অক্টোবর ১৪: শেনচেন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাঁকজমকপূর্ণ উদযাপনী অনুষ্ঠান আজ (বুধবার) চীনের কুয়াংতুং প্রদেশের শেনচেন শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) ও দেশের সর্বোচ্চ নেতা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এতে ভাষণ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দাঁড়িয়ে আছে চীন। নতুন সময় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মাণকাজ নতুন পর্যায়ে পা দিয়েছে। বর্তমানে নতুন উন্নয়নের সুযোগ তৈরি হয়েছে, আরও উচ্চমানের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ এগিয়ে নিতে হবে। চীনের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণে অংশ নিতে বিভিন্ন দেশকে স্বাগত জানায় চীন; যাতে সম্মিলিতভাবে পারস্পরিক কল্যাণকর নতুন যুগ তৈরি করা যায়। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় আমি এ বিষয়ে আলোচনা করবো।
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ এবং আধুনিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকাজ এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে নব্যতাপ্রবর্তনমূলক ব্যবস্থা। ১৯৮০ সালের অগাস্ট মাসে সবার আগে দক্ষিণ চীনের উপসাগরীয় অঞ্চলের শেনচেন, চুহাই, শানথৌ ও সিয়ামেনে ৪টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৮৮ সালের এপ্রিল মানে চীনে হাইনান বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়।
বিগত ৪০ বছরে গোটা চীনে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা পালন করেছে চীনের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো। এটি বৈশ্বিক উন্নয়নের ইতিহাসে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। এর অন্যতম উদাহরণ শেনচেন। ১৯৮০ সালে এ অঞ্চলের জিডিপি ছিল ২৭ কোটি ইউয়ান। ২০১৯ সালে তা ২.৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে উন্নীত হয়। এ অঞ্চলের অর্থনীতির মোট পরিমাণ এশীয় শহরগুলোর মধ্যে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। ১৯৮০ সালে আমদানি ও রপ্তানির মোট পরিমাণ ছিল ১.৮ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৪৩১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৯ সালে শেনচেনের অধিবাসীদের গড় মাথাপিছু আয় হয় ৬০ হাজার ইউয়ান। এভাবে শেনচেন অতীতের ছোট্ট জেলেপল্লী থেকে বিশ্বের প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক বড় শহরে পরিণত হয়েছে।
উদযাপনী অনুষ্ঠানের ভাষণে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ৪০ বছরের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ এবং নবত্যাপ্রবর্তনের মূল্যবান অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করেন প্রেসিডেন্ট সি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সিপিসি'র নেতৃস্থানীয় ভূমিকা অবিচল রাখতে হবে, চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা কাজে লাগাতে হবে। উন্নয়ন হচ্ছে বাস্তবতা- এই ধারণা কাজে লাগাতে হবে এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে।
প্রেসিডেন্ট সি বলেন, বর্তমান বিশ্বে বিশাল পরিবর্তন ঘটছে। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এই পরিস্থিতি আরও দ্রুত জটিল হয়ে উঠছে এবং আর্থিক বিশ্বায়নের রূপ বদলে যাচ্ছে। পাশাপাশি, সংরক্ষণবাদ ও একতরফাবাদ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বিশ্ব অর্থনীতির নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সংস্কৃতি, নিরাপত্তা ও রাজনীতিসহ বিভিন্ন ফ্যাক্টর গভীরভাবে সমন্বয় করা হচ্ছে। এ অবস্থায় চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে 'ডাবল লুপ' একটি বহুল ব্যবহৃত টার্ম। এটি চীনা অর্থনীতির উন্নয়নে কৌশলগত নির্দেশনা দিয়েছে। নতুন যুগে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণে নতুন উন্নয়নের ধারণা কাজে লাগাতে হবে। আমাদের উচিত ইতিহাসের সঠিক দিকে দাঁড়ানো, দৃঢ়ভাবে উন্মুক্তকরণের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করা। উন্মুক্তকরণের ক্ষেত্রে বিশ্ব অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে মানবজাতির অভিন্ন স্বার্থের সংশ্লিষ্ট কমিউনিটি গড়ে তোলা দরকার। শেনচেনের সার্বিক উন্মুক্তকরণ বাড়াতে হবে বলে উল্লেখ করেন প্রেসিডেন্ট সি।
২০১৯ সালে 'কুয়াংতুং-হংকং-ম্যাকাও গ্রেটার বে এরিয়া' প্রতিষ্ঠাকাজ এগিয়ে নেওয়া হয়। শেনচেনসহ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো এই বৃহত্তর উপসাগরীয় এলাকার গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে পরিণত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট সি বলেন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের উচিত বৃহত্তর উপসাগরীয় এলাকা গঠনের সুযোগে এই তিনটি অঞ্চলের আর্থিক প্রবাহ জোরদার করে বাজারের একীকরণের মান উন্নত করা।
(ওয়াং হাইমান/তৌহিদ/ছাই)