শেনচেন বিম্ময় কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে?
'তিনদিনে এক তলা ভবন'-এ কথায় 'শেনচেন গতি' বর্ণনা করা হয়েছে। এ গতিতে শেনচেন ছোট মত্স্যগ্রাম থেকে আন্তর্জাতিক মহানগরে পরিণত হয়েছে, যাকে 'শেনচেন পদ্ধতি' হিসেবে গণ্য করা হয়। উদযাপনী অনুষ্ঠানে সি চিন পিং 'শেনচেন পদ্ধতি'-র সাফল্যের ১০টি কারণ উল্লেখ করেন। সেগুলো হচ্ছে: বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মাণকাজে সিপিসি'র নেতৃত্ব; চীনের বৈশিষ্ট্যময় সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অবিচল থাকা; উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া; প্রচেষ্টা চালাতে সাহসী হওয়া; সার্বিক উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারণ করা; নব্যতাপ্রবর্তনকে প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে গণ্য করা; বৈশ্বিক প্রযুক্তিগত বিপ্লব ও শৈল্পিক সংস্কারে ইতিবাচক ভুমিকা রাখা; জনগণকেন্দ্রিক উন্নয়নের চেতনায় অবিচল থাকা; এবং সংস্কারের সাফল্যে জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা।
গত শতাব্দির আশির দশকে নির্মাণাধীন শ্য খৌ শিল্পাঞ্চল, চীনের প্রথম বিদেশমুখী অর্থনৈতিক উন্নয়ন অঞ্চল।
বর্তমানে শেনচেনের কেন্দ্রীয় অঞ্চল, ৫৯৯.১ মিটার উঁচু শেনচেন পিং আন আন্তর্জাতিক অর্থকেন্দ্র এ শহরের নতুন প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
শেনচেন বিম্ময় সৃষ্টির কারণ কী?
গত ৪০ বছরে শেনচেন উপকূলীয় গরিব গ্রাম থেকে আন্তর্জাতিক মহানগরে পরিণত হয়েছে। চীনের বিখ্যাত হাইটেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে, টেনসেন্ট ও তা চিয়াং'র সদরদপ্তর শেনচেনে অবস্থিত। ১ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ এ শহরে বাস করছেন। তারা নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য পরিশ্রম করছেন।
সি চিন পিং বলেন, শেনচেন চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পর সিপিসি ও জনগণের হাতে নির্মিত নতুন শহর এবং চীনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমাজতন্ত্রের প্রতীক। শেনচেনবাসী ৪০ বছর ধরে পরিশ্রম করে বিশ্বের উন্নয়নের ইতিহাসে একটি বিম্ময় সৃষ্টি করেছে।
এ বিস্ময় কিভাবে সৃষ্টি হয়? এ প্রশ্নের উত্তরে সি চিন পিং বলেন, প্রচেষ্টা চালাতে সাহসী হওয়া, নব্যতাপ্রবর্তনের চেতনা দ্বারা অনুপ্রাণিত হওয়া, সংস্কার গভীর করা, এবং জনগণকেন্দ্রিক উন্নয়নের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করার মাধ্যমে এ বিস্ময় সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে।
শেনচেনে প্রতি বছরে নব্যতাপ্রবর্তনে ১ কোটি ইউয়ান অর্থ দেওয়া হয়। গোটা চীনে শেনচেন প্রথমবারের মতো বাজার অর্থনৈতিক সংস্কার চালিয়েছে এবং প্রথমবারের মতো ১০০০টিরও বেশি সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
১৯৮০ সালে শেনচেনে বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার এবং ২০১৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ১শ ৫০ কোটি মার্কিন ডলারে। বার্ষিক গড়ে ২৬.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বাণিজ্য। ২০১৯ সালে শেনচেনবাসীর মাথাপিছু আয় ৬২ হাজার ৫শ ইউয়ান, যা ১৯৮৫ সালের তুলনায় ৩১.৬ গুণ বেড়েছে।
সেনচেনের ভবিষ্যৎ: আরও উন্মুক্ত সেনচেনে আপনাকে স্বাগতম!
অক্টোবর ১৪: বতর্মানে, বৈশ্বিক অর্থনীতি নানান জটিল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। চীনও এগুলোকে এড়িয়ে যেতে পারে না। সি চিন পিং বলেন: "কোনোকিছুকেই আমাদেরকে বাধা দেওয়ার সুযোগ দেব না। ইতিহাসের সঠিক প্রান্তে দাঁড়াতে হবে; দৃঢ়ভাবে ও সার্বিকভাবে উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারণ করতে হবে; উম্মুক্ত বৈশ্বিক অর্থনীতি নির্মাণ ও মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।"
সি চিন পিং সেনচেনের আরও উন্নয়নের জন্য নীলনকশাও দিয়েছেন। এতে অভিষ্যতের সেনচেনের চেহারা প্রতিফলিহত হয়। তার নীলনকশায় ৮টি পয়েন্ট আছে:
এক. অর্থনৈতিক বিশেষ এলাকা হিসেবে সেনচেনের মর্যাদা বজায় থাকবে, শুধু তা নয়; বরং আরও সুষ্ঠুভাবে এবং আরও উচ্চ মানসম্পন্ন উন্নয়ন সাধন করা হবে।
দুই. কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, সামাজিক বিমা, বাসস্থান, প্রবীণসেবা, খাদ্য-নিরাপত্তা, প্রতিবেশ, সামাজিক নিরাপত্তা, ইত্যাদি খাতে বিভিন্ন সমস্যা একের পর এক সুষ্ঠুভাবে সমাধান করতে হবে। এতে জনগণের সুখের অনুভূতি বাড়বে, জনকল্যাণ সৃষ্টি হবে, ও জনগণের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা যাবে।
তিন. আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কৌশলগত প্রযুক্তিবিদ ও এলিটদের সেনচেনে আকর্ষণ করা হবে।
চার. সেনচেন পরিচালনায় আরও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেওয়া হবে এবং এতে আরও মেধা যোগ করা হবে।
পাঁচ.গবেষণা, নকশা, একাউন্টিং, আইন, প্রদর্শনীসহ আধুনিক সেবা শিল্পের আন্তর্জাতিক মানের উন্নয়ন সাধন করা হবে।
ছয়. প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে; নতুন শিল্প ও ডিজিটাল অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটানো হবে।
সাত. 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগশংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সাথে নানান খাতে বাস্তব সহযোগিতা জোরদার করা হবে।
আট. দৃঢ়ভাবে পারস্পরিক কল্যাণ ও জয়-জয় কৌশল অনুসরণ করা হবে।
সি চিন পিং জানান, অর্থনৈতিক বিশেষ এলাকা প্রতিষ্ঠার পরবর্তী ৪০ বছরের অনুশীলন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিন্ন অংশগ্রহণের সাথে সম্পর্কিত। চীনের অর্থনৈতিক বিশেষ এলাকার সংস্কার, উন্মুক্তকরণ ও উন্নয়নে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণকে স্বাগত জানানো হবে। (রুবি/আকাশ/আলিম/রুবি)