২০২০ সালে চীনের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের আমদানী-রপ্তানীর বৃদ্ধি ছিল মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধির ৯.২শতাংশ। ফলে এটি চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যিক আমদানী-রপ্তানীর গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়।
২০২০ সালে রপ্তানী পণ্যগুলোতে মহামারি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সরঞ্জাম রপ্তানীর মোট মূল্য ছিল ৪৩৮.৫বিলিয়ন ইউয়ান। এর মধ্যে মাস্ক রপ্তানীর সংখ্যা ছিল ২২৪.২বিলিয়ন। তার মানে চীনকে ছাড়া বিশ্বের বাকী প্রত্যেক মানুষের জন্য প্রায় ৪০টি করে মাস্ক সরবরাহ করে চীন। তাছাড়া চীন ২.৩১বিলিয়ন পিপিই, ২৮.৯কোটি নিরাপত্তা চশমা, ২লাখ ৭১হাজার শ্বাসযন্ত্র এবং ১.০৮বিলিয়ন কোভিড-১৯ সনাক্তকরণ কিট রপ্তানী করে।
চীন সবার আগে সার্বিকভাবে কাজ-কর্ম ও উত্পাদন পুনরুদ্ধার করা এবং মহামারী প্রতিরোধ সরঞ্জামের বৃহত্তম সরবরাহকারি দেশ হওয়ার সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে অভ্যন্তরীণ মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ও অঞ্চলে মহামারি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সরঞ্জাম রপ্তানী করেছে। এর মাধ্যমে শক্তিশালীভাবে বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় সমর্থন দেয় চীন। এতে অনেক ব্যক্তিগত শিল্পপ্রতিষ্ঠানও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
জানা গেছে, চীনের বৃহত্তম বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রধান অংশীদার হিসেবে ২০২০ সালে ব্যক্তিগত শিল্পপ্রতিষ্ঠান আমদানী-রপ্তানীর ১৪.৯৮ ট্রিলিয়ন ইউয়ান বাস্তবায়ন করেছে। যা চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যিক মোট মূল্যের ৪৬.৬ শতাংশ এবং এটি ২০১৯ সালের চেয়ে ৩.৯ শতাংশ বেশি। বিশেষ করে মহামারীতে অসুবিধার সম্মুখীন ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরিভাবে নমনীয় ব্যবস্থাপনার সুবিধা কাজে লাগিয়ে ইতিবাচকভাবে আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণ করে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে।
ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের বৈদেশিক বাণিজ্যিক উন্নয়নের অভ্যন্তরীণ চালিকাশক্তি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বাজার সম্প্রসারণে মাত্রা অব্যাহতভাবে জোরদার হয়েছে। ২০২০ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের বাজারে চীনের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের রপ্তানী যথাক্রমে ১৪.৯, ২৩.৪, ১২.৯ ও ১৮.৬ শতাংশ বেড়েছে। আসিয়ানে রপ্তানী ১৫.১ শতাংশ বেড়েছে। সবারই দুই অংকের প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। একই সময়ে চীনের মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানসমূহের বৈদেশিক বাণিজ্যিক বৃদ্ধির গতি ছিল ১৫.৯ শতাংশ, যা পূর্বাঞ্চলের চেয়ে ৫.৬ শতাংশ বেশি।
বন্ধুরা, কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব এবং জটিল আন্তর্জাতিক খাদ্য বাজারের পরিস্থিতির সম্মুখীন, ভবিষ্যতে চীনের কৃষি পণ্য কিভাবে কার্যকর সরবরাহ বাড়াবে? সম্প্রতি চীনের কৃষি ও পল্লী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, খাদ্য, তুলা, তেল, চিনি ও মাংসসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কৃষি পণ্যের কার্যকর সরবরাহ সুনিশ্চিত করা হচ্ছে কৃষি ও পল্লী বিষয়ক বিভাগের প্রধান কাজ। পাশাপাশি কৃষি ও পল্লী আধুনিকায়নও বিভাগের অন্যতম কর্তব্য।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। জীবনযাপনের মানও উন্নত হয়েছে। কৃষি পণ্যের প্রতি শহর ও পল্লী অঞ্চলের অধিবাসীদের চাহিদাও বেড়েছে। নতুন পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়নোর জন্য কৃষি উত্পাদন সংখ্যা বজায় রাখার পাশাপাশি বৈচিত্র্য ও গুণগতমানও নিশ্চিত করতে হয়। উন্নয়ন পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনা’ চলাকালে কৃষি ও পল্লী মন্ত্রণালয় প্রধানত তিনটি ক্ষেত্রে কাজ করবে।
উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে ‘সংখ্যা সুনিশ্চিত করা’। কৃষির বহুমুখী উত্পাদন ক্ষমতা সুসংহত ও উন্নত করার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তি শক্ত করা।
প্রধানত: এক, আবাদী জমি সুরক্ষা ও গুণগত মান উন্নয়ন জোরদার করা। সবচেয়ে কঠোর আবাদী জমির সুরক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর করার পাশাপাশি কৃষি জমি সরঞ্জামের মৌলিক শর্ত উন্নত করা এবং উচ্চমানের কৃষি জমি নির্মাণ করা। দুই, প্রযুক্তবিদ্যাগত সমর্থন ও সক্ষমতা উন্নত করে স্বতন্ত্রভাবে কিছু সংখ্যক বিরাট সাফল্য অর্জনে নতুন প্রজাতি পালন করা।
উত্পাদন কাঠানো সুবিন্যস্ত করে ‘বৈচিত্র বজায় রাখা’। ব্যবস্থাপনা নেতৃত্ব জোরদার করার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ কৃষি পণ্যের আঞ্চলিক বিতরণ ও উত্পাদন সরবরাহ পরিকল্পনা কার্যকর করা। খাদ্য উত্পাদন এলাকা, গুরুত্বপূর্ণ কৃষি পণ্য উত্পাদন সংরক্ষণ এলাকা এবং বৈশিষ্ট্যময় কৃষি পণ্যের প্রধান এলাকা নির্মাণ করে বিভিন্ন জাতের কাঠামো উন্নত করা। গুরুত্বপূর্ণভাবে উচ্চ তেল ও উচ্চ প্রোটিন সয়া, ঘাস-ভুট্টা ও উন্নতমানের ধান এবং উন্নতমানের গমের সরবরাহ বাড়ানো।
এছাড়া, মাংস, ডিম, দুধ, ফল, সব্জি ও মাছসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপণ্য ও আনুষঙ্গিক পণ্যে উত্পাদন করার পাশাপাশি তৈলবীজ উত্পাদন সম্প্রসারণ করা। মাংস ও গবাদি পশুর উন্নয়ন দ্রুততর করা। এবং অব্যাহতভাবে দুগ্ধ শিল্পের পুনরুজ্জীবন ত্বরান্বিত করা। এসব ব্যবস্থার মাধ্যমে পণ্যভোগীদের সব রকম চাহিদা পূরণ করা হবে।
চীনের কৃষি ও পল্লী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন পরিকল্পনা বিভাগের লক্ষ্য হচ্ছে গুণগত মান, সবুজ ও ব্র্যান্ডের মাধ্যমে কৃষি উন্নত করা। উন্নতমানের সবুজ পণ্যের সরবরাহ বাড়ানো। এক দিকে, ব্যাপকভাবে সবুজ, জৈব ও ভৌগলিক সূচক কৃষি পণ্য উন্নয়ন। ভোজ্য কৃষি পণ্য সম্মতি সার্টিফিকেট ব্যবস্থা কার্যকর করা। অন্য দিকে, উত্পাদনের পদ্ধতিতে ধরন ও গুণগত মানের উন্নতি, ব্র্যান্ড তৈরি ও প্রমিতকরণ উত্পাদন ত্বরান্বিত করবে, যাতে কৃষি পণ্যের গুণগত মান ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা শক্তি উন্নীত করা যায়।
আচ্ছা, প্রিয় বন্ধুরা, এতক্ষণ শুনলেন ‘চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনা’ চলাকালে চীন কীভাবে কৃষি পণ্যের কার্যকর সরবরাহ বাড়াবে, সে সংক্রান্ত কিছু তথ্য। এরই সঙ্গে শেষ করছি আজকের ‘ব্যবসা-বাণিজ্য’ অনুষ্ঠানটি। এতক্ষণ আমার সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আজ তাহলে এ পর্যন্তই। আগামী সপ্তাহে আবারও কথা হবে। সে পর্যন্ত ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।
(প্রেমা/এনাম)