নাগার্নো-কারাবাখ সংঘাত; চলছে শক্তির খেলা
  2020-10-23 14:54:45  cri

বিশ্বব্যাপী চলছে করোনাভাইরাসের মহামারি ও মৃত্যুর মিছিল। এ অবস্থাতেও থেমে নেই যুদ্ধ-সংঘাত। এ মুহূর্তে বৈশ্বিক যুদ্ধ পরিস্থিতিতে উল্লেখ্যযোগ্য একটি নাম নাগার্নো-কারাবাখ নিয়ে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার যুদ্ধ। এ যুদ্ধ আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে শুরু হয় এ সংঘর্ষ। এতে উভয় দেশের শত শত নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ব্যাপক প্রাণহানি চলছে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এটি হঠাৎ করে শুরু হওয়া কোনও যুদ্ধ নয়। এর রয়েছে জাতিগত ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় শুনবেন বিস্তারিত।

চলমান এ সহিংসতার শুরু ২৭শে সেপ্টেম্বর। গত কয়েক দশকের মধ্যে ১৭৭০ বর্গমাইলের নাগোর্নো-কারাবাখকে নিয়ে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাত এটি। দুই পক্ষেরই শত শত মানুষ এরই মধ্যে মারা গেছে। গত সপ্তাহে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় দুই দেশ যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে; যা টেকসই হয়নি। এসময়ও পরস্পরের পাল্টাপাল্টি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ ও হামলার ঘটনা জানা যায়।

নাগার্নো কারাবাখ নিয়ে শুরু হওয়া এ দ্বন্দ্বের চূড়ান্ত সূত্রপাত ১৯৮০-র দশকে। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সময় নাগার্নো কারাবাখ মূলত আজারবাইজানের নিজস্ব ভূমি ছিল। কিন্তু পরে আর্মেনিয়া এটিকে নিজের বলে দাবি করে বসে। যার থেকে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দিকে উভয় দেশ ধাবিত হয়। ১৯৮৮-৯৪ সালের যুদ্ধে প্রায় ১০ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয় এবং প্রায় ৩০ হাজার মানুষ মারা যায়।

এরপর ১৯৯৪ সালে দুই দেশ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও তারা কখনোই স্থায়ীভাবে শান্তি চুক্তি করতে পারেনি।

উলেস্নখযোগ্য বিষয় হলো- আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান দেশ দুটি যথাক্রমে খ্রিস্টান এবং ইসলাম ধর্মাবলম্বী দুটি জাতি নিয়ে গঠিত। এ জাতিগত বিভাজন উভয় জাতির জনগোষ্ঠীর ওপর ব্যাপক প্রভাব রাখে। বলতে গেলে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান নাগার্নো কারাবাখকে তাদের স্ব স্ব ভূমি মনে করে আসছে। ১৯৯০ এর দশকে আজারবাইজানের মুসলিম জনগোষ্ঠীকে হটিয়ে কারাবাখ দখল করে বাস করতে শুরু করে আর্মেনীয়রা।

এক্ষেত্রে তুরস্কের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আজারবাইজান তার একমাত্র শক্তিশালী মিত্র তুরস্ককে তার ভৌগোলিক রাজনীতিতে সব সময়ই স্বাগত এবং সমর্থন প্রত্যাশী ছিল। ইরান, জর্জিয়া এবং আর্মেনিয়া দ্বারা পরিবেষ্টিত আজারবাইজানের সঙ্গে তুরস্কের কোনো সীমান্ত যোগাযোগ না থাকলেও বর্তমান আজারবাইজান প্রেসিডেন্ট আলীয়েভ তুরস্ককে 'ভ্রাতৃপ্রতীম দেশ' হিসেবে উলেস্নখ করে আসছে।

আজারবাইজানকে সহযোগিতা করার পেছনে তুরস্কের ধর্মীয় স্বার্থের পাশাপাশি ভৌগোলিক স্বার্থও রয়েছে। আজারবাইজানের কাস্পিয়ান খনিজ তেল তুরস্ককে একদিকে যেমন নিজের অভ্যন্তরীণ সামর্থ্যকে শক্তিশালী করবে; অন্যদিকে তুরস্ককে মধ্যপ্রাচ্য নির্ভরতা থেকে বের করে আনতে পারবে।

এই পরিস্থিতিতে তেহরানের কাছেও বার্তা পাঠিয়েছেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী। তার বক্তব্য, তেহরান যদি শান্তিপূর্ণ সমাধানের রাস্তা তৈরি করতে পারে, তা হলে আর্মেনিয়া তা মেনে নেবে। বস্তুত, আর্মেনিয়া ব্রাসেলসেও প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। ন্যাটো এবং ইইউ-র সঙ্গে আলোচনা করবেন সেই প্রতিনিধি।

এদিকে, আর্মেনিয়ায় রয়েছে রাশিয়ার সেনা ঘাঁটি। রাশিয়া মিন্সক চুক্তির আলোকে নাগার্নো কারাবাখ সমস্যা সমাধানের কূটনীতিক কৌশল অবলম্বন করে ১৯৯০-এর দশকে। তবে, আজারবাইজান রাশিয়ার এ কৌশলগত পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে।

বাস্তবিক অর্থেই ভূকৌশলগত শক্তির লড়াই চলছে নাগোর্নো-কারাবাখে। যার বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। আমরা আশা করি, শিগগিরি এ যুদ্ধ ও রক্তপাত বন্ধ হবে।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040