“অবস্থা অত্যন্ত কঠিন হলেও আমরা কোনো কর্মীকে বরখাস্ত করিনি”—চীনের বস্ত্রবয়ন কর্মীর গল্প
2021-02-05 16:54:44

“অবস্থা অত্যন্ত কঠিন হলেও আমরা কোনো কর্মীকে বরখাস্ত করিনি।” এ কথা বলেছেন চীনের সি আন শহরের বস্ত্রবয়ন গ্রুপ কোম্পানীর শ্রমজীবি সংঘের চেয়ারম্যান ইয়াং ই ছিং। তিনি বলেন, দরিদ্র কর্মীদের জন্য স্থিতিশীল চাকরি এবং আয় নিশ্চিত করা তাদের বড় চাওয়া।

সি আন বস্ত্রবয়ন গ্রুপ কোম্পানী এবং উ হুয়ান গ্রুপ কোম্পানী হল সি আন শহরের দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত বস্ত্রবয়ন শিল্প প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে কোম্পানীর ২ সহশ্রাধিক শ্রমিক আছে। আর উ হুয়ান গ্রুপ কোম্পানীর ১ হাজার ৮ শ’ জন শ্রমিক আছে। শ্রমিকদের গড় আয় ততটা বেশি না। তবে সি আন বস্ত্রবয়ন গ্রুপ কোম্পানী এবং উ হুয়ান গ্রুপ কোম্পানী শ্রমিকদের কেন্দ্র করে তাদের সুখের জীবনের জন্য অনেক চেষ্টা করেছে। যাদের পারিবারিক অবস্থা ভালো না, কোম্পানী বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের সাহায্য করে আসছে।  

সি আন বস্ত্র বয়ন গ্রুপ কোম্পানীর শ্রমজীবি সংঘের চেয়ারম্যান এবং উ হুয়ান কোম্পানীর শ্রমজীবি সংঘের প্রধান ইউয়ান রুই চুয়ান সাংবাদিককে জানান, চিকিত্সা করা ও ছেলেমেয়েদের শিক্ষার ব্যয় হল কর্মীদের জীবন কঠিনতায় পড়ার দুই প্রধান কারণ। আর কর্মীদের স্থিতিশীল চাকরি এবং আয় নিশ্চিত করা তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ইয়াং ই ছিং বলেন, “গত বছরের জুলাই এবং অগাস্ট মাসে, ব্যবসায় ভালো ছিল না। এই কারণে আমরা ১০০টি কাপড় বোনা মেশিন বন্ধ করে দিয়েছি এবং কর্মীদের পালাক্রমিক কাজের ব্যবস্থা নিয়েছি। যদিও সবার বেতন কিছুটা কমেছে, তবে আমরা সবার চাকরি নিশ্চিত করেছি, কাউকেই বরখাস্ত করিনি।”

প্রদেশের শ্রমজীবি সংঘ, শহরের শ্রমজীবি সংঘ, বেসামরিক প্রশাসন ব্যুরোসহ বিভিন্ন স্তরের সংস্থা উপরোক্ত দুই বস্ত্রবয়ন গ্রুপ কোম্পানীকে অনেক আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। কোম্পানীগুলো এসব অর্থ দরিদ্র কর্মিদের সাহায্যে ব্যয় করেছে।

ইয়াং ই ছিং বলেন, “আমরা নিজেও কোম্পানীতে একটি ‘পরস্পরকে সাহায্য করার তহবিল’ স্থাপন করেছি। প্রত্যেক কর্মী অল্প কিছু টাকা প্রদান করে, তারপর শ্রমজীবি সংঘ কিছুটা ভর্তুকি দেয়। এসব অর্থ দরিদ্র কর্মীদের সাহায্যে ব্যয় করা যায়। উত্সবের সময় আমরা দরিদ্র কর্মীদের কিছু ভাতা দেই, কিছু দৈনন্দিন জিনিস দেই। যদিও সংখ্যা বেশি না, তবে তাদের মনে কিছু উষ্ণতার অনুভূতি সৃষ্টি হয়।” ইয়াং ই ছিং আরও বলেন, কোম্পানী কর্মীদের ছেলেমেয়ের স্কুলে ভর্তির সমস্যা সমাধানের চেষ্টাও করে।

ওয়াং বেন সিং হলেন সি আন বস্ত্রবয়ন গ্রুপ কোম্পানীর একজন মেশিন মেরামতকারী কর্মী। ২০১২ সালে তিনি গুরুতর কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। প্রতিমাসে চিকিত্সা করা এবং ওষুধ খাওয়ার জন্য তার ৮ শ’ ইউয়ান ব্যয় হয়। পরিবারের অবস্থা এই কারণে অনেক কঠিন হয়। এমন খারাপ অবস্থায় গত বছর ওয়াং-এর মা আবারও ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। ফলে চিকিত্সার জন্য এক লাখেরও বেশি ইউয়ান ব্যয় হয়।

ওয়াং বলেন, “আমার প্রতিমাসের বেতন ৪ হাজার ইউয়ানের কিছু বেশি। আমি পরিবারের একমাত্র উপার্জনের উত্স। আমার স্ত্রীর কোনো স্থির চাকরি নেই। আমার ছেলে এখন প্রাথমিক স্কুলের ষষ্ঠ গ্রেডে পড়ছে। জীবনযাপন এবং চিকিত্সার ব্যয় ছাড়া প্রতি মাসে এক সহস্রাধিক ইউয়ান বাড়িঘরের ঋণ হিসেবে ফেরত দিতে হয়।” তাই তার আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। তিনি বলেন, “আমাদের কোম্পানী আমাকে অনেক সাহায্য করেছে।  আমার ছেলের স্কুলে লেখাপড়ার সমস্যাও সমাধান করেছে।”

উ হুয়ান বস্ত্রবয়ন গ্রুপ কোম্পানীর শ্রমজীবি সংঘের প্রধান ইউয়ান রুই চুয়ান জানান, কোম্পানী প্রতিবছর দরিদ্র কর্মীদের বাসায় গিয়ে তাদের খোঁজ-খবর নেয়, তাদের সমস্যা এবং চাহিদা জেনে নেয়। কোনো কর্মীর ছেলেমেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলে কোম্পানী কর্মীকে ভাতাও দেয়, যাতে ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার ফি দিতে সমস্যা না হয়। তিনি বলেন, “আমাদের কোম্পানীর সবার সম্পর্ক খুব ভালো। ঐক্য আছে। কারু পরিবারে কোনো কাজ থাকলে সবাই তাকে সাহায্য করতে যায়।”

৪৬ বছর বয়সী লি সিন লিয়ান হলেন উ হুয়ান বস্তবয়ন গ্রুপ কোম্পানীর একজন নারীকর্মী। এই কোম্পানীতে তিনি ২০ বছরেরও বেশি  সময় ধরে কাজ করছেন। তাঁর স্বামী অনেক আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি একার বেতন দিয়ে মেয়েকে বড় করেছেন। তিনি বলেন, “আমার মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষে পড়ছে। তাঁর লেখাপড়া খুব ভালো।”

তবে লি সিন লিয়ানের প্রতিমাসের আয় শুধুমাত্র ৩ হাজার  ইউয়ানের কিছু বেশী। তাঁর মেয়ের জীবনযাপনের খরচ, বাড়িঘরের ভাড়া এবং দৈনন্দিন জীবনের খরচ দিতে হয়। তাই প্রত্যেক ইউয়ান খরচ করার সময় তিনি চিন্তা করেন। তাঁর কোনো সঞ্চয় নেই। তিনি বলেন, “সৌভাগ্যের ব্যাপার হল আমার কোম্পানী আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আমার মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় কোম্পানী আমাকে ৫ হাজার ইউয়ান ভাতা দিয়েছে। গত বছর কোম্পানী আবারও আমাকে ১০ হাজার ইউয়ান ভাতা দিয়েছে।”  

ইউয়ান রুই চুয়ান বলেন, “প্রত্যেক কর্মীকেই আমরা সাহায্য করবো, মনে রাখবো।”