এবারের চলচ্চিত্র উত্সবের উদ্যোক্তা বা মিউনিখ কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের জার্মান পক্ষের প্রধান কাও ফাং ফাং সাংবাদিকদের জানান যে, মহামারীর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছর চলচ্চিত্র উত্সবের প্রস্তুতিমূলক-কাজ অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছিল। একদিকে প্রথমবারের মতো অনলাইন প্লাটফর্মে প্রদর্শনের চেষ্টা করায় ডোমেস্টিক প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ইন্টারনেটে প্রদর্শনের অনুমোদন সংগ্রহ করতে হয়েছিল; অন্যদিকে স্থানীয় প্রতিরোধক নীতিমালার পরিবর্তন অনুযায়ী অফলাইনে প্রদর্শন ব্যবস্থার সংশ্লিষ্ট সুবিন্যাস করা হয়। তিনি বলেন, চলতি বছর প্রদর্শিত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে দুটি সংখ্যালঘু জাতির বৈশিষ্ট্যময় চলচ্চিত্র ছিল। এ দুটি চলচ্চিত্রের নাম হলো 'five golden flowers' এবং 'ashima'। তিনি বলেন, (নারী)
'চায়না ফিল্ম আর্কাইভ আমাদের এ দুটি চলচ্চিত্র দিয়েছে। কারণ, চীনের সংখ্যালঘু জাতি নিয়ে জার্মানির মানুষ খুব আগ্রহী। তাই আমরা মনে করি, চলতি বছর চীনের ইউননান প্রদেশের সংখ্যালঘু জাতির রীতিনীতি তুলে ধরার সুযোগ খুব বিরল। অনলাইনে একটি রিপোর্ট দাখিল করতে আমরা ইউননান মিনজু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছাই উই ইয়েনকে আমন্ত্রণ জানাই। রিপোর্টে পেশাগত দিক থেকে সানি জাতি ও পাই জাতির সংখ্যালঘু সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়। বলা যায়, এটিই হলো এবারের চলচ্চিত্র উত্সবের একটি আকর্ষণীয় বিষয়। জার্মান জনগণ সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে চীনের সংখ্যালঘু জাতির উন্নয়ন ও বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।'
এবারের চলচ্চিত্র উত্সব চীন ও জার্মান অতিথিদের ভিডিও প্রদর্শনের মাধ্যমে অনলাইনে উদ্বোধন করা হয়। মিউনিখ শহরের মেয়র এদিন তাঁর ভাষণে বলেন, এ শহরের গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক কার্যক্রম হিসেবে অষ্টম মিউনিখ চীনা চলচ্চিত্র উত্সব বর্তমান মহামারীর সময় অনলাইন ও অফলাইনে সমন্বিতভাবে বেশ কয়েকটি ভালো চলচ্চিত্র দেখিয়েছে; যা সত্যিই উত্সহব্যাঞ্জক। আরো বেশি মানুষে ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই উত্সবে অংশ নেবেন এবং চীনা চলচ্চিত্রের বৈচিত্র্য অনুভব করবেন।
মিউনিখ কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের চীন পক্ষের প্রধান লিও ইউ লু সিনহুয়া বার্তা সংস্থার সাংবাদিককে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, মিউনিখ চীনা চলচ্চিত্র উত্সব টানা মোট ৭ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এখন পর্যন্ত উত্সবে সর্বমোট ৮০টি চীনা চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। চলচ্চিত্র উপভোগকারীদের সংখ্যা আট হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
আগের মতো এবারের চলচ্চিত্র উত্সবে নতুন চলচ্চিত্র, ক্লাসিকাল চলচ্চিত্র এবং প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনসহ বেশ কয়েকটি অংশ ছিল। এতে 'Dwelling in the Fuchun Mountains', 'Balloon' এবং 'Legend Of The Demon Cat'সহ ৩০টি ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের চীনা ভাষার শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়। তা ছাড়া, চলচ্চিত্র উত্সব চলাকালে প্রদর্শিত চলচ্চিত্র-সম্পর্কিত সাংস্কৃতিক ফোরাম, যেমন অরিগামি, বাচ্চাদের জন্য চীনা ভাষা, থাইচি মুষ্টিযুদ্ধ এবং জাতীয় নাচসহ বিভিন্ন অনলাইন ক্লাসের আয়োজন করা হয়। লিও ইউন লু বলেন,
'আগের কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, চলচ্চিত্র উপভোগকারীদের সংখ্যা বছরের পর বছর ধরে বাড়ছে। মহামারীর সময় সংস্কৃতির প্রতি জনগণের চাহিদা আরো বেড়েছে। এটিই হলো নানা প্রতিবন্ধকতা পার হয়ে চলতি বছর চলচ্চিত্র উত্সব আয়োজনের গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। আমরা বরাবরই চলচ্চিত্রকে বিদেশি সংস্কৃতির সঙ্গে চীনের বিনিময়ের সেতু হিসেবে মনে করছি। যারা চীনা চলচ্চিত্র উপভোগ করেছেন তারা উত্সবের মাধ্যমে চীন, বিশেষ করে আধুনিক চীন সম্পর্কে জানতে পারেন। শুধু তাই নয়, চীনা সংস্কৃতির প্রতি তাদের আগ্রহ ও ভালোবাসাও সৃষ্টি হবে বলে আমি আশা করি।'
মিউনিখ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র টানা পাঁচ বছর ধরে চীনা চলচ্চিত্র উত্সব আয়োজনে সমর্থন জানিয়ে আসছে। এ কেন্দ্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা মার্গারেতা লিন্দনার বলেন, চলতি বছর জার্মানিতে লকডাউন ব্যবস্থার ফলে অনেক সাংস্কৃতিক সংস্থা কয়েক মাস ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী মিউনিখ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ধারাবাহিক চলচ্চিত্র অনুষ্ঠানও বাতিল করা হয়। জুলাই মাসের পর ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার শুরু হলেও ১৩০জন ধারণক্ষমতার প্রদর্শনী হলে প্রতিরোধের নীতি অনুযায়ী মাত্র ৩৫জন দর্শক বসতে পারত। চীনা চলচ্চিত্র ব্যক্তিদের উত্সবস্থলে দর্শকদের সঙ্গে বিনিময়ের ব্যবস্থা করা যায় নি। তবে নতুন সুযোগও বের হয়েছে। মার্গারেতা বলেন,
'অনলাইনে চীনা চলচ্চিত্র প্রদর্শন দর্শকদের সংখ্যা বাড়াতে সহায়ক হবে। বর্তমানে চীন অধিক থেকে অধিকতর মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। চীন প্রসঙ্গ জার্মান গণমাধ্যমেও প্রচারিত হয়। তবে চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে ভিন্ন রকম একটি চীন এবং চীনের সমাজের বিভিন্ন খাতের সর্বশেষ অবস্থা জানতে পারে জনগণ। তাই সবাইকে এমন একটি প্লাটফর্ম দিতে পেরে আমরা খুব খুশি হয়েছি।'
চলচ্চিত্র উত্সব উদ্বোধনস্থলে সংবাদদাতা একজন দর্শককে খুঁজে পান। তাঁর নাম তানিয়া সি.ক্রাইনহোফের। তিনি চলচ্চিত্র উত্সব নিয়ে গবেষণা করেন এবং দ্বিতীয়বারের মতো মিউনিখে চীনা চলচ্চিত্র উত্সবে অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন,
'আগে চীনা চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে আমার কোনও জ্ঞান ছিল না। গত বছর কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে কয়েকটি চীনা চলচ্চিত্র দেখার পর আমার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। চলতি বছরে আমি ২০১৯ ও ২০২০ সালের নতুন চলচ্চিত্রের নাম দেখেছি। আশা করি, গত বছরের মতো চলতি বছর চীনের সংস্কৃতি ও সামাজিক অবস্থা প্রসঙ্গে আমার জানাশোনা আরো গভীর হবে।'