'পাইন গাছের ধ্বনি শুনো'
  2020-11-02 15:30:01  cri


বন্ধুরা, আজকের এ অনুষ্ঠানে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো চীনের বিখ্যাত লোকসংগীত সুরকার আবিং এবং তার সংগীতের সঙ্গে। আবিংয়ের আসল নাম হুয়া ইয়ান জুন। কিন্তু দেশে-বিদেশে বেশি প্রচলিত আবিং।

বন্ধুরা, প্রথমে শোনাবো আবিংয়ের চীনের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র এরহু দিয়ে বাজানো 'দুটি ঝরনায় চাঁদের ছায়া' নামের একটি অপূর্ব সুর। এ সুরটি আবিংয়ের সৃষ্টি করা সবচেয়ে হৃদয়গ্রাহী সুর।

বিংশ শতাব্দীর ৫০'র দশকের প্রথম দিকে আবিংয়ের বাজানো সুর রেকর্ডিং করে সংগীতের নোটেশন লিখে ডিস্ক প্রকাশ করা হয়। এ ডিস্ক সারা দেশে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এ সুরে কষ্ট ও বেদনা ভোগকারী একজন অন্ধশিল্পীর আবেগ প্রতিফলিত হয়েছে। আবিংয়ের তৈরি সুরে চীনা লোকসংগীতের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কৌশল এবং এরহু'র অদ্বিতীয় মনোহর ধ্বনী প্রকাশিত হয়েছে। এই সুরটি 'বিংশ শতাব্দীর চীনের শ্রেষ্ঠ সংগীত কর্ম পুরস্কার' লাভ করে।

বিখ্যাত লোকসংগীত সুরকার আবিং চীনের চিয়াংসু প্রদেশের উসি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার জীবন নাটকের মতো উঠানামা করেছে। তার একটি মাত্র ফটোগ্রাফি বা ছবি আছে। সে ছবিতে দেখা যায় একজন চশমা পড়া অতি কৃশ মধ্যবয়সী অন্ধ লোক। ছবিটিতে এক ভগ্ন পশমী টুপির নিচে লুকানো মুখের ওপর জীবনের কঠিন ছাপ ও উত্থান-পতন ফুটে উঠেছে। হয়তো জীবনের এই ক্লেশ-ই আবিংয়ের হৃদয়স্পর্শী সুর সৃষ্টির মূল কারণ। আবিং ছিলেন তার বাবা হুয়া ছিং হো'র অবৈধ সন্তান। তার বাবা নানা বাদ্যযন্ত্র বাজাতে জানতেন। ফলে আবিংও ছোটবেলা থেকেই এরহু, তিন তার, পিপা ও বাঁশিসহ বহু বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শিখেন। এখন শোনাবো তাঁর রচিত 'ঘোড়া রেস' শীর্ষক সংগীত

১৯১৮ সালে তার বাবার মৃত্যুর পর আবিং লেইচুন মন্দিরের প্রধান তাওবাদী যাজক হন। কিন্তু পরে খারাপ বন্ধুদের সংস্পর্শে তিনি আফিমে আসক্ত হয়ে পরেন এবং পতিতার সঙ্গে থাকতেন। এর পরে চোখের রোগে আক্রান্ত হয়ে অন্ধ হয়ে যান তিনি। এ সময় তিনি মন্দির থেকে বের হয়ে রাস্তায় রাস্তায় বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে জীবন কাটাতেন। তখন থেকেই মূলত 'অন্ধ আবিং' নামে এক বিখ্যাত সুরকারের নবজন্ম হয়। এখন শোনাবো তাঁর রচিত 'শুভ রাত্রি' শীর্ষক গান। আশা করি, বন্ধুরা সংগীতটি পছন্দ করবেন।

বহু প্রতিভার অধিকারী সুরকার আবিং চমত্কার সব সুর তৈরি করতে পারতেন। তার বাদ্যযন্ত্র বাজানোর কৌশলও অতি চমত্কার। তিনি পিপাকে মাথার ওপর রেখে বাজাতে পারতেন। তাছাড়া এরহু দিয়ে পুরুষ, নারী, বৃদ্ধ ও বাচ্চাদের কথোপকথন, দীর্ঘনিঃশ্বাস, হাসি, মুরগি ও কুকুরের ডাক অনুকরণ করতে পারতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানী সেনাবাহিনী উসি দখল করার পর সুরকার আবিং 'পাইন গাছের ধ্বনি শুনো' নামে একটি সুর সৃষ্টি করেন। এ সুরে সোং রাজবংশের মহান দেশপ্রেমিক জেনারেল ইয়ুন ফেইর কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। সুরে পাইন গাছের দ্বারা জাতীয় বীর ইয়ুন ফেই'র ইস্পাতের মতো শক্ত ও শত্রুকে পরাজিত করার চেতনার প্রশংসা করা হয়েছে। পুরো সুরটিকে প্রবল শক্তিশালী এবং শ্রেষ্ঠ একটি সংগীত কর্ম বলা যায়। বন্ধুরা, শুনুন 'পাইন গাছের ধ্বনি শুনো' সুরটি।

১৯৫০ সালের ৪ ডিসেম্বর ৫৭ বছর বয়সী আবিং রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি জীবনে যদিও মাত্র একবার আনুষ্ঠানিকভাবে মঞ্চে এরহু বাজিয়েছেন। এই অমর শিল্পী জীবনে বহু কষ্ট ভোগ করেছেন। কিন্তু তিনি তার সংগীত গুণ দিয়ে মানবজাতির জন্য অনেক অসাধারণ সুর সৃষ্টি করে গেছেন। তার সুরগুলোর মধ্যে শুধু বেদনার ভাব আছে তা নয়। এসব সুরে শোনা যায় জীবনের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও ভরসার বানীও।

প্রিয় শ্রোতা, এতোক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাদের সবাইকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আমাদের অনুষ্ঠানে আপনারা কোনো পছন্দের গান শুনতে চান, তাহলে জানাবেন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা ben@cri.com.cn। আর আমার নিজস্ব ইমেইল ঠিকানা caiyue@cri.com.cn। 'গানের অনুরোধ' আমার নিজস্ব ই-মেইল ঠিকানায় পাঠালে ভালো হয়। আজ তাহলে এ পর্যন্তই। আশা করি, আগামী সপ্তাহের একই দিন, একই সময়ে আবারও আপনাদের সঙ্গে কথা হবে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন, আনন্দে থাকুন। চাই চিয়ান। (ছাই/আলিম/ফেই)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040