অক্টোবর ২৩: শুক্রবার মার্কিন আগ্রাসন প্রতিরোধে উত্তর কোরিয়াকে সাহায্য দানকারী স্বেচ্ছাসেবী সেনা পাঠানোর ৭০তম বার্ষিকীর স্মরণ সম্মেলন বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিপিসি'র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক, দেশের প্রেসিডেন্ট ও কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান সি চিন পিং সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, মার্কিন আগ্রাসন প্রতিরোধে উত্তর কোরিয়াকে সহযোগিতা করার কঠিন সময় এবং মহান বিজয়কে মনে রাখতে হবে, সংগ্রামের সাহস ও সক্ষমতা ধারণ করতে হবে এবং নতুন যুগের চীনা বৈশিষ্ট্যময় সমাজতন্ত্রকে অব্যহতভাবে সমানের দিকে এগিয়ে নিতে হবে।
শুক্রবার সকালে, জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে মার্কিন আগ্রাসন প্রতিরোধে উত্তর কোরিয়াকে সাহায্য দানকারী স্বেচ্ছাসেবী সেনা পাঠানোর ৭০তম বার্ষিকীর স্মরণ সম্মেলন বেইজিংয়ের মহা-গণভবনে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের শুরুতে, সিপিসি ও দেশের নেতৃবৃন্দ, স্বেচ্ছাসেবী সেনাসদস্য ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতিনিধিরা এবং রাজধানী বেইজিংয়ের বিভিন্ন মহলের প্রতিনিধিরা ওই যুদ্ধের শহীদদের প্রতি শোক প্রকাশ করেন।
সম্মেলনে প্রবীণ প্রজন্মের বিপ্লবী, চীনের স্বেচ্ছাসেবী সেনা এবং মার্কিন আগ্রাসন প্রতিরোধে উত্তর কোরিয়াকে সহায়তা দেওয়া যুদ্ধে শহীদ সেনাদেরকে গভীরভাবে স্মরণ করেন সি চিন পিং। তিনি বলেন, "৭০ বছর আগে মার্কিন আগ্রাসন প্রতিরোধে উত্তর কোরিয়ায় পাঠানো স্বেচ্ছাসেবী সেনা ও শহীদদের কথা আমরা ভুলি নি। এক লাখ ৯৭ হাজারেরও বেশি বীর মাতৃভূমি, জনগণ ও শান্তির জন্য অমূল্য জীবন উত্সর্গ করেছেন। আমরা শহীদদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ থাকব।"
সি চিন পিং জানান, মার্কিন আগ্রাসন প্রতিরোধে উত্তর কোরিয়াকে সাহায্য দেওয়া যুদ্ধের মহান বিজয় হচ্ছে চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। তিনি বলেন, "এ যুদ্ধে চীনা জনগণ আগ্রাসনকারীদের পরাজিত করার মাধ্যমে নয়াচীনকে শৈশব অবস্থায় ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করেছে। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে নয়া চীনে আগ্রাসনের সাহস সাম্রাজ্যবাদের আর নেই। এ যুদ্ধের মাধ্যমে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এতে আগ্রাসী শক্তিকে ভয় না-পাওয়া চীনা জনগণের লৌহ-কঠিন ইচ্ছাশক্তি প্রতিফলিত হয়েছে!"
সি চিন পিং বলেন, "৭০ বছর আগে, চীনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালানোর হুমকি দেওয়া হয়। চীনা জনগণ আগ্রাসনকারীদের প্রতিহত করতে জানে। চীন যুদ্ধ করে যুদ্ধ বন্ধ করেছে, বিজয়ের মাধ্যমে শান্তি ও সম্মান অর্জন করেছে। যে কোনো কঠিনতা বা ঝুঁকির সামনে, চীনা জাতি ভয় পায় না!"
সি চিন পিং জানান, মার্কিন আগ্রাসন প্রতিরোধে উত্তর কোরিয়াকে সাহায্য দেওয়া যুদ্ধের কঠোর প্রক্রিয়া ও মহান বিজয়ের কথা মনে রাখতে হবে, নতুন যুগে চীনা বৈশিষ্ট্যময় সমাজতন্ত্র সমানের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। সিপিসি'র নেতৃত্ব বজায় রাখতে হবে, জনগণকে কেন্দ্রীয় স্থানে রাখতে হবে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এগিয়ে নিতে হবে, প্রতিরক্ষা ও সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন এগিয়ে নিতে হবে ও মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কামিউনিটি গঠন করতে হবে। তিনি বলেন, "পিছিয়ে পড়লে আঘাত সহ্য করতে হয়, কেবলমাত্র উন্নত হলেই আত্মনির্ভরশীল হওয়া যায়। নয়াচীন প্রতিষ্ঠার ৭০ বছরের বেশি সময়ে, কয়েক ডজন বছরে আমরা উন্নত দেশগুলোর কয়েকশ' বছরের উন্নয়নের প্রক্রিয়া শেষ করেছি। আমরা অসাধারণ উন্নয়নের বিস্ময় সৃষ্টি করেছি। বর্তমানে আমাদের দেশ নতুন উন্নয়নের পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। নতুন সুযোগ ও চ্যালেঞ্জের সমানে যদি আমরা দৃঢ়ভাবে নতুন উন্নয়নের ধারণা লালন করি, নতুন উন্নয়নের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করি, তাহলে আরো উচ্চ গুণগত মানের, আরো কার্যকর, আরও টেকসই, আরও নিরাপত্তাজনক উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে পারব। আমরা আরও বড় বিস্ময় তৈরি করব।"
তিনি জানান, বর্তমান বিশ্বে একতরফাবাদ, সংরক্ষণবাদ ও আধিপত্যবাদ সফল হবে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, "চীন বরাবরই প্রতিরক্ষামূলক নীতি পালন করে আসছে। চীনের গণ-মুক্তিফৌজ সবসময় বিশ্বশান্তি রক্ষার দৃঢ় শক্তি। চীন কখনওই আধিপত্যবাদী আচরণ করবে না, চীন দৃঢ়ভাবে আধিপত্যবাদী ও শক্তির রাজনীতির বিরোধিতা করে। আমরা দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা, উন্নয়নের স্বার্থ রক্ষা করব। কোনো ব্যক্তি, কোনো শক্তি পবিত্র মাতৃভূমিতে আগ্রাসন ও একে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।"