চীন-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সহযোগিতা : চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
  2020-11-01 19:35:02  cri

গত সপ্তাহে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুটি বিষয় গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে। এর একটি হলো বাংলাদেশ-চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করে বেসরকারি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি। সরকারের মন্ত্রী, ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত, অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা ওই সেমিনারে যোগ দেন। আর দ্বিতীয় বিষয়টি হলো করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে সরকারের 'নো মাস্ক, নো সার্ভিস' পলিসি গ্রহণ। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় আমরা নজর দেব গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি বিষয়ের দিকে।

বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার চীন এরইমধ্যে অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে বিশ্বে জায়গা করে নিয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্কও দিন দিন আরো সুদৃঢ় হচ্ছে। এ বিষয়ে ২৯ অক্টোবর বাংলাদেশ-চায়না ডেভেলপমেন্ট কোপারেশন, এক্সপিরিয়েন্স এন্ড আউটলুক শিরোনামে ভার্চুয়াল আলোচনার আয়োজন করে সিপিডি। এতে যোগ দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি চি মিংসহ অর্থনীতিবিদ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকসহ বিশিষ্টজনেরা।

রাষ্ট্রদূত লি চি মিং সেমিনারে জানান, বাংলাদেশে চীনের বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ চলছে। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন চীনা রাষ্ট্রদূত। তাই এ ক্ষেত্রে সহযোগিতার পাশাপাশি বিনিয়োগ বাড়াতে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা বাড়ানোর কথা বলেন লি চি মিং।

পররাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বাংলাদেশে চীনের সরকারি বিনিয়োগের পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন। বাংলাদেশের বিনিয়োগবান্ধব নীতির কথা জানিয়ে ভবিষ্যতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আরো কমাতে ঢাকা উদ্যোগ নেবে বলে জানান তিনি। কর্মী প্রশিক্ষণের বিষয়েও চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

অর্থনৈতিক উন্নয়নে চীনের সঙ্গে বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ কার্যক্রমে গুরুত্ব দিয়ে বর্ডার বেসড অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর জোর দেয়া হয় সেমিনারে। আর বাংলাদেশ-চীনের সুসম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে অগ্রগতি সম্ভব বলেও মনে করেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।

সিপিডির এ ভার্চুয়াল আলোচনা থেকে বাংলাদেশ-চীন অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে একটা দিকনির্দেশনা পাওয়া গেছে বলে মনে করেন এর আয়োজকরা।

এদিকে, বর্তমানে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি দৃশ্যত কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও আসন্ন শীতে তা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞ ও সরকারি মহল। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে তাঁর বক্তৃতায় এ বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করছেন। বিশেষ করে গত কিছু দিন ধরে দেশের মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা একেবারেই কমে গেছে। বেশির ভাগ মানুষই এখন মাস্কটা পর্যন্ত পরছেন না। এ বিষয়ে নানা অনুরোধ-উপরোধের পর সরকার এখন কঠোর অবস্থানে গেছে।

৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণের পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সরকার ৯ দফা নির্দেশনা দেয়। গত ১১ জুলাই ১১টি ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে নির্দেশনা জারি করা হয়। এর মধ্যে ছিল সরকারি-বেসরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেবাগ্রহিতাদের বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশনা। কিন্তু প্রথম দিকে কিছুটা মানা হলেও বর্তমানে মাস্ক ব্যবহারে অনীহা প্রকটভাবে দৃশ্যমান।

অফিস আদালতের বাইরে রাজধানীসহ সারাদেশের পথেঘাটে, বিপনীবিতানে, কাঁচাবাজারে মাস্ক ব্যবহারে গরজ দেখা যাচ্ছে না অনেকের মধ্যে। গরম লাগা, শ্বাসকষ্ট, করোনা হবে না, আল্লাহ ভরসা ইত্যাদি নানা অজুহাত মাস্ক না পরায়। এমনি একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় কঠোর অবস্থানে যাওয়া ছাড়া সরকারের গত্যন্তর নেই।

২৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাতিত্বে মন্ত্রিসভা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে- নো মাস্ক নো সার্ভিস- অর্থাৎ মাস্ক ছাড়া কেউ সরকারি অফিসে এলে সেবা পাবেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে লোকজনকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে মাস্ক ব্যবহারে উৎসাহিত করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্টের মতো আইনি ব্যবস্থার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। সবশেষ ১ নভেম্বর জাতীয় যুবদিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জানান, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে জনগণের স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি বিমান বন্দরসহ সব বন্দরে বিদেশ প্রত্যাগতদের কঠোরভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও কোয়রেন্টিন নিশ্চিত করা হবে।

সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয় কোনো সন্দেহ নেই। তবে ঘোষণা শুধু প্রজ্ঞাপন জারির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা জরুরি।

মাহমুদ হাশিম, ঢাকা থেকে।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040