আজকের টপিক: চীনাবাহিনী বিশ্ব শান্তি রক্ষার দৃঢ় শক্তি
2020-11-05 14:47:24

 

বিশ্বে শান্তি বজায় রাখা মানবজাতির অভিন্ন সাধনা ও লক্ষ্য। চীন সরকার ও জনগণ সবসময় বিশ্ব শান্তির রক্ষণাবেক্ষণকে তাদের পবিত্র কর্তব্য হিসাবে বিবেচনা করে। চলতি বছর জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে চীনাবাহিনীর অংশগ্রহণের ৩০তম বার্ষিকী। গত ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চীন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের জন্য তার সমর্থনকে ব্যাপকভাবে জোরদার করেছে এবং এই অভিযানের মূল শক্তি হয়ে উঠেছে। আজকের টপিক আসরে আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করবো।

বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অভিযানের বৈশ্বিক তাত্পর্য রয়েছে এবং এটি বিশ্ব পরিস্থিতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

বর্তমান বিশ্ব বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে চলছে। শান্তি ও উন্নয়ন এখনও সময়ের থিম, তবে তা ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিবেশ উদ্বেগজনক, আঞ্চলিক সংঘর্ষ ও স্থানীয় যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে, সন্ত্রাসবাদও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

জাতিসংঘ হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে গঠিত বৈশ্বিক বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার মূল এবং বহুপাক্ষিক কূটনীতির গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ। সম্মিলিত সুরক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বহুপক্ষীয়তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন এবং আঞ্চলিক সুরক্ষা ইস্যু মোকাবিলার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার কাজ বহুপাক্ষিক প্রক্রিয়াগুলির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ এবং এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে।

১৯৯০ সালের এপ্রিলে চীনা সেনাবাহিনী পাঁচটি সামরিক পর্যবেক্ষকদলকে ইউএন ট্রুস সুপারভিশন সংস্থায় প্রেরণ করেছিল। সেটি ছিল ইউএন শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে চীনা সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণের গৌরবময় সূচনা। ১৯৯০ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত, চীনা সেনাবাহিনী পর্যায়ক্রমে ইরাক-কুয়েত সীমান্ত, পশ্চিম সাহারা, কম্বোডিয়া, মোজাম্বিক, লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিওন, ইথিওপিয়া-ইরিত্রিয়া প্রভৃতি দেশ এবং অঞ্চলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অভিযানের জন্য সামরিক পর্যবেক্ষক ও অফিসার প্রেরণ করে।

২০০১ সালে চীনের প্রতিরক্ষাবিষয়ক শান্তিরক্ষা কার্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রধান দায়িত্ব জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে চীনা সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করা। একবিংশ শতাব্দীতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের কাজগুলো আরও বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে। এর পর যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন, সংঘাত প্রতিরোধ, শান্তি প্রক্রিয়া প্রচার, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংস্কার কার্যক্রম চালানো, এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের জন্য চীনা শান্তিরক্ষীদের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে, চীনা সেনাবাহিনী ধীরে ধীরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের জন্য তাদের সামরিক সহায়তা বৃদ্ধি করেছে। ২০০৩ সালের এপ্রিলে চীনা সেনাবাহিনী কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অভিযানের জন্য একটি কাঠামোগত শান্তিরক্ষা প্রকৌশল ইউনিট এবং একটি মেডিকেল ইউনিট প্রেরণ করে। তার পর থেকে, চীনা সেনাবাহিনী উত্তর আমেরিকার লাইবেরিয়া, লেবানন, সুদান এবং অন্যান্য দেশ ও অঞ্চলে ইউএন শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং, পরিবহন এবং চিকিত্সা ইউনিট ধারাবাহিকভাবে প্রেরণ করে। ২০০১ সাল থেকে ২০১২ সালে  চীনা শান্তিরক্ষীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৪০ ও ৫০ জন। পরে তা  বেড়ে দাঁড়িয়েছে বছরে ১৬০০ জন থেকে ১৮০০ জনের মধ্যে। ২০০৯ সালে চীন নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের মধ্যে সর্বাধিক শান্তিরক্ষা কর্মকর্তা ও সৈন্য পাঠায়।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা সম্মেলনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে সমর্থন করার জন্য ছয়টি বাস্তব প্রতিশ্রুতি দেন। বর্তমানে সেসব প্রতিশ্রুতিও পূরণ করা হচ্ছে। চীনা সামরিক বাহিনী এখন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অভিযানের মূল উপাদান এবং বিশ্ব শান্তি বজায় রাখার জন্য একটি দৃঢ় শক্তি। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)