রোববারের আলাপন:শীতকালীন সাঁতার চীনা নববর্ষকে স্বাগত জানানোর এক অনন্য রীতি
2021-02-26 16:56:10

 

আকাশ: বন্ধুরা, মানুষ বিভিন্ন পদ্ধতিতে বসন্ত উতসব উদযাপন করে বা নববর্ষকে স্বাগত জানায়। কেউ সুস্বাধু খাবার খান, কেউ আইনলাইনে অনেক কেনাকাটা করেন, কেউ বাসায় বসে চলচ্চিত্র দেখেন। 
এনাম ভাই, নববর্ষকে স্বাগত জানাতে আপনি সাধারণত কী কী করে থাকেন?
এনাম:.... ভাই ,আপনি সাধারণত কী কী করেন নববর্ষে?
আকাশ: আমি সাধারণত পাহাড়ে উঠানামা করি।মানে শরীরচর্চা করি। বন্ধুরা, চীনে আসলে অনেকে আমার মত শরীরচর্চা করার মাধ্যমে নববর্ষকে স্বাগত জানায়। আমরা আজকে তাদের একটি গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করব, কেমন?
এনাম ভাই, আপনি ‘শীতে বাইরে সাঁতার কাটা’ সম্পর্কে কিছু শুনেছেন?
এনাম: মানে গরম পানিতে?
আকাশ: না, অবশ্যই না ভাই, চীনে অনেকে শীতকালে বাইরে অত্যন্ত ঠাণ্ডা তাপমাত্রায় সাগর, লেক , নদী বা সুইমিং পুলে বরফ ভেঙ্গে সাঁতার কাটেন। এ খেলার নাম হচ্ছে ‘শীতে বাইরে সাঁতার কাটা’। 
 
এনাম: ওরে বাবা ! ভাই, এটা কীভাবে সম্ভব!!
আকাশ: এবং তাঁরা অনেক বয়স্ক! তাঁদের অনেকে ষাটোর্ধ। এ খেলা আসলে শরীরের জন্য অনেক ভাল। 
 
এনাম: বয়স ৬০ বছরের উপরে!? ওরে বাবা!!
আকাশ: আমি তাঁদের অনেক প্রশংসা ও সম্মান করি। এ খেলা সত্যি সাহসী মানুষের জন্য। তাঁদের চেতনা আমাদেরকে অনেক অনুপ্রাণিত করে থাকে। 
 
বন্ধুরা, আজকে আমরা এ সাহসী মানুষের খেলার গল্প শুনব, কেমন?
 
সকাল ৬টায় তাপমাত্রা যখন ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তখন শাংহাই শহরের চিয়া তিং জেলার শরীরচর্চা কেন্দ্রের সুইমিং পুলে লোকজন আসতে শুরু করেন। প্রায় ৯০জন শীতকালের সাতারু তাঁদের  গায়ের গরম কাপড় খুলে সাতারের জামা পরেন। সামান্য ব্যায়ামের পর তাঁরা  সাঁতার শুরু করেন।
 
ইতোমধ্যে কেউ ৫০ মিটার শেষ করেছেন, কেউ আবার ২০০মিটার শেষ করেছেন। কয়েক মিনিট পর সবাই পৃথকভাবে তীরে উঠে গায়ের পানি মুছে পোষাক পরেন। তারপর তাঁরা আবার কিছুক্ষণ ব্যায়াম করেন। পরে তাঁরা গরম গরম আদার চা পান করেন। সবার গাল লাল দেখাচ্ছে। 

প্রিয় বন্ধুরা, তাঁরা সবাই শীতকালের সাঁতার প্রেমী। সাঁতার কাটার মাধ্যমে নববর্ষ তথা ষাঁড় বর্ষকে স্বাগত জানান তাঁরা। 

 
চিয়াং তিং শীতকালীন সাঁতার ক্লাবটি ১৯৭৯সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি শাংহাইয়ের সবচেয়ে প্রাচীন শীতকালীন সাতারু দল। এর সদস্য সংখ্যা ৩৯০জনেরও বেশি। এ সাতারু দল নেতা হৌ ওয়ে সিং জানান, “আমি ২০০৫ সাল থেকে শীতকালীন সাঁতার শুরু করেছি। ক্লাবের অনেকে ইতোমধ্যে অনেক বছর ধরে শীতকালীন সাতারের চর্চা ধরে রেখেছেন।”
 
মাদাম চাং কুই ইংয়ের বয়স ৮২ । তিনি হচ্ছেন ক্লাবটির সবচেয়ে প্রবীণ সদস্য। ক্লাব প্রতিষ্ঠার একেবারে শুরুতে তিনি এতে অংশ নিয়েছেন। তিনি হলেন চীনা বিজ্ঞান একাডেমির একজন প্রকৌশলী। তিনি শীতকালীন সাঁতার ম্যাগাজিনে মাঝে মাঝে প্রবন্ধ প্রকাশ করে থাকেন। সম্প্রতি ক্লাব তাঁকে একটি “শীতকালীন সাতারে ৪০ বছর” স্মারক কাপ দিয়েছে। তিনি জানান, যদি শরীরে কুলায়, তাহলে তিনি শীতকালীন সাঁতারের অভ্যাস বজায় রাখতে চান। 
 
আসলে শীতকালীন সাঁতারে শুধু বয়স্করা অংশ নেন, কেবল তা নয়। গত বছর থেকে ক্লাবে অনেক তরুণ-তরুণীও অংশ নিয়েছেন। এ বছরে  তাঁরা যে যেখানে বসবাস বা চাকরি করেন, সেখানেই বসন্ত উতসব উদযাপন করেছেন। প্রতিদিন একবার তাঁরা শীতকালীন সাঁতার কাটেন। এর মাধ্যমে তাঁরা এবারের বসন্ত উতসবে এক বিশেষ অর্থ ও তাতপর্য এনে দিয়েছেন। 
 
যারা এ খেলা বেশি জানেন, তাদের মতে এটি খেলতে কেবল সাহস থাকলেই চলবে না। বরং এতে অনেক সুক্ষ কৌশল প্রয়োগ করতে হয়। নতুন সদস্যদের ক্লাবের পুরনো সদস্যরা মাঝেমাঝে দিকনির্দেশনা দেন। তাদেরকে কৌশল শেখান। 
 
ক্লাবের প্রধান হৌ ওয়েই সিং বলেন, “শীতকালীন সাতারে বৈজ্ঞানিক কৌশল অনুসরণ করতে হয়। পোষাক খুলার পর, সরাসরি বাইরে যাওয়া যাবে না। শীরের তাপমাত্রা ক্রমশ কমানো উচিত। কিছু কিছু উষ্ণ ব্যায়াম করতে হবে। তারপর সাতারে নামতে হয়। সাতারের সময়ও বেশি হবে না। সাঁতার শেষে দ্রুত শরীর শুকাতে হবে। তারপর আদার স্যুপ পান করতে হয়। তার পরেও সবাই কিছু না কিছু সময় ধরে ব্যায়াম করেন।”
 
ক্লাবটি একদম পরিবারের মত। কিছু মানুষ ভোর ৫টায় এসে আদার স্যুপ তৈরি করতে শুরু করেন। কেউ আবার পরীক্ষিত জীবন রক্ষাকারী। সারা বছর তাঁরা দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিছু মানুষ পরিষ্কারের কাজ করেন। 
শীতকালীন সাঁতারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য, সবাই স্বেচ্ছায় কাজ করে থাকেন, এবং কোন পারিশ্রমিক চান না। সুইমিং পুলের পাশে কালো বোর্ডে সুন্দরভাবে “নববর্ষকে স্বাগত” বাক্যটি লেখা হয়। এতে চীনা নববর্ষের পরিবেশ অনুভব করা যায়। তিরাশি বছর বয়সী ছেন সু ফেই এটা লিখেছেন। বয়সের কারণে তিনি এখন আর সাঁতার কাটেন না। কিন্তু তিনি সবাইকে সঙ্গ দেন। স্বেচ্ছায় কিছু কাজ করে থাকেন। তিনি জানান, “সবাইকে সাঁতরাতে দেখে আমি মনে মনে উষ্ণতা অনুভব করি”। 
শীতকালীন সাঁতার মানুষের রক্তের শিরা ও হৃদপিণ্ডের জন্য অনেক উপকারি। তাই একে অনেকে কার্ডিউভাসকুলার ব্যায়াম বলে ডেকে থাকেন। 
একজন শীতকালীন সাঁতার প্রেমী জানান, “এ সাঁতারের জন্য কিছু সাহস থাকতে হবে। এ ছাড়া এতে বিরতি দেওয়া যাবে না। যদি বিরতি দেওয়া হয়, তাহলে এ শীতকালে আর করা যাবে না। কারণ শরীর আর এ ধকল সইতে পারবে না।”
আকাশ: এনাম ভাই, আপনার এ গল্পটি কেমন লেগেছে?
এনাম:....
আকাশ: বন্ধুরা, বসন্তকাল এসেছে। আসেন, আমরা একসাথে শরীরচর্চা জোরদার করি, কেমন? বসন্তকে স্বাগত জানানোর জন্য এবং নিজেকে উন্নত করার জন্য। 
এনাম:...
(আকাশ/এনাম/রুবি)