আসলে চীনা অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে 'ডাবল লুপ' একটি বহুল ব্যবহৃত টার্ম। এটি চীনা অর্থনীতির উন্নয়নে কৌশলগত নির্দেশনা দিয়েছে। চীনের আরও বিশাল উন্নয়নের সম্ভাবনা খুলতে সহায়ক হবে এটি।
তাহলে ডাবল লুপ মানে কী? 'দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া' এর একটি অর্থ। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনা জনগণের সমস্যাগুলোর ভালভাবে সমাধান করতে হবে। বর্তমানে সংরক্ষণবাদ বাড়ছে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির নিম্নদিকে চলে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বাইরের বাজারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা বাড়ছে। সুতরাং, দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা সুষ্ঠুভাবে মেটানো তথা 'দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া' নিঃসন্দেহে বাইরের ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক।
চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক সত্ত্বা। চীনের ১৪০ কোটি লোকসংখ্যার বিশাল বাজার রয়েছে। চীনের আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ গোটা বিশ্বের বাণিজ্যের মোট পরিমাণের ১১ শতাংশ। 'ডাবল লুপ' কাজে লাগানোর তিনটি ভিত্তি হচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের বাস্তব নিয়মকে সম্মান করা, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির উন্নয়নের পরিবর্তনশীল বিষয়ের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এবং অভ্যন্তরীণ বাজারের বাস্তব চাহিদাকে পূরণ করা।
যে কোনো বড় আকারের অর্থনীতি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক—এই দুই লুপের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত অর্থনীতিবিদ্যা বিভাগের প্রধান ও অধ্যাপক লিন ইফু বলেন, অর্থনৈতিক সত্ত্বা বড় হলে, অভ্যন্তরীণ ভোগের পরিমাণ জিডিপি'র অনুপাতে আরও বড় হবে। অভ্যন্তরীণ লুপসংক্রান্ত অর্থনীতি জিডিপি'র মোট পরিমাণের ৮০ শতাংশ এবং আন্তর্জাতিক লুপসংক্রান্ত অর্থনীতি জিডিপি'র ২০ শতাংশ। এটি বড় রাষ্ট্রের একটি সাধারণ নিয়ম। গত কয়েক দশকে মার্কিন অর্থনীতি অভ্যন্তরীণ লুপের ওপর নির্ভর করে আসছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনা অর্থনীতির অবদান ৪০ বছর আগের ১.৮ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ শতাংশে ।
২০০৮ সালে বৈশ্বিক আর্থিক সংকট হওয়ার পর থেকে বৈশ্বিক অর্থনীতি 'নতুন পর্যায়ে' প্রবেশ করে। সংরক্ষণবাদ ও একতরফাবাদ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। চলতি বছর কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাব বিশ্ব পরিস্থিতির বিশাল পরিবর্তন ঘটিয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ার দিকে যাচ্ছে এবং এতে আরও অস্থিতিশীলতা বেড়েছে। এভাবেই আন্তর্জাতিক লুপসংশ্লিষ্ট অর্থনীতি দুর্বল হচ্ছে। সরবরাহ চেইন এবং শিল্প চেইনের স্থিতিশীলতা সুনিশ্চিত করা হচ্ছে প্রধান অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর সম্মুখীন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চীনা অর্থনীতির প্রবলতা বেশি হলে , তা বৈশ্বিক অর্থনীতির স্থিতিশীল উন্নয়নে সহায়ক হবে।
অর্থনীতির সুষ্ঠু উন্নয়নের চূড়ান্ত ফল হচ্ছে জনগণের কল্যাণ বৃদ্ধি। চীনা জনগণের সুখী জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হচ্ছে চীনা সরকারের সংগ্রামের লক্ষ্য। চীনা দুগ্ধজাত পণ্যের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। বিগত ৪০ বছরে এর ভোগ ৪০ গুণ বেড়েছে। আরেকটি উদাহরণ, চীনা পর্যটন শিল্প। গত শতাব্দীর ৮০ ও ৯০ দশকে স্টার হোটেল শুধু চীনে বিদেশী পর্যটকদের জন্য সেবা দিত। আজকাল ক্রমবর্ধমান হারে চীনা পর্যটকরা ছুটিতে উঁচুমানের হোটেলে থাকছেন। চীনা জনগণের কেনাকাটার মান বেড়েছে, এর চাহিদাও বেড়েছে।
সুতরাং, চীনা অর্থনীতির নতুন উন্নয়ন বিশ্বের জন্য নিঃসন্দেহে একটি ভাল খবর। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)