চলচ্চিত্র শিল্পের ওপর মহামারীর প্রভাব বিশাল পড়েছে। তবে, চীনা চলচ্চিত্র ব্যক্তিদের কর্মতত্পরতা কখনই বন্ধ হয়নি। ২০ জুলাই থেকে চলচ্চিত্র বাজার আবারও উন্মুক্ত হয়েছে। এরপর ৩১শে অগাস্ট পর্যন্ত গ্রীষ্মকালীন ছুটির সময় পর্যন্ত শত শত চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। কোটি কোটি চীনা দর্শক সিনেমা হলে চলচ্চিত্র উপভোগ করেছেন।
চলচ্চিত্র উপভোগের প্রতি মানুষের আগ্রহ সত্যিই অনেক বেশি। বাজারে উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন চলচ্চিত্র খুব প্রয়োজন। চীনের চলচ্চিত্র সমালোচনা সমিতির প্রধান রাও শু কুয়াং এভাবে বলেন।
সিনেমা হল আবারও খোলা হলে শুরুর দিকে প্রদর্শন করা হয় 'The Eight Hundred' নামের চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি চীনের বক্সঅফিসে ৩০০ কোটি ইউয়ান উপার্জন করেছে। হুয়াই ব্রাদার্স মিডিয়া গ্রুপের সহ–প্রতিষ্ঠাতা ওয়াং চোং লেই এ চলচ্চিত্র সম্পর্কে বলেন, চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনের সময় সিনেমা হলের ধারণক্ষমতা ৭০ শতাংশে সীমিত রাখা হলেও চলচ্চিত্রের চমত্কার নির্মাণ এবং গোটা চলচ্চিত্র মহলের যৌথ সমর্থনের ফলে চলচ্চিত্রটি ভালো ফলাফল অর্জন করেছে।
পাণ্ডুলিপি হলো একটি চলচ্চিত্রের আত্মা।
ওয়ানতা সাংস্কৃতিক গ্রুপের কার্য-নির্বাহী মহাপরিচালক চেং মাও চুন বলেন, মহামারীর সময় আমরা অনেক প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালকের সঙ্গে সহযোগিতা করে যেসব শিল্পকর্ম আগে তৈরি করতে চেয়েছিলাম, সেসব শিল্পকর্মগুলো মনোযোগ দিয়ে আবারও বিশ্লেষণ করেছি।
চাইনিজ ফিল্ম অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান লা পেই খাং বলেন, পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, চলতি বছর চীনের চলচ্চিত্র বাজারে আরো প্রায় তিনশ নতুন চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। চীনের চলচ্চিত্র উন্নয়নের বিশাল ভবিষ্যত সম্পর্কে আমরা আস্থাবান।
মহামারীর কারণে 'Lost in Russia' এবং 'the winners'সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র অনলাইনে প্রদর্শিত হয়। আগে সেগুলো বড় স্ক্রিনে প্রদর্শনের কথা ছিলো। চলচ্চিত্র উপভোগের পদ্ধতির পরিবর্তন চলচ্চিত্র মহলের ব্যাপক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
সিনেমা হল ও ইন্টারনেট সমানতালে উন্নত করতে হবে এবং একে অপরের পরিপূরকও হতে হবে। আইছিই চলচ্চিত্র শিল্পের প্রধান ইয়া নিং বলেন, মহামারীর শুরুর দিকে ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্ম ট্র্যাফিক এবং সদস্যের সংখ্যা স্পষ্টভাবেই বৃদ্ধি পায়। মহামারী ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন বিষয়ের অভাবে ভিডিও প্লাটফর্মে এর প্রভাব পড়বে বলে তিনি মনে করেন। আর্থিক প্রবাহ ও সদস্য বৃদ্ধির গতিও হ্রাস পেয়েছে।
ইন্টারনেটে প্রদর্শনের পদ্ধতি স্বল্প খরচের চলচ্চিত্র প্রকাশের চাপ কমাতে সক্ষম এবং সিনেমা হলে একটি চলচ্চিত্রের বক্সঅফিস ইন্টারনেটে চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনের সময় মুনাফাও বেগবান করতে সক্ষম।
সিনেমা হল বন্ধ হলে গোটা চলচ্চিত্র মহলের উন্নয়ন সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে। শাংহাই চলচ্চিত্র গ্রুপের প্রধান ওয়াং চিয়েন আর স্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, মহামারীর কারণে গোটা চলচ্চিত্র জগত বুঝতে পেরেছে যে, চীনের চলচ্চিত্র শিল্পের বাজারের অভিজ্ঞতা যথেষ্ট নয়। ঝুঁকি প্রতিরোধের দক্ষতাও জোরালো নয় এবং শিল্প চেইন প্রসারিত হওয়া উচিত্।
বেইজিং ফিল্ম একাডেমির সিপিসি'র পার্টি সম্পাদক ও উপাধ্যক্ষ হু চি ফোং বলেন, বর্তমানে চীনের চলচ্চিত্র শিল্পের কোর চেইন হলো চলচ্চিত্র নির্মাণ করা। একটি চলচ্চিত্র মূল্যায়নের সূচক প্রধানত বক্সঅফিসের ওপর নির্ভর করে। শিল্প চেইনের উপর, মাঝে ও নিচে ব্যাপক শূন্যতা থাকে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন শিল্প প্রসারিত হওয়া উচিত্, যাতে উইন-উইন অবস্থা বাস্তবায়িত হয়।
চলচ্চিত্র উন্নয়নের শতাধিক প্রক্রিয়ার দিকে তাকালে বোঝা যায় যে, চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি এবং প্রচারের উপায় অব্যাহতভাবে সংস্কারে আরো উচ্চ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নেওয়া উচিত।
চীনের চলচ্চিত্র সমালোচনা সমিতির প্রধান রাও শু কুয়াং বলেন, প্রযুক্তি আমাদেরকে যথেষ্ট জায়গা দিয়েছে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নতুন পদ্ধতি খুঁজে বের করা। চীনের চলচ্চিত্র শিল্পে সার্বিক ও বিস্তৃত শিল্পায়ন সংস্কার চালানোর পর এর উন্নয়ন অনেক দ্রুত হয়েছে। এখন দ্রুত উন্নয়ন থেকে উচ্চ গুণগত মানের উন্নয়নে রূপান্তরের সময় এসেছে।
চীনের চলচ্চিত্র কীভাবে মহামারী পরবর্তী সময়ে ফের শক্তিশালী হবে? বেইজিং ফিল্ম একাডেমির সিপিসি'র পার্টি সম্পাদক ও উপাধ্যক্ষ হু চি ফোং মনে করেন, বর্তমান শিল্প চেইন, শৈল্পিক উত্পাদন এবং দক্ষ কর্মীদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাঠামোগত সমস্যার সমাধান করা উচিত্। বিভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্রের বহুমুখী ও ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন জোরদার করা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাসম্পন্ন নতুন মেধাবী চলচ্চিত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত্।