বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনার সময়পর্ব হল সার্বিকভাবে সমাজতান্ত্রিক আধুনিক দেশ নির্মাণের নতুন যাত্রার প্রথম পাঁচ বছর। এতে চীনের উন্নয়নের নতুন পর্যায় শুরু হবে। উচ্চমান, উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া, জনগণের জীবনমান উন্নয়ন, জনগণের জন্য কল্যাণ সৃষ্টি করা, নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া, ইত্যিাদি হবে চীনের উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
'পাঁচসালা পরিকলল্পনা' হল সিপিসি'র দেশকে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। এটি চীনের উন্নয়নকে যাচাই করার গুরুত্বপূর্ণ উপায়ও বটে। ১৯৫৩ সালে চীনের প্রথম 'পাঁচসালা পরিকল্পনা' গ্রহণ করা হয়েছিল। আর এখন 'চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনা' গ্রহণের কাজ চলেছে। এই দীর্ঘ সময় ধরে চীন নির্ধারিত লক্ষ্যের দিকে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) সমাপ্ত সিপিসি'র ঊনবিংশ কেন্দ্রীয় কমিটির পঞ্চম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, 'চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনা'-র মূল লক্ষ্য হবে দেশের অর্থনিতি ও সমাজের উন্নয়ন। এ ছাড়া ২০৩৫ সালের মধ্যে মোটামুটিভাবে দেশে সমাজতান্ত্রিক আধুনিকায়ন বাস্তবায়নের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যও থাকবে, যা পরবর্তী পর্যায়ে চীনের উন্নয়নের জন্য দিক্-নির্দেশনা দেবে।
চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের কাউন্সিলার অফিসের অতিথি গবেষক ইয়াও জিং ইউয়ান বলেন, আগের পাঁচসালা পরিকল্পনা তুলনায়, 'চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনা'-র পার্থক্য থাকবে। চীন সার্বিকভাবে স্বচ্ছল সমাজ গড়ার লক্ষ্য প্রায় বাস্তবায়ন করেছে। এটি আগামী পাঁচ বছরে সার্বিকভাবে সমাজতান্ত্রিক আধুনিক দেশ গড়ে তোলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি ও সুযোগ সৃষ্টি করেছে। 'চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনা'-র সময়ে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন উচ্চমানের হবে। তিনি বলেন,
"ত্রয়োদশ পাঁচসালা পরিকল্পনার সময় চীনের অর্থনীতির মাঝারি ও দ্রুত গতির প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুতারোপ করা হয়েছিল। তবে চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনার প্রস্তাবে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, চীনের অর্থনীতির টেকসই সুষ্ঠু উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে হয়। তার মানে, চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনা থেকে আমাদের অর্থনৈতিক কাজ আগের দ্রুতগতির প্রবৃদ্ধি থেকে উচ্চ মানের প্রবৃদ্ধিতে পরিবর্তিত হবে। চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনার সময় চীন দেশের অভ্যন্তরীণ সার্কুলেশানকে কেন্দ্র করে, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সার্কুলেশানের সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব দেবে এবং একটি নতুন কাঠামো সৃষ্টি করবে। আর এই কাঠামোর কেন্দ্রীয় বিষয় হবে উচ্চমানের প্রবৃদ্ধি।
চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনায় উদ্ভাবনকে কেন্দ্রীয় স্থানে রাখা হয়েছে। অধিবেশনে বলা হয়, চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনার সময় উদ্ভাবন সামর্থ্যের উল্লেখযোগ্য মাত্রার উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে হবে।
গবেষক ইয়াও বলেন,
"উচ্চ মানের উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে চাইলে উদ্ভাবন খুব গুরুত্বপূর্ণ। আগে দীর্ঘসময় ধরে দ্রুতগতির উন্নয়নের পর্যায়ে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে চীন অন্য দেশের চেয়ে পিছিয়ে গিয়েছিল। এখন চীন উচ্চমানের উন্নয়নের পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। তাই উদ্ভাবন খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া, কিছু দেশ, কিছু রাজনীতিক, হাই-টেক ক্ষেত্রে চীনের অগ্রগতি রোধ করতে চায়। তাই 'চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনার' সময় বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্বারোপ করা খুব প্রয়োজন।
অধিবেশনের ইশতাহারে জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে, জনগণের মৌলিক স্বার্থকে ভালোভাবে বাস্তবায়ন, রক্ষা ও উন্নয়ন করা হল উন্নয়নের মূল দিক'। এতে জনগণের আয় বাড়ানো, কর্মসংস্থানের অগ্রাধিকারনীতি জোরদার করা, দারিদ্র্যবিমোচনের সুফলকে সুসংবদ্ধ করাসহ ধারাবাহিক কৌশল উত্থাপন করা হয়েছে।
'নিরাপত্তা' ছিল অধিবেশনে ব্যবহৃত মূল শব্দগুলোর অন্যতম। অধিবেশনে বলা হয়েছে, আরও উচ্চমানের নিরাপদ চীন গড়ে তুলতে হবে, দেশের উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এবং পুরো প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, চীনের আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ঝুঁকিকে প্রতিরোধ ও মোকাবিলা করতে হবে, দেশের নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করতে হবে। (শুয়েই/আলিম/জিনিয়া)