মহামারি সম্পর্কে চীনা বিশেষজ্ঞের গবেষণার ফলাফল
2021-02-03 14:49:07

মহামারি সম্পর্কে চীনা বিশেষজ্ঞের গবেষণার ফলাফল_fororder_u=869616876,2807550597&fm=11&gp=0

গত ৩১ জানুয়ারি সকালে, চীনের কুয়াং তুং প্রদেশের কুয়াং চৌ শহরে অনুষ্ঠিত হয় তৃণমূলে মহামারি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক একটি কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। কুয়াং চৌ গবেষণালয়ের পরিচালক ও চীন ইঞ্জিনিয়ারিং একাডেমির সদস্য চুন নান শান তৃণমূলে মহামারি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ, শীতকাল ও বসন্তকালে মহামারির প্রবণতাসহ নানা বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন।

 

১ মহামারির বৈশ্বিক প্রবণতা

বর্তমানে নানা দেশে চালু হয়েছে টিকাদান কার্যক্রম এবং টিকাগ্রহণ বৃদ্ধির সাথে সাথে কোভিড-১৯ মহামারি অবস্থা ভাল হয়ে উঠবে। মহামারি ভবিষ্যতে কী হবে? তা জানতে, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মহামারি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থাপনা জোরদার ছাড়া, টিকার কার্যকারিতাও এতে বড় ভূকিমা পালন করবে। দুটি ডোজ নিলেও দু তিন সপ্তাহ পর শরীরে অ্যান্টিবডি সৃষ্টি হবে তার মানে মার্চ মাসের পর আমরা মহামারির বৈশ্বিক প্রবণতা বুঝতে পারব।

 

২ টিকা নেয়ার পর মাস্ক পরার দরকার আছে কি?

টিকা নেওয়ার পর মাস্ক পরা অব্যাহত রাখতে হয়। চীনের তৈরি টিকা নিষ্ক্রিয় এবং এটি খুবই নিরাপদ। সাধারণত প্রথম ডোজ নেওয়ার পর শরীরে অ্যান্টিবডি সৃষ্টি হবে এবং ৬০-৭০ শতাংশ সুরক্ষা প্রদান করতে পারে। দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ১৪ দিন পরে সংরক্ষণ হার হবে ৯০ শতাংশ। টিকা নেওয়ার পর দু-তিন সপ্তাহের পর অ্যান্টিবডি সৃষ্ট হবে বলে এর মধ্যে মাস্ক পরার দরকার আছে।

 

৩ নতুন প্রজাতির কোভিড-১৯ ভাইরাস কি আরও সংক্রামক?

ভাইরাসের প্রোটিনের এক ধরনের পরিবর্তনের কারণে ভাইরাসটি আরও সহজে মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে। তাই নতুন প্রজাতি ভাইরাসকে আরও বেশি সংক্রামক মনে করা হয়। একদিকে, আমরা নতুন প্রজাতির ভাইরাসকে ট্র্যাকিং করি, অন্যদিকে, কোন প্রজাতির ভাইরাস দিয়ে টিকা তৈরি করবো তা নিয়ে বিবেচনা করি। ভবিষ্যতে করোনাভাইরাসের বিষাক্ততা পরিবর্তন হবে কী না? তা ফ্লুর মতো প্রতি বছরে পরিবর্তন হবে কী না? এসবের উপর আমরা ট্র্যাক রাখবো। এখন যে ফ্লু টিকা আমরা ব্যবহার করি, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পূর্বভাস অনুযায়ী, মহামারী সৃষ্ট তিনটি ফ্লুর ভাইরাস স্ট্রেইন দিয়ে তৈরি করা। ভবিষ্যতে কী করোনাভাইরাসও এ রকম হবে? তা নিয়ে আমরা আরও গবেষণা করব।

 

৪ বর্তমানে মহামারি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের  নতুন চ্যালেঞ্জ

চীনে মহামারি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের  নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। একটি হল বিক্ষিপ্ত মহামারি, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। দ্বিতীয়টা হল ভাইরাসের রূপান্তর। রোগীর সংখ্যা কম ও পরিবেশ ভাল হলে কোন কোন জায়গায় প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা শিথিল করা হয়। তাই এখন মহামারি বিক্ষিপ্ত এবং নির্দিষ্ট কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়ার বৈশিষ্ট্য দেখা দায়েছে। চীনের বৃহত্তম ঐতিহ্যিক বসন্ত উত্সব আসছে, তাই সজাগ থাকা উচিত্। বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে। সম্প্রতি চীনে যে বিক্ষিপ্ত মহামারি রয়েছে, তার ৬০-৭০ শতাংশ গ্রামাঞ্চলে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের মানুষ স্থানীয়ভাবে উত্সব পালন করবেন।

 

অন্য জায়গার মানুষকে উত্সবের সময় বাড়ি না ফিরে, যেখানে আছে সেখানে বসন্ত উত্সব কাটানোর পরামর্শ দেয়া হয়। সার্সের তুলনায় কোভিড-১৯-এর একটি ব্যতিক্রমি বৈশিষ্ট্য হল কোন কোন মানুষ আক্রান্ত হলেও কোন লক্ষণ দেখা যায়না। বসন্ত উত্সবের সময় সমাবেশ ও আত্মীয় এবং বন্ধুদেরকে দেখা আমাদের ঐতিহ্য, তবে এতে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা বৃদ্ধি হবে। তাই এবার উত্সবে বাড়িতে থাকা সবচেয়ে ভাল। তাছাড়া, অসুস্থ হলে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যেতে হবে।

 

৫ চীনা টিকার কার্যকারিতা কত দিন স্থায়ী হতে পারে?

বিভিন্ন মানদন্ড অনুযায়ী টিকার ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার ফলাফলে পার্থক্য থাকে। চীনে টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চালানো হয়। তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা যেখানে রোগী বেশি সেখানে করতে হয়, তাই বিদেশে এ পরীক্ষা চালানো হয়। কোন কোন দেশ নিজের মানদন্ড অনুযায়ী, চীনা টিকার পরীক্ষা করতে চায়, তাই ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার ফলাফলে পার্থক্য দেখা যায়। কোন কোন দেশে চিকিত্সক ও নার্সদেরকে বেশি টিকা দেওয়া হয়। এমন গ্রুপের মানুষ সংক্রামিত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে, তাই তাদেরকে নিয়ে পরীক্ষা করলে কার্যকারিতার ফলাফল ভিন্ন হবে।

প্রথম চিনা টিকাদান থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৮ মাস চলে গেছে এবং এ পর্যন্ত অ্যান্টিবডি ৯০ শতাংশ পর্যায়ে বজায় রয়েছে। টিকার জন্য নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চীনা টিকার হালকা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার হার ১ লাখে ৬জন এবং গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার হার ১০লাখে ১জন। যে ফ্লু টিকা আমরা নেই, তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার হার ১০লাখে ৩ জন। যে কোন একটি টিকা গ্রহণ করলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে। ১০০ শতাংশ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ামুক্ত টিকা থাকবে না। এখন চীনে ২ কোটির বেশি  মানুষ সাইনোফার্ম ও সাইনোভ্যাকের তৈরি টিকা গ্রহণ করেছেন এবং গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার রিপোর্ট পাওয়া যায় নি।(শিশির /এনাম/রুবি)