চীনের সিনচিয়াং নিয়ে আলোচনা
  2020-10-13 17:13:57  cri
সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটি তথা সমাজ, মানবাধিকার ও সাংস্কৃতিক কমিটির সাধারণ বিতর্কের সময়, চীনের হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল ও সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ইস্যু নিয়ে কিছু পাশ্চাত্য দেশ চীনের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করলেও, ৫৪টি দেশ চীনের হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল ও সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ইস্যুতে চীনের অবস্থানকে সমর্থন দেয়। আসলে সিনচিয়াং ইস্যুতে পাশ্চাত্য দেশগুলোর ভিত্তিহীন অভিযোগ নতুন কোনো ব্যাপার নয়। আজকে এই বিষয়ে চীনের অবস্থান এবং সিনচিয়াংয়ের আসল অবস্থা নিয়ে আপনাদের সামনে কিছু তথ্য তুলে ধরতে চাই।

দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রাচীন রেশমপথের কেন্দ্রীয় এলাকায় অবস্থিত। অঞ্চলটির রাশিয়া, পাকিস্তান, ভারতসহ আটটি দেশের সঙ্গে সীমান্ত আছে। ২০১৪ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সিনচিয়াং পরিদর্শনের পর বলেছিলেন, সিনচিয়াংয়ে রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কেন্দ্রীয় এলাকা নির্মাণ করতে হবে।

২০১৯ সাল পর্যন্ত, সিনচিয়াং আশেপাশের ৫টি দেশের সঙ্গে ১১১টি আন্তর্জাতিক সরবরাহলাইন চালু করেছে; পশ্চিমে যাওয়ার ২৫৬৪টি আন্তর্জাতিক মাল পরিবহন ট্রেন চালু করেছে; পাকিস্তান ও কাজাখস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ১৭টি আন্তঃদেশীয় অপটিকল কেবল চালু করেছে; প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যের বিনিময়ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করেছে।

গত দশ বছরে চীন সরকার তিন বার সিনচিয়াংবিষয়ক কর্মসম্মেলন আয়োজন করে। প্রতিবারের সম্মেলন সিনচিয়াং-এর অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়নে বিরাট চালিকাশক্তি যুগিয়েছে। ২০১৪ সালে সিনচিয়াংয়ে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৩০ লাখ ছিল। ২০১৯ সালে ২৯ লাখ মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত হয়। সিনচিয়াং-এর উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট ২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান বরাদ্দ দিয়েছে।

সম্প্রতি চীনের সিনচিয়াংবিষয়ক কর্মসম্মেলনে সিনচিয়াং-এর ভবিষ্যতের উন্নয়ন নিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, সিনচিয়াং-এর ভৌগোলিক সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে, রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কেন্দ্রীয় এলাকার নির্মাণকাজ ত্বরান্বিত করতে হবে, সিনচিয়াং-এর আঞ্চলিক উন্মুক্তকরণ কৌশলকে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের উন্মুক্তকরণের কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, মূল ভূভাগের ও সীমান্ত এলাকার উন্মুক্তকরণের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে সিনচিয়াংকে উন্নয়ন করতে হবে।

সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলসম্পর্কিত সমস্যা মানবাধিকার, জাতি বা ধর্মীয় সমস্যা নয়, বরং তা সন্ত্রাসদমন ও বিচ্ছিন্নতার সমস্যা। সিনচিয়াংয়ে আগে চরমপন্থা এবং সহিংসতা ও বিচ্ছিন্নতাবাদী তত্পরতার শিকার হয়েছিল, জনগণের জীবন ও স্বার্থের নিরাপত্তা গুরুতর হুমকির মুখে পড়েছিল। সিনচিয়াংয়ে নেওয়া ধারাবাহিক ব্যবস্থা শুধু চীনের আইনের সঙ্গেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়, বং তা আন্তর্জাতিক সমাজের সন্ত্রাসদমন ও চরমপন্থা নির্মূলের আহ্বান বাস্তবায়নে চীনের নেওয়া পদক্ষেপ।

সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা হলো মানবজাতির অভিন্ন শত্রু । বিভিন্ন দেশের সন্ত্রাসদমন ও চরমপন্থা নির্মূলের চেষ্টাকে ভিন্ন মানদণ্ড দিয়ে যাচাই করা ঠিক না। চীন দৃঢ়ভাবে সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষা করবে, সিনচিয়াংয়ের সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার যে-কোনো অপপ্রয়াস রুখে দেবে।

এই পর্যন্ত সহশ্রাধিক বিদেশি কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তা, সাংবাদিক এবং ধর্মীয় নেতা সিনচিয়াং পরিদর্শন করেছেন। যারা সিনচিয়াংয়ে গিয়েছেন, তারা বলেন, সিনচিয়াংয়ে তারা স্বচোখে যে অবস্থা দেখেছেন, তা পাশ্চাত্য তথ্যমাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা চিত্রের সঙ্গে বেমানান। চীন বিভিন্ন দেশের বন্ধুদের সিনচিয়াংয়ে ভ্রমণ করতে এবং সিনচিয়াংয়ের অর্থনীতি, সমাজ ও মানবাধিকারের উন্নয়নকে নিজেদের চোখে দেখতে আমন্ত্রণ জানায়। (শুয়েই/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040