বিদ্যাবার্তা ১০১৯
  2020-10-19 17:33:55  cri

আলিম: চলতি বছর কোভিড-১৯ মহামারী সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এখনো বিশ্বের অনেক দেশের অবস্থা গুরুতর। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশে পড়াশোনা শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক কষ্টকর; তাদের পড়াশোনার পরিকল্পনা আর সময়সূচিও অনিশ্চিত হয়ে গেছে। মহামারীতে কিভাবে বিদেশে লেখাপড়া করা যায়? আজকের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের ব্যবস্থা নিয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরবো।

সুবর্ণা: মহামারীর কারণে বিশ্বের অনেক দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই চলতি বছর অনলাইন ক্লাস চালু হয়। স্পেনের মাদ্রিদে পড়াশোনা করেন চীনা ছাত্র সিয়াও সিয়া। তিনি বলেন, কিং জুয়ান কার্লোস বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এখন বন্ধ। অনলাইন ক্লাস চলছে। এ ব্যবস্থায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভাইরাসে আক্রান্তের আশঙ্কা ব্যাপক হ্রাস পাবে। তবে কেউ কেউ অনলাইন ক্লাসের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান।

আলিম: জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি গবেষণা বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়োইয়ো বলেন, অনলাইন ক্লাসের কারণে হোমওয়ার্ক আগের চেয়ে বেশি হয়েছে। এখন ব্যস্ততা বরং বেড়েছে। ইয়োইয়ো মহামারীর কারণে সুপারমার্কেট ছাড়া আর কোথাও যায়নি। বাড়িতে থাকলেও, প্রতিদিন অনেক ব্যস্ত সময় কাটাতে হয় তাকে। কারণ, অনলাইন ক্লাস, থিসিস লেখা, ইন্টারশিপ খোঁজা, জাপানি ভাষা শেখাসহ বিভিন্ন কাজে তার অনেক সময় ব্যয় হয়।

 

সুবর্ণা: যারা বিদেশে কয়েক বছর ধরে পড়াশোনা করছে—এমন অভিজ্ঞ শিক্ষার্থীর ওপর মহামারীর নেতিবাচক প্রভাব তুলনামূলকভাবে খানিকটা কম। তবে, নতুন করে বিদেশে পড়াশোনা শুরু করেছে—এমন ছাত্রছাত্রীদের অবস্থা একটু বেশি নাজুক। কারণ, অনলাইন ক্লাসের শিক্ষাদানের মান নিশ্চিত করা মুশকিল। অনলাইন ক্লাসে আলোচনার আমেজও থাকে না। শিক্ষার্থী ছি'আন বলেন, তার প্রথম সেমিস্টার চীনে কেটেছে। এসময় তিনি শুধু অনলাইনে ক্লাস করেছেন। অক্টোবর মাসেই তিনি ব্রিটেনে ফিরতে চান। কিন্তু সেটাও অনিশ্চিত। ব্রিটেনে ইউরোপের অনেক দেশের মতো মহামারি পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।

আলিম: শিক্ষার্থীদের সবার সিদ্ধান্ত এক হবে না, এটা বলাই বাহুল্য। চীনা মেয়ে ইউ হুং প্যারিসের রাজনীতি একাডেমিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তবে সে চীনে বসেই অনলাইনে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চায়। এ সম্পর্কে সে বলে, প্যারিসে পৌঁছাতে পারলেও, খুব সম্ভবত অনলাইনেই ক্লাস করতে হবে। তাই ইউ হুং আগামী দু'বছর অনলাইনে ক্লাস করার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। পাশাপাশি, সে চীনে ইন্টারশিপের সুযোগ খুঁজবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সুবর্ণা: সিঙ্গাপুরে পড়াশোনা করে মেয়ে জিং জিং। জুন মাস থেকে তার অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করার কথা। তবে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সিঙ্গাপুরের সব ক্লাস অনলাইনে হয় এবং তার থিসিসও অনলাইনে সংশোধিত হয়। মাস্টার্স পর্যায়ের শেষ সেমিস্টার ক্যাম্পাসে থাকা লাগবে না, তাই মেয়ে জিং জিং চীনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও আগেভাগে ক্যাম্পাস ত্যাগ করা একটু পরিতাপের বিষয়, তবে সে মনে করে, অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমেও বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করা যায়।

আলিম: মহামারীর কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় পিছিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোনো কোনো শিক্ষার্থী। উচ্চশিক্ষা পরামর্শ সংস্থা কিউএসের জরিপ থেকে জানা গেছে, ৪৮ শতাংশ চীনা শিক্ষার্থী যারা বিদেশে পড়াশোনা করে থাকে, তাদের বিদেশে পড়াশোনার পরিকল্পনা এক বছরের মতো পিছিয়ে গেছে। মার্কিন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুং ফেং মহামারীর কারণে যুক্তরাষ্ট্রে পার্টটাইম চাকরি হারানোর ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়েছে। ইন্টারশিপ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ নিয়ে চিন্তা করার পর সে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সময় এক বছর পিছিয়ে দিয়েছে। সুং এই এক বছর অন্যান্য বিদেশি ভাষা শেখা ও দুটি ইন্টারনশিপ খুঁজে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে, সে চিন্তিত। এক বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার আরেকটি ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে যাওয়া। নতুনরা তখন স্নাতক পর্যায়ে ইন্টার্নশিপের সুযোগ সহজে পাবে। এক বছর যুক্তরাষ্ট্রে ভালো পূর্ণকালীন চাকরি পেতেও তাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। এ নিয়ে সুং খানিকটা উদ্বিগ্নও বটে।

সুবর্ণা: নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা শিক্ষার্থী কুও জি সুয়ান অনলাইন ক্লাস পছন্দ করে না। ফলে চলতি বছর এক সেমিস্টার সে পড়াশোনা বন্ধ রেখেছে। শরত্কালে নতুন সেমিস্টার শুরু হবার কথা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মহামারী পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এ অবস্থায় মার্কিন ভিসা-নীতিমালাও কয়েকবার পরিবর্তন হয়েছে। ফলে ছাত্র কুও উদ্বিগ্ন। সে বলে, নতুন বছরের সেমিস্টারেও ফেরা সম্ভব হবে না। তাই সময়মতো স্নাতক হওয়ার জন্য এখন শুধু অনলাইনের ক্লাস করতে হবে।

আলিম: যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চবিদ্যালয়ের চীনা শিক্ষার্থী লু জিন থাং কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে চীনে ফিরে আসে। চলতি বছরের লেখাপড়ায় সাময়িক বিরতি সম্পর্কে সে বলে, সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। এই অবস্থায় পেশাগত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মাধ্যমে বিদেশে পড়াশোনার পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। যদি বিদেশে পড়তে হয়, তাহলে কমপক্ষে আরেক বছর অপেক্ষা করতে হবে।

সুবর্ণা: বিদেশে পড়াশোনার পরামর্শক শিক্ষক কে বলেন, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত চাহিদা বিবেচনা করে বিদেশে পড়াশোনার প্রস্তাব দেয় শিক্ষকরা। যদি শুধু ডিগ্রির মান উন্নত করতে চায়, তাহলে অনলাইন ক্লাস করলেও চলে। যদি ভিন্ন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও প্রাধান্য অনুভব করতে চায়, তাহলে মহামারীর পর ভর্তি হতে হবে।

আলিম: এ ব্যাপারে বিদেশে পড়াশোনায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ধারাবাহিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যেমন: বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ছাত্রছাত্রী বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষর করা, শিক্ষার্থীদের চীনে অস্থায়ী পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া, ইত্যাদি।

সুবর্ণা: আর এ প্রেক্ষাপটে ২০২০ সালের শরত্কালীন সেমিস্টারে চীনের শাংহাই শহরের নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ক্যাম্পাসে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় ও আবুধাবি শাখা ক্যাম্পাসের প্রায় ৩১০০ জন চীনা শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হবে। তারা শাংহাই শাখা ক্যাম্পাসের ১৭০০ জন ছাত্রছাত্রীর সাথে নতুন সেমিস্টারের ক্লাসে অংশ নেবে। চিয়াংসু প্রদেশের খুনশান শহরের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ও নতুন সেমিস্টারে প্রায় ১২০ জন শিক্ষার্থী গ্রহণ করবে।

আলিম: এদিকে, মার্কিন কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা শিক্ষার্থীরা যদি সময়মতো যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে না-পারে, তাহলে চীনের ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় বা শাংহাই চিয়াওথুং বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থায়ী পড়াশোনার কোর্সের জন্য তারা আবেদন করতে পারবে।

সুবর্ণা: এর সঙ্গে সঙ্গে বিদেশ থেকে চীনে ফিরে আসা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাপ্তরিক প্রক্রিয়া সহজতর করার জন্য পয়লা নভেম্বর থেকে 'বিদেশে পড়াশোনা প্রমাণপত্র' আবেদন প্রক্রিয়াও বাতিল করা হয়েছে।

আলিম: কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে চীনা শিক্ষার্থীদের বিদেশে পড়াশোনার সময়ও কমে গেছে, অনেকে স্নাতক সার্টিফিকেটের স্বীকৃতি পাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন। এ সম্পর্কে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, মহামারীর কারণে অনেক দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বা কোর্স সময়মতো চালু হয়নি এবং চীনা শিক্ষার্থীরা বিদেশে অবস্থানের সময়ও যথেষ্ঠ নয়। এ বিশেষ পরিস্থিতিতে তাদের স্নাতকপত্রের স্বীকৃতি পেতে কোনো সমস্যা হবে না। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040