চলুন বেড়িয়ে আসি: ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস
  2020-10-28 16:21:03  cri

পর্যটকদের কাছে ইউরোপের সবচেয়ে জনপ্রিয় শহর ফ্রান্স এর রাজধানী প্যারিস (Paris)। "অর্ধেক নগরী তুমি অর্ধেক কল্পনা" এই উক্তির যথার্থতা পাওয়া যায় শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ নগরী প্যারিস বা পারিতে। এই শহর প্রেমিক যুগলদের কাছে সিটি অফ লাভ বা রোমান্টিক শহর হিসেবেও পরিচিত। আইফেল টাওয়ার ছাড়াও পুরো শহর জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং জাদুঘর। প্রতি বছর প্রায় ১৪.৮ মিলিয়ন পর্যটকের গন্তব্যস্থল হিসেবে প্যারিস সবার শীর্ষে অবস্থান করছে।

প্যারিসের দর্শনীয় স্থান

প্যারিস ২০টি উপশহরে বিভক্ত। আর প্রতিটি উপশহরের রয়েছে বিশেষ নিজস্বতা। বিভিন্ন উপশহরের পর্যটন স্থানগুলো ঘুরে দেখতে পারেন। পায়ে হেঁটে পুরো প্যারিস শহর ঘুরলে অনেক কিছুই দেখতে পারবেন। প্যারিসের প্রতিটি স্থাপত্য পর্যটকদের নজর এড়ায় না।

আইফেল টাওয়ার (Eiffel Tower) : বিশ্বের উল্লেখযোগ্য পর্যটন আকর্ষণের মধ্যে ১,০০০ ফিট উচ্চতার আইফেল টাওয়ার অন্যতম। গুস্তাভে আইফেল নির্মিত এই স্থাপনাটি ১৮৮৯ সালে প্যারিসের বিশ্ব এক্সপোজিশনের প্রধান প্রদর্শনী ছিল। এটি মূলত ফরাসি বিপ্লবের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে বিশ্বের কাছে ফ্রান্সের শিল্প- বীরত্ব প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে বর্তমানে "ভালোবাসার প্রতীক" হিসেবে আইফেল টাওয়ার পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণে পরিনত হয়েছে।

আইফেল টাওয়ারে দিন ও রাতের বেলা আলাদা আলাদা সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হতে হয়। একপাশে সবুজের সমাহার আর অপর দিকে প্যালেস ও ঝর্ণার দেখা মিলবে। একজন গাইডের মাধ্যমে লিফটে চড়ে টাওয়ারের ৫৭ মিটার উঁচুতে অবস্থিত প্রথম তালা, ১১৫ মিটার উচ্চতায় দ্বিতীয় তালা এবং ২৭৬ মিটারে অবস্থিত টপ ফ্লোরে যেতে পারবেন। টাওয়ারের লেভেল ২ থেকে প্যারিস শহরের চমৎকার দৃশ্য সারাজীবন মনে রাখার মতো। পুরো টাওয়ার ঘুরে দেখার জন্য ১ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১ টা পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় ৫ মিনিটের জন্য টাওয়ারে স্পার্কিং লাইটিং করা হয় তখন আইফেল টাওয়ারকে দূর থেকে দেখতে সবচেয়ে বেশী সুন্দর লাগে। টাওয়ারের বিভিন্ন তালায় যাওয়ার জন্য বয়স ভেদে এন্ট্রি ফি ৪-১৭ ইউরো পর্যন্ত হয়ে থাকে।

লুভ মিউজিয়াম (Louvre Museum) : বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে উঠা বিশ্বের বৃহত্তম এই জাদুঘরটি প্যারিস শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত। প্রায় ১৪ কিলোমিটার বিস্তৃত গ্যালারিতে ১৫ শতাব্দী থেকে ১৯ শতাব্দীর বিশ্বের বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের প্রায় ৩০,০০০ শিল্প প্রদর্শনী করে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে মোনালিসা, ভেনাস দা মিলো, উইংন্ড ভিক্টোরি, ডাইং স্লেভ, লামাসসুস, ভিক্টরি অফ সামট্রেস, ওয়েডিং ফিস্ট এট কানা, লিবার্টি লিডিং দা পিপল উল্লেখযোগ্য। এই জাদুঘরটি এতটাই বড় যে সমগ্র জাদুঘর ঘুরে দেখতে অন্তত দুই দিন সময় লাগে।

ক্যাথেড্রাল নটরডেম ডি প্যারিস (Cathedral Notredame) : Île de la Cité দ্বীপের মাঝে অবস্থিত গোথিক ধাঁচের স্থাপত্য নিদর্শনটি পর্যটকদের কাছে আরেকটি বিশেষ আকর্ষণ। ১১৬৩ সাল থেকে চতুর্থ রাজা লুইস ও বিশপ মরিস ডি সুলির নেতৃত্বে ক্যাথেড্রাল নির্মাণ করতে প্রায় ১৫০ বছর সময় লেগেছিল। এখানে ফ্রান্সের রাজারা বসবাস করতো। পর্যটকরা এই গির্জার বাইরের দিকের অলংকৃত ডিজাইন, ভাস্কর্য ও গ্যালারি অফ কিংসের দরজায় ২১ টি চিত্র দেখতে পছন্দ করে। তবে ২০১৯ সালের এপ্রিল আগুন লাগার কারণে এই গির্জার ইন্টেরিয়র পর্যটকদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।

মন্টমারট্রে (Montmartre) : প্যারিসের উত্তরে অবস্থিত মন্টমারট্রে পাহাড়ের সাদা রাজপ্রাসাদ ও আশেপাশের চমৎকার দৃশ্য মুগ্ধ করার মতো। অনেক চিত্রশিল্পী এখানে এসে অনুপ্রেরণা লাভ করেন। এছাড়া এখানে বিভিন্ন আর্টওয়ার্ক দেখার সুযোগ হবে।

আর্চ ডি ট্রায়োম্ফে (Arch De Triomphe) : ১৮০৬ সালে নেপলিয়ান বেনাপোর্টের যুদ্ধ বিজয়ের স্মৃতির স্মরণে নির্মিত আর্চ ডি ট্রায়োম্ফে প্যারিসের বিখ্যাত স্মৃতিস্তম্ভগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৬৪ ফিট উচ্চতা ও ১৪৮ ফিট প্রশস্তের স্মৃতিস্তম্ভে সম্রাটের পক্ষে যুদ্ধে জয়ী যোদ্ধাদের নাম রয়েছে। আর এই তোরণের নিচে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের নিহত সৈনিকদের সমাধি আছে।

ল্যাটিন কোয়ার্টার (Latin Quarter) : সিন নদীর বাম তীরে অবস্থিত ল্যাটিন কোয়ার্টারে সবসময় এক প্রাণবন্ত পরিবেশ খুঁজে পাওয়া যায়। লুক্সেমবার্গ পার্ক হিসেবে পরিচিত এই স্থানে রয়েছে আপেল ও অর্কিডের সুবিশাল বাগান, ১০৬ টি স্ট্যাচু ও তিনটি সুন্দর ঝর্ণা। বেশকিছু ক্যাফে আর বারের জন্য তরুণদের কাছে রাতের বেলায় এই জায়গাটি বেশ জনপ্রিয়।

মিউজিয়াম ডি ওরসে (Museum D'orsay) : প্যারিসের এই জাদুঘরে পুরাতন বিভিন্ন শিল্পের সেরা সংগ্রহ ও ভাস্কর্য দেখার সুযোগ হবে। এখানে দিনের শুরুতেই যাওয়া ভালো কারণ বেলা বাড়ার সাতে সাথে এখানে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ে।

দা প্যালেস অফ ভার্সাই (The Palace of Versailles) : জনপ্রিয় এই ক্যাসেলটি ১৭ শতাব্দীতে ফ্রান্সের মিলিটারি শক্তির প্রতীক হিসেবে নির্মাণ করা হয়। ২,৩০০ কক্ষ বিশিষ্ট প্যালেসের বিভিন্ন হলে ফ্রেঞ্চ আর্ট, রানীর ব্যাক্তিগত কক্ষ ও রেনেসা যুগের অনেক নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়। গ্রীষ্মের সময় এখানে বাগান ও মিউজিক্যাল ঝর্ণার পাশে ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে। পর্যটকদেরকে প্যালেসে ঘুরে বেড়াতে ২০ ইউরো ও বাগানসহ প্যালেস ঘুরে বেড়াতে ২৭ ইউরো খরচ করতে হবে।

এছাড়া যেতে পারেন Sainte Chapalle (এখানে বিভিন্ন মিউজিক্যাল কনসার্টের আয়োজন করা হয়), Disneyland Paris (প্যারিস থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে বাচ্চাদের পছন্দের ডিজনিল্যান্ড যেখানে দুটি থিম পার্ক আছে), Evenue Des Champs-Elysees (এখানে পার্ক, আর্ট মিউজিয়ামসহ অসংখ্য বিলাসবহুল শপ, হোটেল, ক্যাফে ও থিয়েটারের দেখা মিলবে), Palais Garnier এর মতো জায়গায়।

প্যারিসে কিভাবে যাবেন

প্যারিসে যাওয়ার ক্ষেত্রে সেনজেন ভিসার প্রয়োজন। অতীতের ট্র্যাভেল হিস্টরি, ব্যাংক-ব্যালেন্স ইত্যাদি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক থাকলে এক সপ্তাহের মধ্যে সেনজেন ভিসা পাওয়া যায়। যেদেশের এমব্যাসি থেকে সেঞ্জেন ভিসা নিবেন প্যারিস যাওয়ার ক্ষেত্রে সেই দেশে নেমে তারপর অন্য ফ্লাইটে প্যারিস যেতে হয়। এক্ষেত্রে ঢাকা থেকে ইটালি, স্পেন, জার্মানি বা ফ্রান্সে (Fran) এসে তারপর প্যারিস যেতে পারেন। প্যারিস যাওয়ার একটি সহজ রুট হচ্ছে ঢাকা থেকে কাতার, টার্কিশ বা এমিরাটস এয়ারলাইন্সে জার্মানির বার্লিন বা মিউনিখ হয়ে প্যারিস যাওয়া। বার্লিন বা মিউনিখ থেকে মেট্রোরেল বা ফিক্সবাসে প্যারিসে যেতে পারবেন।

কোথায় কি কিনবেন

শপিং প্রেমীদের জন্য প্যারিস স্বর্গরাজ্য। প্যারিসের এরোভিল মল, মারাইস, গ্র্যান্ড আর্চ ডি লা ডিফেন্স, কোয়ার্টে টেম্পস থেকে বিভিন্ন ফ্যাশানেবল ড্রেস, ইলেক্ট্রনিকস জিনিস, সুভেনিয়র ও অন্যান্য অনেক জিনিস কিনতে পারবেন।

প্যারিসে ভ্রমণ পরামর্শ

• এপ্রিল থেকে জুন ও অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস প্যারিসে যাওয়ার ভালো সময়। আর পিক সিজন হিসেবে গ্রীষ্মকাল এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।

• সেনজেন ভিসা পাওয়ার আগে প্লেনের টিকেট কাটবেন না।

• প্যারিসে ঘোরার জন্য পাবলিক ট্রান্সপোর্ট (মেট্রো রেল বা বাস) ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো। তাই কয়েকদিনের জন্য মেট্রো পাস নিয়ে নিন।

• প্যারিসে ঘোরার ক্ষেত্রে ৫-৬ দিনের ট্রিপ নিয়ে যাওয়া ভালো তাহলে বিভিন্ন জায়গা ভালভাবে ঘুরতে পারবেন।

• প্যারিসের জাদুঘর ও পর্যটন স্পটগুলোতে প্রায় সবসময় ভিড় থাকে তাই ঝামেলা এড়াতে অনলাইনে টিকেট কাটার চেষ্টা করুন।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040