চীনের উদ্যোগ : রোহিঙ্গা ইস্যুতে গতি সঞ্চারের প্রত্যাশা
  2020-10-25 19:17:24  cri

করোনা পরিস্থিতিসহ নানা কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাশনের বিষয়টি চাপা পড়ে গিয়েছিল। এ বিষয়ে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতায় বিভিন্ন আন্তার্জাতিক ফোরামে ফের আলোচনায় আসে বিষয়টি। সবশেষ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ২২ অক্টোবর এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। চীন সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে নানা উদ্যোগের কথা জানান তিনি। এতে করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে গতি সঞ্চারের আশা তৈরি হয়েছে।

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানান, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমার ফেরত নেবে- এই মর্মে সম্প্রতি মিয়ানমার চীনকে আবারো আশ্বস্ত করেছে। রোহিঙ্গা ইস্যু চীন মিয়ানমারের সঙ্গে সব সময় বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে বলে জানানা তিনি। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর লক্ষ্যে মিয়ানমার কাজ শুরু করবে বলেও পেইচিংকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্রুত আলোচনা শুরু করার কথাও জানিয়েছে মিয়ানমার।

এরই মধ্যে চীনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন ওয়াং ই। মিয়ানমারের নির্বাচনের পর চীন ত্রিপক্ষীয় এ বৈঠকের আয়োজন করবে বলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন তিনি। এ বিষয়ে ঢাকায় সিনিয়র কর্মকর্তাদের প্রস্তুতিমূলক বৈঠকের ওপরও জোর দেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন সবসময় বড় ভূমিকা রেখেএসেছে। সবশেষ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্যোগে বিষয়টি নতুন গতি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে, গেল সপ্তাহে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আরো একটি ভালো খবর হচ্ছে রোহিঙ্গাদের জন্য ৬০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দাতাদেশগুলো। ২২ অক্টোবর আন্তর্জাতিক ভার্চুয়াল দাতা সম্মেলনে এ ঘোষণা আসে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা –ইউএনএইচসিআর যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র ২০ কোটি ডলার দেয়ার ঘোষণা দেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেবে ১১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। যুক্তরাষ্ট্র ৬ কোটি ডলার। ২০২০ সালে রোহিঙ্গাদের জন্য ১০০ কোটি ডলার তহবিল যোগাড়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছিল জাতিসংঘ। কিন্তু তার অর্ধেকটা মাত্র প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেল।

সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশের পক্ষে রোহিঙ্গাদের ভার আর বহন করা সম্ভব নয়। দাতাদের কাছ থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা না আসায় হতাশা ব্যক্ত করেন তিনি। বলেন, সাহায্যের চেয়েও বড় বিষয় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে। আর ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের বিষয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনা নাকচ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ যো কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার রাখে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে যাওয়া ইঙ্গিত দিয়েছেন। ২৪ অক্টোবর জাতিসংঘ দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বসংস্থাকে আরো জোরালো ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাস ও সহায়তার বাইরে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার বিষয়েও অগ্রগতি হয়েছে গেল সপ্তাহে। ২৩ অক্টোবর আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার পূর্ণাঙ্গ আবেদন জমা দিয়েছে গাম্বিয়া। ৫০০ পৃষ্ঠার আবেদনের সঙ্গে ৫ হাজার পৃষ্ঠার তথ্য-প্রমাণও জমা দেয়া হয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে নেদারল্যান্ডের হেগে আইসিজেতে মামলাটি করেছিল গাম্বিয়া। প্রাথমিক শুনানির পর আদালত রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা রোধে ব্যবস্থা নিতে আদেশ জারি করে। রাখাইনে গণহত্যার কিছু প্রমাণ পাওয়ায় মামলাটি চালিয়ে যেতে রাজি হয় আদালত। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গাম্বিয়া পূর্ণাঙ্গ এ আবেদন করলো আইসিজেতে।

রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার প্রশ্নে আরেকটি অগ্রগতি হলো- গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার সমর্থনে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কানাডা ও নেদারল্যান্ড। গত ২০ অক্টোবর নেদারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টেফ ব্লক এক চিঠিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এ বিষয়ে জানান। চিঠিতে নেদারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইসিজের মাধ্যমে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নৃশংসতার জন্য মিয়ানমারের বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

বেশ কিছুটা সময় রোহিঙ্গা ইস্যুটি চাপা পড়ে যাওয়ার পর পুনরায় এ বিষয়ে যে গতি সঞ্চার হয়েছে তা ধরে রাখতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক উদ্যোগ জোরালো করা প্রয়োজন বলে মনে করে সংশ্লিষ্ট মহল।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040