সংবাদ পর্যালোচনা: চীন থেকে চরম দারিদ্র্য বিলুপ্ত
2021-02-26 20:07:10

চীনের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিসি প্রতিষ্ঠার শততম বার্ষিকীতে চীনের দারিদ্র্যবিমোচন কাজের লক্ষ্যনীয় অর্জনকে সামনে রেখে গত বৃহস্পতিবার দারিদ্র্যবিমোচন-বিষয়ক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গোটা চীনকে ‘চরম দারিদ্র্য থেকে মুক্ত’ বলে ঘোষণা করেন। চীনের এই ব্যাপক আকারে দারিদ্রমুক্তির কারণে বিশ্বব্যাপী দরিদ্র জনসংখ্যার ৭০ শতাংশেরও বেশি মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত হলো। জাতিসংঘের এজেন্ডা-২০৩০-এ উল্লেখিত নির্ধারিত সময়ের ১০ বছর আগে চীনে দারিদ্র্যমুক্তির লক্ষ্য বাস্তবায়িত হয়েছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত থাকছে আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

 

চার দশক আগে চীনে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ কার্যক্রম শুরু হলে দেশের গ্রামীণ অঞ্চলের ৭৭ কোটি দরিদ্র মানুষ চরম দরিদ্রতা থেকে বেরিয়ে আসে। যা বিশ্বব্যাপী দরিদ্র জনসংখ্যার ৭০ শতাংশের বেশি। চীনের দারিদ্র্যমুক্তি বিশ্বের দারিদ্র্যমুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে। এর পাশাপাশি দরিদ্রতা কাটিয়ে উঠতে চীন উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। দারিদ্র্যবিমোচনে চীনের অর্জন মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠনের পথ প্রশস্ত করেছে।

 

এদিনের অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট তাঁর ভাষণে বলেন, দরিদ্রতা সমাজতন্ত্র নয়। যদি কোনো অঞ্চলে দীর্ঘকাল ধরে দরিদ্রতা থাকে, দরিদ্রতার ভাবমূর্তি পরিবর্তন না হয়, জনগণের জীবনমান উন্নত না-হয়, তাহলে চীনের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সুবিধা বোঝা যাবে না।

তিনি বলেছেন, গ্রামের পুনরুদ্ধার হল চীনা জাতির মহান পুনরুদ্ধার বাস্তবায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। দারিদ্র্যমুক্তকরণের সুফল বাস্তবায়ন করা এবং গ্রাম পুনরুদ্ধার ভালোভাবে করতে হবে, যাতে দারিদ্র্যমুক্তকরণের ভিত্তি আরো দৃঢ় হয়, সুফল দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই হয়।

তিনি শহরাঞ্চল ও গ্রামীণ উন্নয়নের পার্থক্য কমিয়ে আনার দিকে গুরুত্ব দেন। তিনি দাবি করেন, চীনের দারিদ্র্যমুক্তির সার্বিক বিজয় অর্জনের বাস্তবতা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে,  চীনের কমিউনিস্ট পার্টি হলো চীনা জনগণের সঠিক ও নির্ভরযোগ্য নেতৃত্ব।

 

সংক্ষিপ্ত এক পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে আমরা দেখি, গত আট বছরে চীনের ৮৩২টি দরিদ্র জেলা এবং এক লাখ ২৮ হাজার দরিদ্র গ্রাম দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। বর্তমান মানদণ্ড অনুযায়ী প্রায় ১০ কোটি গ্রামীণ দরিদ্র লোক সম্পূর্ণ দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছেন।

 

দারিদ্র্যমুক্ত মানুষদের খাবার ও পানীয় জলের সমস্যা সমাধান হয়েছে, সার্বিক বাধ্যতামূলক শিক্ষা বাস্তবায়িত হয়েছে, মৌলিক চিকিত্সা, বাসস্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। মাথাপিছু নিট আয় ২০১৫ সালের ২৯৮২ ইউয়ান থেকে বেড়ে ২০২০ সালে ১০ হাজার ৭৪০ ইউয়ানে উন্নীত হয়েছে। বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ২৯.২ শতাংশ। আত্মনির্ভরশীল দারিদ্র্যমুক্তির দক্ষতা স্থিতিশীলভাবে বাড়ছে।

 

সিপিসি’র অষ্টাদশ কংগ্রেসের পর থেকে গড়ে প্রতি বছর এক কোটিরও বেশি মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। এ সময় ৭৯ লাখ পরিবারের দুই কোটি ৫৬ লাখ ৮ হাজার দরিদ্র লোকের নাজুক বাড়িঘর মেরামত করা হয়েছে। ১১ লাখ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের গ্রামীণ সড়ক নতুন করে তৈরি বা পুনর্নির্মিত হয়েছে। ২৫ লাখ কিলোমিটার রেলপথ নতুন করে তৈরি হয়েছে। দরিদ্র অঞ্চলে বিদ্যুত্ সরবরাহের নির্ভরযোগ্যতার হার ৯৯ শতাংশ উন্নীত হয়েছে। দরিদ্র গ্রামে অপটিক্যাল ফাইবার এবং ফোরজি ইন্টারনেট সরবরাহের অনুপাত ৯৮ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

 

দারিদ্র্যবিমোচনের এ সময় চীনের শীর্ষনেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। বিগত আট বছরে প্রেসিডেন্ট সি ৫০ বার দারিদ্র্যবিমোচন ইস্যুতে বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেছেন। তিনি ১৪টি অতি দরিদ্র অঞ্চলে গিয়েছেন। চীনের মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলের ২২টি প্রদেশের পার্টি ও সরকারের প্রধান দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে দারিদ্র্যবিমোচন-সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করে। দারিদ্র্যবিমোচনে জনগণকে সহায়তা দিতে ৩০ লাখেরও বেশি কর্মকর্তাকে বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শেষ আট বছরে প্রায় ১৮০০ জনেরও বেশি মানুষ দারিদ্র্যবিমোচনের কাজে প্রাণ হারিয়েছেন।

আসলে, দারিদ্র্যমুক্তি মূল লক্ষ্য নয়। বরং, নতুন জীবন ও নতুন পরিশ্রমের সূচনা মাত্র। দেশের চতুর্দশ পাঁচশালা পরিকল্পনার আলোকে চীন টেকসই উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গঠন করবে এবং গ্রামের সঞ্জীবনীশক্তি পুনরুদ্ধার কৌশলের মাধ্যমে দারিদ্র্যমুক্তির প্রকৃত সাফল্য অর্জনের জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।