কোভিড-১৯ মহামারী সংক্রমণের অবস্থায় সৃষ্ট 'হার্ড ইমিউনিটি' ভাইরাস প্রতিরোধ করে না: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
  2020-10-13 14:54:50  cri

সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা- হু'র জেনিভাস্থ সদর দফতরে কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাব নিয়ে এক প্রেস ব্রিফিং আয়োজন করা হয়। এ সময় হু'র মহাপরিচালক ড. তেদ্রোস আধানম বৈশ্বিক মহামারীর সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরেন। তাঁর বক্তব্যে ভাইরাস প্রতিরোধে 'হার্ড ইমিউনিটির' কথা উঠে আসে। স্থানীয় অবস্থা অনুযায়ী এ ভাইরাস প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন দেশের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় আমি এ বিষয়ে আলোচনা করব।

হু'র মহাপরিচালক বলেছেন, বিশ্বে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এবং এ অবস্থা ভারসাম্যহীন। তিনি বলেন,

'আমরা দেখেছি যে, বিশ্বে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে; বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকার অবস্থা আরও গুরুতর। গত চার দিন ছিল দৈনিক ভাইরাস সংক্রমণের শীর্ষ রেকর্ড। অনেক দেশ ও শহরে হাসপাতালে ভর্তি করা রোগী ও নিবিড় পর্যবেক্ষণে নেওয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি, এ ভাইরাস ঠেকাতে বিভিন্ন দেশের ব্যবস্থা বিভিন্ন রকম হওয়ায় এর ক্ষতির মানও আলাদা। গেল সপ্তাহে এ ভাইরাস সম্পর্কিত বৈশ্বিক এক রিপোর্টে বলা হয়, ৭০ শতাংশ রোগী ১০টি দেশের, আর অর্ধেক সংখ্যক রোগী শুধু ৩টি দেশের মানুষ। অনেক দেশ ইতোমধ্যে কার্যকর প্রতিরোধক ব্যবস্থার মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে এ ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করেছে। তাদের ব্যবস্থাগুলো এ ভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়।'

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে হার্ড ইমিউনিটি ব্যবস্থা সম্পর্কে এক আলোচনায় মহাপরিচালক বলেন, এই বক্তব্য শুধু টিকা নেওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন, ৯৫ শতাংশের মানুষ হামের টিকা নিলে বাকি ৫ শতাংশ টিকা না-নেওয়া মানুষকে রক্ষা করা যায়। অথবা, পোলিও ঠেকাতে অন্তত ৮০ শতাংশ মানুষ টিকা নিলে 'হার্ড ইমিউনিটি' অর্জন করা যেতে পারে। তিনি বলেন, হার্ড ইমিউনিটি ব্যবস্থা মানুষকে রক্ষার জন্য কাজে লাগানো হয়, এটি ভাইরাস সংক্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এ সম্পর্কে তিনি আরও বলেন,

'গণস্বাস্থ্যের ইতিহাসে কখনো 'হার্ড ইমিউনিটি ব্যবস্থাকে' মহামারী মোকাবিলার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হয় নি। এটি বিজ্ঞানসম্মত ও নৈতিকতাসম্পন্ন নয়। কারণ প্রথমত, কোভিড-১৯ রোগে মানুষের আক্রান্ত হওয়ার হার ভিন্ন। প্রত্যেক মানুষের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা এক নয়। এক্ষেত্রে প্রত্যেকের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হয়। কিছু রোগী দ্বিতীয়বার এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। দ্বিতীয়ত, অনেক দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সহজেই কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তৃতীয়ত, কোভিড-১৯ রোগীর সুস্থতার প্রভাব নিয়ে আমাদের গবেষণা মাত্র শুরু হয়েছে। এই সুযোগে ভাইরাস অবাধে ছড়িয়ে পড়ছে- যা অগ্রহণযোগ্য।'

তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসের কবল থেকে প্রাণ রক্ষার জন্য বিভিন্ন দেশ নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। কোভিড-১৯ রোগ ছোঁয়াচে ও অল্প দূরত্বে ছড়ায়। এমন কি, দ্রুত ও সহজেই বড় আওতায় সংক্রমণ ঘটতে পারে। হু'র জরুরি স্বাস্থ্য প্রকল্পের প্রযুক্তি বিভাগের প্রধান মারিয়া খেরখোভ বলেন, এক গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর হার প্রায় ০.৬ শতাংশ। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,

'আমরা কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তের হার এবং মৃত্যুর হার হিসাব করেছি। ০.৬ শতাংশ মৃত্যুর হার শুনতে বেশি মনে না হলেও তা ইনফ্লুয়েঞ্জার চেয়ে অনেক বেশি। এমনকি, এই হার বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আরও বাড়তে থাকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী সৌমিয়া স্বোয়ামিনাথান বলেছেন, 'কোভিড-১৯ টিকা কার্যকর পরিকল্পনায়' যোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ১৮০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চল। এতে বিশ্বের ৯০ শতাংশ মানুষ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে মোট ৪০টি টিকার ক্লিনিকাল পরীক্ষা চলছে। এর মধ্যে ১০টি তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকাল পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসে বা আগামী বছর সংশ্লিষ্ট টিকা পরীক্ষার তথ্য প্রকাশিত হবে।

(ওয়াং হাইমান/তৌহিদ/ছাই)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040