আজকের টপিক: বৈশ্বিক খাদ্যশস্য সংকটের সামনে চীনাদের আস্থা কীভাবে এসেছে?
  2020-10-15 16:16:28  cri

কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এর নতুন কিছু ধারাবাহিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক খাদ্যশস্য নীতি গবেষণালয়ের 'ম্যাগাজিনে' এক প্রবন্ধে বলা হয়, নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বিশ্ব অর্থনীতির উন্নয়ন ধীর হওয়ার পাশাপাশি, খাদ্যশস্য নিরাপত্তার ওপরও প্রভাব পড়েছে। এতে 'খাদ্যশস্য সরবরাহের পরিমাণ', 'খাদ্যশস্য পাওয়ার চ্যানেল', 'খাদ্যশস্যের ব্যবহার' এবং 'খাদ্যশস্যের স্থিতিশীল সরবরাহ' এই চারটি বিষয় উল্লেখ করা হয়। চলতি বছর বৈশ্বিক খাদ্যশস্য নিরাপত্তা সমস্যার অব্যাহত অবনতি হয়েছে। এই অবস্থায় সম্প্রতি জাতিসংঘের এক গবেষণা রিপোর্টে সতর্ক করে বলা হয়, এ বছর ২৫টি দেশে গুরুতর দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি রয়েছে। পৃথিবী বিগত ৫০ বছরের সবচেয়ে গুরুতর খাদ্যশস্য সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে বা হবে। আজকের টপিক অনুষ্ঠানে আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করবো।

খাদ্যশস্য সংকটের অবস্থায় বেশ কিছু খাদ্যশস্য রপ্তানিকারক দেশ, যেমন ভিয়েতনাম, কাজাখস্তান ও রাশিয়া পর্যায়ক্রমে খাদ্যশস্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বিশ্বে চাল রপ্তানি দিক থেকে সর্বোচ্চ দেশ— ভারতও মহামারীর জন্য রপ্তানি বন্ধ করেছে। এভাবে চাল রপ্তানির পরিমাণ অনেক কমেছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ বছর পঙ্গপাল ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ বেড়েছে। এই দুটি বড় প্রাকৃতিক সমস্যা বিশ্বে কয়েকটি খাদ্যশস্য উত্পাদনকারী দেশের ওপর বেশি আক্রমণ করায় খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক উত্পাদনের পরিমাণ নিঃসন্দেহে কমে যাবে।

তবে খাদ্যশস্য সংকট সম্পর্কিত বেশ কিছু রিপোর্টের মধ্যে কখনোই চীনের কথা বলা হয় নি। চীন সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ অনেক কর্মক্ষেত্রে ঘোষণা করেছে যে, চীনে খাদ্যশস্যের নিরাপদ সরবরাহ সুনিশ্চিত করতে সক্ষম ও আস্থাবান।

চীনের কৃষি ও গ্রাম মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন কার্যক্রম বিভাগের মহাপরিচালক ওয়েই পাইকাং বলেন, ২০১০ সাল থেকে চীনে মাথাপিছু খাদ্যশস্যের পরিমাণ অব্যাহতভাবে বিশ্বের গড় মানের চেয়ে বেশি রয়েছে। ২০১৯ সালে মাথাপিছু খাদ্যশস্যের পরিমাণ চিল ৪৭০ কেজি। আন্তর্জাতিকভাবে খাদ্যশস্যের নিরাপদ সীমানা হলো মাথাপিছু ৪০০ কেজি। প্রতিদিন তিনটি প্রধান খাবার– ভাত, গম ও ভূট্টার স্বনির্ভরতার হার ৯৭ শতাংশের ওপর। চীনের কৃষি ও গ্রাম মন্ত্রণালয় এবং শুল্ক সাধারণ বিভাগের পরিসংখ্যানে বলা হয়, ২০১৯ ও ২০২০ সালে, চীনে ধান ব্যবহারের মোট পরিমাণ ছিল ১৯.৭ কোটি টন, দেশটিতে ধানের বার্ষিক উত্পাদনের মোট পরিমাণ ১৯.৯ কোটি টন। এ বছর ২৫ লাখ টন চাল আমদানি করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ পরিমাণ বাস্তব ভোক্তা মানের ১.৩ শতাংশ। সুতরাং, চীন রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল নয়।

আসলে, চীন একটি বড় জনসংখ্যার দেশ। 'চীনের খাদ্যশস্য সংকট' হবে কি-না এই সম্পর্কিত আলোচনা অনেক আগেই শুরু হয়। ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বরে মার্কিন পর্যবেক্ষণ গবেষণালয়ের প্রধান লিস্টার ব্রাউন 'কে চীনকে বাঁচাবে' শীর্ষক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। প্রবন্ধে অনুমান করা হয় যে, ২০৩০ সালে চীনের লোকসংখ্যা ১৬০ কোটি হবে, সেসময় চীনে ২১.৬ থেকে ৩৭.৮ কোটি টন খাদ্যের অভাব হবে। বিশ্বে কোন দেশ চীনকে এতো বেশি খাদ্যশস্য দিয়ে বাঁচাতে পারবে? ভবিষ্যতে চীন গুরুতর খাদ্যশস্য সংকটের সম্মুখীন হবে বলে তাঁর প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়। আর এটাই হলো 'চীনে খাদ্যশস্য সংকট ধারণার' উত্স।

কিন্তু, কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাব ও বন্যা দুর্যোগের প্রেক্ষাপটে এ বছর চীনের গ্রীষ্কালীন শস্যের প্রচুর ফলন হয়েছে। সম্প্রতি চীনের কৃষি ও গ্রাম মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, এ বছর চীনের গ্রীষ্কালীন খাদ্যশস্য উত্পাদনের পরিমাণ ১৪২.৮ বিলিয়ন কেজি, প্রবৃদ্ধির হয়েছে ১.২১ বিলিয়ন কেজি। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ০.৯ শতাংশ বেড়েছে। এটি একটি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।

(ওয়াং হাইমান/তৌহিদ/ছাই)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040