৩০ বছরের পুরানো 'চিও ইয়ু লু' চলচ্চিত্রের ওপর ফিরে তাকাবো
2020-10-08 14:17:28

৩০ বছরের পুরানো 'চিও ইয়ু লু' চলচ্চিত্রের ওপর ফিরে তাকাবো

গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে চায়না গোল্ডেন রুস্টার অ্যান্ড হান্ড্রেড ফ্লাওয়ার্স ফিল্ম ফেস্টিভাল চীনের হ্যনান প্রদেশের চেংচৌ শহরে উদ্বোধন করা হয় এবং ৩৫তম হান্ড্রেড ফ্লাওয়ার্স অ্যাওয়ার্ডের বিতরণী অনুষ্ঠান ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা এই উৎসবের কথা জানাবো এবং ৩০ বছরের পুরানো 'চিও ইয়ু লু' চলচ্চিত্রের দিকে আলোকপাত করবো।

এবারের চলচ্চিত্র উৎসব তিন দিন স্থায়ী হয় এবং কোনো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও লাল গালিচার অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়নি। ১০টি চলচ্চিত্র ২৫তম হান্ড্রেড ফ্লাওয়ার্স অ্যাওয়ার্ডের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নেয় এবং পুরস্কারের ঘোষণা ২৬ সেপ্টেম্বর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রকাশিত হয়।

চায়না গোল্ডেন রুস্টার অ্যান্ড হান্ড্রেড ফ্লাওয়ার্স ফিল্ম ফেস্টিভাল এবং ৩৫তম হান্ড্রেড ফ্লাওয়ার্স অ্যাওয়ার্ড ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধারাবাহিক বৈচিত্র্যময় চলচ্চিত্রের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমও শুরু হয়।

চীনের চায়না গোল্ডেন রুস্টার অ্যান্ড হান্ড্রেড ফ্লাওয়ার্স ফিল্ম ফেস্টিভাল ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি চীনের সভ্যতা ও আর্ট সার্কেল বিষয়ক ফেডারেশন এবং চায়না ফিল্ম অ্যাসোসিয়েশনের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় এবং এই চলচ্চিত্রটি হলো মুল ভূভাগে সবচেয়ে পেশাগত ও প্রভাবশালী চলচ্চিত্র পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম। হান্ড্রেড ফ্লাওয়ার্স অ্যাওয়ার্ড কার্যক্রম ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং একে চীনের চলচ্চিত্রের 'দর্শক পুরস্কার' হিসেবে গণ্য করা হয়।

চলচ্চিত্র উৎসব চলাকালে 'চিও ইয়ু লু' নামে এক চলচ্চিত্র আবার প্রদর্শিত হয়। এখন আমরা এ চলচ্চিত্র নিয়ে কিছু আলোচনা করবো।

৩০ বছর আগে 'চিও ইয়ু লু' এ চলচ্চিত্র অসংখ্য মানুষকে মুগ্ধ করেছে। 'চিও ইউয়ু লু'র চেতনা স্বপ্ন ও বিশ্বাসের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মানুষকে উৎসাহিত করে আসছে।

চিও ইয়ু লু' প্রাণবন্তভাবে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিসি'র সদস্যদের সর্বোচ্চ চেতনা প্রকাশ করে। এই চেতনা চিরদিন বেঁচে থাকবে। ৯২ বছর বয়সী প্রবীণ শিল্পী থিয়েন হুয়া এভাবেই বলেছিলেন।

৫৪ বছর আগে মাত্র ১৭ বছর বয়সী ওয়াং চি শিং পিপলস সেন্ট্রাল ব্রডকাস্টিং স্টেশন থেকে প্রথমবারের মতো 'জেলা পর্যায়ের সিপিসি'র সম্পাদকের উদাহরণ-চিও ইয়ু লু' নামে একটি প্রতিবেদন শুনেছিলেন।

প্রতিবেদনে লেখা কয়েকটি ব্যাপার আমার মনে অদম্য ছাপ ফেলে। ওয়াং চি শিং বলেন, চিও ইয়ু লু প্রথমে সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের শুরুতে তাঁর নেতৃত্বে কয়েকজন কর্মকর্তারা লান খাও স্টেশনে আসেন। তারা স্বচক্ষে দেখেন যে, লান খাওয়ের অনেক অধিবাসী দুর্ভিক্ষ থেকে পালাতে অন্য জায়গায়ে চলে গেছেন। সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি দারিদ্র্যবিমোচনের তহবিল নিয়ে সবচে দরিদ্র গ্রামে গিয়ে জনগণের দেখাশোনা করেন। রোগে আক্রান্ত এক বৃদ্ধ তাঁকে জিজ্ঞাস করেন, তুমি কে? তিনি জবাবে দেন, আমি আপনার ছেলে।

ওয়াং চি শিং বলেন, তরুণ বয়স হওয়া সত্ত্বেও সম্পাদক চিও ইয়ু লু'র জনগণকে সেবা দেওয়ার মর্ম শুনে অনেক মুগ্ধ হয়ে চোখের পানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না তিনি।

হ্যনান প্রদেশের খাই ফোং শহরের লান খাও জেলা সাইক্লোন, বালু ঝড় ও জলাবদ্ধতা— এ তিনটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৬২ সালে চিও ইয়ু লু লানখাও জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা শুরু করেন। পরবর্তী ৪৭৫ দিনের মধ্যে শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তিনি পরিশ্রম ও উষ্ণতা নিয়ে জনগণকে নেতৃত্ব দিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে যান।

১৯৯০ সালে সিপিসি'র এই জেলা সম্পাদকের কথা স্মরণ করতে চীনের এমেই চলচ্চিত্র স্টুডিও চিও ইয়ু লু'র নামের চলচ্চিত্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। তাঁর নেতৃত্বে লান খাও জেলার জনগণের পরিশ্রমের গল্প তুলে ধরতে চায়। ওয়াং চি শিং এই চলচ্চিত্র পরিচালকের দায়িত্ব নেন।

চিও ইয়ু লু'র চরিত্রে অভিনয় করা লি শুয়ে চিয়েন নামে একজন অভিনেতা চলচ্চিত্র নির্মাণের ২০ দিন আগে প্রতিদিন সবজি খান এবং রাত জাগার মাধ্যমে নিজের ওজন কমানো শুরু করেন। আকৃতির দিক থেকে নিজকে চিও ইয়ু লু'র সঙ্গে মিলানোর ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি।

সে বছর গোল্ডেন রুস্টার অ্যান্ড হান্ড্রেড ফ্লাওয়ার্স ফিল্ম ফেস্টিভালের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে লি শুয়ে চিয়েন বলেন, চিও ইয়ু লু সব কষ্ট সহ্য করেন এবং এখন মর্যাদা ও পুরস্কার লি শুয়ে চিয়নের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

২০২০ সালের গোল্ডেন রুস্টার অ্যান্ড হান্ড্রেড ফ্লাওয়ার্স ফিল্ম ফেস্টিভালে অংশ নেওয়া লি শুয়ে চিয়েন সে বছর চলচ্চিত্র নির্মাণের দৃশ্যের কথা স্মরণ করে বলেন, চলচ্চিত্রের শুরুতে চিও ইয়ু লু'র কাছ থেকে জনগণের বিদায় নেওয়ার দৃশ্য ছিলো। স্থানীয় জনগণ নিজ উদ্যোগে নানা প্রস্তুতি নেয় এবং ক্রু'র টাকা প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁরা বলেন, সম্পাদক চিও ইয়ু লু'র জন্য সামান্য কাজ করতে চাই, আমরা টাকা নিতে চাই না।

সে বছর প্রত্যেক টিকিটের দাম মাত্র ৩ চিও ছিলো। ১৩ লাখ ইউয়ান দিয়ে নির্মিত এ চলচ্চিত্রটি ১৩ কোটি ইউয়ান আয় করে। এই চলচ্চিত্র চীনের চলচ্চিত্র ইতিহাসে একটি বিস্ময়ও সৃষ্টি করে।

চিও ইয়ু লু'র চেতনা কি? তাঁর এ চেতনা বুঝতে না পারলে চলচ্চিত্রের অর্থ বোঝা সম্ভব নয়।

চিও ইয়ু লু'র মেয়ে চিও শৌ ইউন বরাবরই বাবা'র এমন একটি কথা মনে রাখেন, তা হলো মানুষ হিসেবে ভাবানুভূতি থাকতে হয় এবং কাজ করলে দায়িত্ব পালন করতে হয়। বাবাকে মনে রাখায় তিনি কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, আমি জানি, জনগণের কথা মনে রাখার কথা কেবল আমার বাবা নয়, বরং আন্তরিকভাবে জনগণকে সেবা করার চেতনা।

চিও ইয়ু লু'র নাতি ইউ ইন পিতামহকে দেখেন নি। পিতামহ সম্পর্কে বিভিন্ন কথা পরিবারের মুখ থেকে শুনেছেন। তিনি আশাবাদী, স্মার্ট, গান গাইতে পারেন, নাচ করতে পারেন, আরহু বাজাতে পারেন এবং অপেরা পরিবেশনও করতে পারেন। তিনি বলেন, ১৯৯০ সালে মাত্র ১০ বছর বয়সে সে সিনেমা হলে এ চলচ্চিত্রটি দেখেন এবং সে সময় থেকে তিনি পিতামহের আধ্যাত্মিক বিশ্বে প্রবেশ করেন।

ইউ ইন এখন পেশাদার ব্যারিটোন গায়ক। তিনি গীতিনাট্য 'চিও ইয়ু লু'র প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। তিনি বলেন, আমার পিতামহের চেতনা বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমার।

উল্লেখ্য, 'আমার বাবা চিও ইয়ু লু' নামে চলচ্চিত্রের নির্মাণ কাজ ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে শুরু হবে। সিপিসি'র শততম জন্মদিনের উপহার হিসেবে চলচ্চিত্রটি ২০২১ সালের পহেলা জুলাই বড় পর্দায় প্রদর্শিত হবে। এই চলচ্চিত্রে বিভিন্ন দিক থেকে আরো বিস্তারিত তথ্যের মাধ্যমে পরিবারের সদস্য এবং সাধারণ জনগণের প্রতি সম্পাদক চিও ইয়ু লু'র ভাবানুভূতি প্রকাশ পাবে।

বর্তমানে ১১১৬ বর্গকিলোমিটারের লানখাও ভূমিতে বিশাল পরিবর্তন ঘটেছে। সময় এগিয়ে যাচ্ছে। চিও ইয়ু লু'র চেতনা মশালের মতো কয়েক দশক আগে যে আলো ছড়িয়েছিল, তা আগামীকালকেও আলোকিত করবে।

(লিলি/তৌহিদ/শুয়ে)