীনের দারিদ্র্যবিমোচন সফল হওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল অর্থের উপযুক্ত ব্যবহার। তিনি বলেন,

সরকারের দারিদ্র্যবিমোচনের অর্থ জনগণের জন্য সঠিকভাবে ব্যয় করা হয়েছে। রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার কারণে চীন এ সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে।

ড. ইসলাম আরো উল্লেখ করেন, চীন নির্ধারিত সময়ের দশ বছর আগেই জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করেছে। বাংলাদেশ চীনের সফল অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পারে।

তিনি বলেন,

করোনাভাইরাসের মহামারি শুরু হলে বাংলাদেশের দরিদ্রতার হার কিছুটা বেড়েছে। এখন আমরা চীনের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পারে। চীনের মতো গ্রামীণ, দূরবর্তী ও সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় দারিদ্র্যবিমোচনের কাজ শুরু করা যেতে পারে। তৃণমূল পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দারিদ্র্যবিমোচনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে এবং দরিদ্রতার সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে। যদি বাংলাদেশ চীনের সফল অভিজ্ঞতা থেকে শিখে, তাহলে আমাদের অষ্টম পাঁচসালা পরিকল্পনার দারিদ্র্যবিমোচনের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা যাবে।

চীনের দারিদ্র্যবিমোচনের অভিজ্ঞতা শিক্ষণীয়: বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ_fororder_shishi3

এ ছাড়া বাংলাদেশের ‘প্রথম আলো’, ‘বাংলাদেশ পোস্ট’ ‘নয়া দিগন্ত’সহ বেশ কিছু গণমাধ্যম চীনের দারিদ্র্যবিমোচনের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের খবর প্রচার করেছে। তারা মনে করে, চীনের দারিদ্র্যবিমোচনে সার্বিক বিজয় বিস্ময়কর একটি ঘটনা।

(শুয়েই/তৌহিদ/জিনিয়া)