বিদ্যাবার্তা ১০২৬
  2020-10-26 16:56:14  cri

 


আ: বন্ধুরা, আপনারা যদি নিয়মিতভাবে আমাদের অনুষ্ঠান শুনেন, তাহলে অবশ্যই জানেন যে, এখন চীনের শিক্ষার অবকাঠামো ব্যাপক উন্নত হয়েছে, গ্রামাঞ্চলের স্কুলের জন্যও অনেক নতুন ভবন নির্মিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আধুনিক ক্লাসরুমে পড়াশোনা করতে পারছে।

সু: তবে সম্প্রতি চীনের হাংচৌ শহরের একটি স্কুলে বিদ্যুত্ সরবরাহ্ হঠাত্ বন্ধ হয়ে যায়। স্কুলে বিদ্যুত্ না-থাকায় ক্লাসরুমগুলোতে লেখাপড়ায় ব্যঘাত ঘটে। আজকের বিদ্যাবার্তায় আমরা শুরুতে হাংচৌ শহরের এ স্কুলের বিদ্যুত্ বন্ধ হওয়ার পরের কিছু ঘটনা শেয়ার করবো।

অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ের ঘটনা। এদিন হাংচৌ শহরের বাওশুথা স্কুলে আকস্মিকভাবে বিদ্যুত্ সরবরাহ্ বন্ধ হয়ে যায়। সেদিন রোদ ছিল না, তাই উত্তর দিকে বা নিচের তলায় ক্লাসরুমগুলো খানিকটা অন্ধকারও ছিল। এ আকস্মিক ঘটনায় শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে প্রাঙ্গণে চলে যান এবং স্কুলের চত্বরে বসে ক্লাস শুরু নেওয়া শুরু করেন। তখন স্কুলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ম্যাডাম চাং হুং সিয়া ছাত্রছাত্রীদের ছবি তোলেন। ছবিতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা গোলাকার চত্বরে বসে আছে; তাদের হাতে পাঠ্যপুস্তক; সবাই মনোযোগ দিয়ে শিক্ষকের কথা শুনছে। চত্বরে মোট ৪টি ক্লাস বসেছিল। তিনটি ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা প্রাথমিক স্কুলের প্রথম শ্রেণীর এবং আরেকটি ক্লাস মাধ্যমিক স্কুলের প্রথম শ্রেণীর।

আ. ছবি সম্পর্কে ম্যাডাম চাং বলেন, এদিন সকাল ৮টার দিকে স্কুলে আকস্মিকভাবে বিদ্যুত্ চলে যায়। তখন কয়েকটি শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা চত্বরে শরীরচর্চা করছিল। বিদ্যুত্ বন্ধ হওয়ার পর ভবনের নিচ তলার ক্লাসরুমগুলো অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। বিশেষ করে প্রথম তলার ক্লাসরুম। তখন বাচ্চাদের চোখ রক্ষায় শিক্ষকরা ক্লাসরুমের বাইরের চত্বরে ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। পরে সেসব ক্লাসের শিক্ষার্থীরা অনেকটা সময় চত্বরে পড়াশোনা করে।

সু: ম্যাডাম চাং বলেন, 'সবাই মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করেছে, যা খুবই ভালো। আমিও পাশে দাঁড়িয়ে তাদের ক্লাস নেওয়া দেখেছি ও শুনেছি।' বিদ্যুত্ বন্ধ হওয়ার কারণে স্কুলের কান্টিনের কাজও সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। বাওশুথা স্কুলে ৯ শ্রেণীর শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। তাই স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০০০ জনেরও বেশি। তা ছাড়া, শিক্ষক ও কর্মীদের সংখ্যাও ২০০ জনের বেশি। বিদ্যুত চলে যাওয়ায় লাঞ্চ তৈরির সমস্যা সমাধানে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করে স্কুলের কর্তৃপক্ষ। অনলাইনে বিভিন্ন দোকানে মোট ৪০০০টিরও বেশি বান বুকিং দেওয়া হয়। দুপুর ১২টার পরে শহরের বিভিন্ন রেস্তোরাঁ থেকে ৪০০০টিরও বেশি বান পাওয়া যায়। স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা প্রত্যেকে একটি করে বান ভাগে পান। শিক্ষকরাও অফিস থেকে নিজেদের বিস্কুট ও চকলেট নিয়ে আসেন। তবে বিদ্যুত্ব্যবস্থার মেরামতকাজ পরিকল্পনার চেয়ে পিছিয়ে যায়। শুধু বান খাওয়া যথেষ্ঠ নয়; আবার লাঞ্চ তৈরি করাও সম্ভব নয়। তখন স্কুলের শিক্ষকরা দ্বিতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তাঁরা শিক্ষার্থীদের পিতামাতাদের সাথে যোগাযোগ করেন। পিতামাতারাও খাবার কিনে বা তৈরি করে স্কুলে পাঠিয়ে দেন। পাউরুটি, পিজা ও নুডলস—অল্প সময়ের মধ্যে বুফে লাঞ্চের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এ বিশেষ ঘটনার কারণে সবাই বিশেষ ধরনের লাঞ্চ খাওয়ার সুযোগ পায়। সবাই ভাল করে খেতে পায়। কোনো খাবার নষ্ট করা হয়নি। এ সময় শিক্ষকরাও 'খাবার সাশ্রয় করা' নিয়ে কথা বলেন।

আ: সবাই বুঝতে পারে যে, নিয়মিত পর্যাপ্ত খাবার খেতে পাওয়া আসলে ভাগ্যের ব্যাপার। একটি বানের জন্য হলেও অনেকের প্রচেষ্টা ও অবদান প্রয়োজন এ সম্পর্কে স্কুলের ভাইস প্রেসিডেন্ট জু হান বলেন, এমন আকস্মিক ঘটনায় পরে খুবই কম সময়ের মধ্যে সবাই যৌথভাবে সমস্যার সমাধান করেছে, যা বাচ্চা ও শিক্ষকদের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতা। সেইদিন রাত ১১টা পর্যন্ত বিদ্যুত্ সরবরাহ্-ব্যবস্থার মেরামতকাজ চলে।

গ্রামাঞ্চলের ক্লিনিকের নতুন যুবক ডাক্তারের গল্প

সু: চীনের হুপেই প্রদেশের ইছাং শহরের থুচিয়া জাতিঅধ্যুষিত জেলার বাইনিয়ানকুয়ান গ্রাম প্রাচীনকাল থেকে চরম দরিদ্র। এ গ্রামের ক্লিনিক দুটি শত বছর বয়সী গাছের নিচে অবস্থিত। গাছের নিচে নির্মিত দুই তলার ক্লিনিকভবনে দু'জন ডাক্তার রয়েছেন। তাঁরা স্থানীয় গ্রামবাসীদের স্বাস্থ্য রক্ষার কাজে নিয়োজিত। ৫০ বছরের কর্ম-অভিজ্ঞতার প্রবীণ ডাক্তার ফেই কুয়াং সিন এবং ২৩ বছর বয়সের মেয়ে ডাক্তার ইয়াং হাই ইয়ান।

আ: একদিন ৭০ বছর বয়সী ডাক্তার ফেই রোগী দেখছিলেন এবং সংবাদদাতাদের প্রশ্নের উত্তরও দিচ্ছিলেন। ডাক্তার ফেই বেসরকারি শিক্ষক ছিলেন। তখন গ্রামাঞ্চলের চিকিত্সা ব্যবস্থার দুর্বলতা দেখে তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে ডাক্তারে পরিণত হন। ৩ মাসের প্রশিক্ষণের পর তিনি একজন পল্লীচিকিত্সক হিসেবে স্বীকৃতি পান। তবে অনেক রোগের চিকিত্সা নেই। প্রাচীনকাল থেকে চীনের গ্রামাঞ্চলে একটি প্রবাদ প্রচলিত: 'শরীর অসুস্থ হলে এক বছরের আয় ব্যয় করতে হবে।' সে জন্য স্থানীয় গ্রামবাসীরা রোগে আক্রান্ত হওয়াকে ভয় পায় এবং হাল্কা অসুখ হলে কখনো হাসপাতালে যায় না। পরে অনেকের হাল্কা রোগ গুরুতর হয়। গ্রামাঞ্চলের চরম দরিদ্র অবস্থার কারণে ডাক্তার ফেই পাহাড় থেকে ভেষজ ওষুধ খুঁজে নিয়ে গ্রামবাসীদের চিকিত্সা দেন।

সু: তিনি জানেন চিকিত্সার দক্ষতা না-থাকলে তিনি গ্রামবাসীদের চিকিত্সা ও সাহায্য দিতে পারবেন না। সেই জন্য ইছাং শহরে আরও ৫ বছর চিকিত্সা বিষয় নিয়ে লেখাপড়া করেন। তিনি ভেষজ চিকিত্সক হিসেবে অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করেন এবং মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়ায় তাঁর চিকিত্সা-দক্ষতা দ্রুত উন্নত হয়। একসময় তিনি গ্রামে ফিরে আসেন। গ্রামবাসীরাও তাঁর কাছে আসা শুরু করে। তিনিও নিয়মিতভাবে গ্রামবাসীদের বাড়িতে গিয়ে অসুস্থ রোগীদের চিকিত্সা দিতে থাকেন। ২০০৮ সালে তিনি কিউকিউ নামের গাড়ি কেনেন। তখন থেকে গাড়ি চালিয়ে দূরবর্তী এলাকার গ্রামাবাসীদের বাড়িতেও যেতে শুরু করেন।

আ: গ্রামের একজন দরিদ্র মহিলার নাম ইয়ান ওয়ান মেই, যিনি বহু বছর আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপের রোগী। নিয়মত ওষুধ খেতে হয় তাকে। ডাক্তার ফেই'র সাহায্যে এখন তাঁর রক্তচাপ স্থিতিশীল হয়েছে। গত বছর একদিন জরায়ু ক্যান্সারের অপারেশনের পর ম্যাডাম ইয়ান হঠাত্ পেটে ব্যথা অনুভব করেন। তখন তিনি ডাক্তার ফেইকে ফোন করে সাহায্য চান। ডাক্তার ফেই নিজের গাড়ি চালিয়ে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এবার অপারেশনের পর তাঁর শরীর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে। এ অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ম্যাডাম ইয়ান বলেন, ডাক্তার ফেই না থাকলে তিনি আর বাঁচতেন না। কারণ, তখন তার অন্ত্রে ছিদ্র হয়ে গেছে; সময়মতো চিকিত্সা না-হলে তিনি মারা যেতেন।

সু: গত ৫০ বছর ধরে তিনি গ্রামের বিভিন্ন পরিবারের রোগীদের চিকিত্সাসেবা দিয়ে এসেছেন। কোন পরিবারের বাচ্চাকে টিকা নিতে হবে, কোন পরিবারে নতুন বাচ্চার জন্ম হবে—সব খবর তিনি রাখেন। এখন সরকারের চিকিত্সাবীমা ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। গ্রামবাসীরা নিজেদের মেডিকেল বীমা থাকায় সহজে হাসপাতালে যেতে সক্ষম। গ্রামের ক্লিনিকেও বিভিন্ন চেকআপ যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম স্থাপিত হয়েছে। সেটিও খুবই আশাব্যাঞ্জক ব্যাপার। তবে ৭০ বছর বয়সের ডাক্তার ফেই'র জন্য আরেকটি উদ্বেগের ব্যাপার হলো: তিনি অবসর নিলে কে ক্লিনিকের দায়িত্ব নেবে! পরে মেয়ে ইয়াং হাই ইয়ান তাঁর ছাত্রী হিসেবে এ দায়িত্ব গ্রহণ করে। কারণ, ২০১৪ সাল থেকে হুপেই প্রদেশের ইছাং শহরে স্নাতক ছাত্রছাত্রীদের চিকিত্সক প্রশিক্ষণ প্রকল্প চালু হয়। তখন থেকে সরকারি ভর্তুকির মাধ্যমে বিনা খরচে গ্রামাঞ্চলের জন্য চিকিত্সক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যারা এ প্রকল্পে অংশ নেয়, তাদেরকে স্নাতক হওয়ার পর স্থানীয় ক্লিনিকে কমপক্ষে ৫ বছর কাজ করতে হয়। এটাই নিয়ম। এভাবেই মেয়ে ইয়াং হাই ইয়ান বাইনিয়ানকুয়ান গ্রামের ক্লিনিকে চলে আসেন।

আ: ডাক্তার ফেই'র মতো মেয়ে ইয়াংও একটি মোটরগাড়ি কিনেছেন। গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় রোগীদের সাথে দ্রুত দেখা করতে পারেন তিনি। ২০১৯ সাল থেকে তিনি নিয়মিত গ্রামের প্রবীণদের বাড়িতে যান, তাদের রক্তচাপ ও রক্তের চিনির পরিমাণ মাপেন। গ্রামবাসী জু হুং জু'র বয়স ৭৬ বছর। তিনি ডায়াবেটিক ও উচ্চ রক্তচাপের রোগী। তাঁর দু'টি ছেলে অন্য শহরে চাকরি করেন। তাঁর বাড়ি দূরবর্তী এলাকায় অবস্থিত। যাতায়াতের অসুবিধার কারণে দীর্ঘকাল ধরে তিনি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাননি। মেয়ে ইয়াং এখন নিয়মিত ম্যাডাম জু'র স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন।

সু: মেয়ে ইয়াং আসার পর ডাক্তার ফেই অনেক খুশি। কারণ, তিনি তার চিকিত্সার অভিজ্ঞতা এই মেয়ে ডাক্তারটিকে শিখিয়ে যেতে পারবেন। গ্রামবাসীরা অসুস্থ হলে চিকিত্সা পাবে, তিনি না-থাকলেও। তিনি তরুণী ডাক্তার ইয়াংকে নিয়ে গ্রামবাসীদের বাড়িতে যান, বিভিন্ন পরিবারের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন এবং তাকে ভেষজ ওষুধ দিয়ে চিকিত্সার পদ্ধতি বুঝিয়ে দেন। ইয়াং প্রত্যেক পরিবারের জন্য অনলাইন ফাইল তৈরি করেন। এভাবে সহজে গ্রামবাসীদের ডেটা পেতে পারেন তিনি। তিনি গ্রামবাসীদের স্বাস্থ্য রক্ষার নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছেন।

আ: ইছাং শহরের 'একটি গ্রামে একজন চিকিত্সক' পরিকল্পনার আওতায় এ পর্যন্ত মোট ১২৭৫ জন প্রশিক্ষণ নিয়েছে এবং তাদের মধ্যে ৭৭৯ জন স্নাতক হয়ে গ্রামে গেছেন। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে এতদঞ্চলের ১৩৯২টি গ্রামের সবকটিতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ডাক্তার থাকবেন। তখন গ্রামবাসীদের স্বাস্থ্যও ভালভাবে রক্ষা করা যাবে। মেয়ে ডাক্তার ইয়াং বলেন, '৫ বছর পরও আমি এ গ্রামে থাকতে চাই। আমার শিক্ষকের মতো গ্রামবাসীদের সেবা করতে চাই। আমি এখানে আরও বেশি যুব চিকিত্সককে স্বাগত জানাই।'

সুপ্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়, আজকের বিদ্যাবার্তা অনুষ্ঠানের সময় শেষ হয়ে এলো। সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারেন বা মিস করেন, আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali.cri.cn,আমাদের যোগাযোগ ইমেল ঠিকানাben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn

তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে একই সময় একই দিনে আবার কথা হবে। যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040