কখন যাবেন কায়রো
সাধারনত পুরো বছর জুড়েই কায়রোর আবহাওয়া বেশ শুষ্ক থাকায় এখানে সবসময়ই গরম বেশি থাকে। বিশেষ করে জুন থেকে আগস্ট মাসে বেশ গরম থাকে তাই এই সময়টাতে কায়রোতে না যাওয়াই ভালো। মার্চ থেকে এপ্রিল ও অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসের দিকে গরম কম থাকে। তাই শীতের শুরু থেকে বসন্তের প্রথম সময়টা মিসরের কায়রো যাওয়ার জন্য ভালো সময়।
কায়রোর দর্শনীয় স্থান
ইতিহাস বিজড়িত কায়রো শহরের প্রায় সকল স্থাপনা সুলতান ও অটোম্যান সম্রাজের সময়ের। মূলত প্রাচীন সময়কে কেন্দ্র করেই কায়রো শহরের অধিকাংশ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এই পুরো শহরে দেখার মতো জায়গার অভাব নেই যদি সময়ের অভাব না থাকে। আর কায়রো ও গিজা শহর কাছাকাছি হওয়ার কারনে এখানের অধিকাংশ টুরিস্ট স্পট গুলো দুই শহরের মাঝামাঝিতে অবস্থান করছে।
ইজিপ্সিয়ান মিউজিয়াম (Egyptian Museum) : তাহরির স্কোয়ার এর কাছে এই মিশরীয় জাদুঘরে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে রোমানদের শাসনকাল পর্যন্ত ইতিহাসের নানা নিদর্শন সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। এখানের অধিকাংশ শিল্প গুলো ফারাওদের সময়ের। এখানের বালক রাজা তুতানখামুনের ডেথ মাস্ক, তার শবাধার ও সমাধি থেকে উদ্ধারকৃত কোষাগার, ফেরাউনদের সিংহাসন, তাদের ওয়ারড্রোবের সংগ্রহ, মিশরীয়দের অলঙ্কার ও নিউ কিংডম রয়্যাল মমি পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ।
দা সিটাডেল (The Citadel) : এই দুর্গ মোকাত্তাম পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত যা ১১৭৬ সালে সালাদিন নির্মাণ করেছিলেন। এই দুর্গের মূল কাঠামোর সাথে পরবর্তীতে এখানে আরও কিছু স্থাপনা তৈরি করা হয়। এখানের মোহাম্মদ আলির মসজিদ পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ। সাদা পাথরে তৈরি লম্বা এই মিনারটি কায়রোর বিশেষ একটি স্থাপনা। এখানের গাওহারা টেরেস থেকে শহরের সবচেয়ে সুন্দর প্যানোরোমা দেখার সুযোগ হবে। এই মসজিদের উত্তর-পুর্ব দিকে সুলতান হাসান এল নাসিরের নির্মিত মসজিদ আছে যামামলুক স্থাপত্যের এক অন্যান্য নিদর্শন। এখানে কয়েকটি ভবন নিয়ে পুলিশ জাদুঘর, ন্যাশনাল মিলিটারি জাদুঘর ও ক্যারিজ জাদুঘর গড়ে উঠেছে।
আল আযহার মসজিদ (Al Azhar Mosque) : ৯৭০ খ্রিস্টাব্দে একজন ফাতিমিদ খলিফার নেতৃত্বে গড়ে উঠা আল আযহার মসজিদটি কায়রোর সর্ব প্রথম মসজিদ। বর্তমানে এই মসজিদ মুসলিমদের বিভিন্ন কর্মশালা ও শিক্ষার স্থান হিসেবে পরিচিত একই সাথে বিখ্যাত আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয় ও এই মসজিদের অন্তর্ভুক্ত। মুসলিম সহ সবার জন্য উন্মুক্ত এই টুরিস্ট স্পটে পর্যটকরা মূলত এই মসজিদের সাদা মার্বেলের চত্বরের চমৎকার স্থাপত্য ও সুসজ্জিত প্রার্থনা হল দেখতে আসে।
ওল্ড কায়রো বা কপটিক কায়রো : কায়রো শহরের ডেল্টা অঞ্চলে অবস্থিত এই বিশাল দুর্গ একসময় ব্যাবিলন ফরট্রেস হিসেবে পরিচিত ছিল। এখানের কপটিক মিউজিয়াম মিশরের অন্যতম প্রাচীন কপটিক আর্টের সংগ্রহশালা যেখানে মিশরের খ্রিস্টীয় সময়ের অনেক তথ্য সংগৃহীত আছে। এখানের চার্চ অফ সেন্ট সেরজিয়াস এবং বাচ্চাস পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ।
দা হ্যাংগিং চার্চ: কপটিক কায়রোর কেন্দ্রে এই হ্যাংগিং চার্চ অবস্থিত। এখানের বর্তমান ভবনটি সপ্তম শতাব্দীর সময়ের যা মিশরের প্রাচীন চার্চ গুলোর মধ্যে অন্যতম। রোমান ব্যাবিলিয়ন দুর্গের গেট হাউজের উপর এর অবস্থান হবার কারনে এটি ঝুলন্ত অবস্থায় অবস্থান করছে আর তাই এই চার্চের এমন নামকরন করা হয়েছে। এই চার্চের ভিতরের ইন্টেরিয়র বেশ সুন্দর, কাঠের সিলিং-এ ঘেরা চার্চের ভিতরে মার্বেলের ডায়াস ও ধর্মীয় বিভিন্ন সংগ্রহ রাখা হয়েছে।
খান এল খালিলি মার্কেট (Khan El Khalili Market) : কায়রো শহরের এক অন্যতম আকর্ষণ এই মার্কেট। মূলত সোনা, রুপা ও মেটালের বিভিন্ন জিনিস বানানো সহ কেনাবেচা হয় এই মার্কেটে। এখানে প্রাচীন মেটালের জিনিস থেকে শুরু করে স্থানীয়দের হাতে বোনা ল্যাম্প শেডসহ আরও অনেক কিছু পাবেন।
আল আযহার পার্ক (Al Azhar Park) : পুরনো শহরে এক সবুজের সমাহার এই পার্ক। এখানে ছুটির দিনে বিকেল বেলা উপচে পড়া ভিড় হয়। এখান থেকে সূর্যাস্তের সময় পুরাতন কায়রো শহরের দৃশ্য মুগ্ধ করার মতো। এর সাথেই বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট আছে। শহরের অন্যান্য স্থাপনা ঘুরে ক্লান্তি দূর করতে চলে আসতে পারেন এই পার্কে।
তাহির স্কোয়ার (Tahir Square) : কায়রো শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত এই জায়গা শহিদদের স্মৃতি বিজারিত একটি স্থান। রাজনৈতিক বিক্ষোভের জন্য বিখ্যাত এই জায়গা।
গেজারিয়া (Gezariya) : কায়রো শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত নীল নদের তীরে গড়ে উঠা আইল্যান্ড। দ্বীপের দক্ষিনে গেজিরা জেলা ও উত্তরের দিকে জামালেক অবস্থিত।
কায়রো অপেরা হাউজ (Cairo Opera House) : নীল নদের গেজিরা দ্বীপের দক্ষিনে অবস্থিত এই অপেরা হাউজ কায়রো শহরের ন্যাশনাল কালচারার সেন্টারের একটি অংশ।
মিউজিয়াম অফ ইসলামিক আর্ট (Islamic Art Museum ) : কায়রো শহরের প্রান্তে অবস্থিত এই জাদুঘরে বিশ্বের সেরা ইসলামিক শিল্পের সংগ্রহ আছে। এই জাদুঘর শুধু মিশরের না বরং পুরো মধ্য প্রাচ্যের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ভাবে সাজানো জাদুঘর।
মেম্ফিস (Memphis) : ওল্ড কিংডমের সময় ২,০০০ বছর পুরানো মেম্ফিস মিশরের রাজধানী শহর ছিল। যা বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত। তবে এখানের অনেক প্রাসাদ লুট করে ভেঙ্গে ফেলা হলেও খোলা জাদুঘরে সংরক্ষিত রামসেসের বিশাল মূর্তি এখনো পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয়। কিভাবে যাবেন কায়রো
ঢাকা থেকে সৌদি এরাবিয়ান, কুয়েত, টার্কিশ, ব্রিটিশ বা এয়ার এরাবিয়া এয়ার লাইন্স বা এমিরেটসে যেতে পারবেন মিশরের কায়রোতে। এয়ার লাইন্সের উপর নির্ভর করে সময় লাগবে ১০ থেকে সাড়ে ১৪ ঘণ্টা।
কোথায় ও কি খাবেন
কায়রোতে স্থানীয়রা মূলত রুটি, ভাত ও ডাল বেশি খায়। আর এখানে বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা ঘুরতে আসে তাই স্থানীয় খাবারের পাশাপাশি বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট আছে যেখানে অন্যান্য দেশের ও খাবার পাওয়া যায়। যেমন- বার্ড কেজের থাউ খাবার, সোগানে জাপানিজ খাবার, লেফট ব্যাঙ্কের মতো রেস্টুরেন্টে ইউরোপিয়ান খাবারের সাথে সাথে স্থানীয় রেস্টুরেন্টের মধ্যে আবু তারেক, যুবা, আবু এল সিড,সাবায়া, সেকুওইয়া ও ফেলফেলা-তে খেয়ে দেখতে পারেন ভালো লাগবে।
কিছু টিপস
এখানে ডলার বা পাউন্ড এক্সচেঞ্জ করা ঝামেলা তাই লোকালি এখানে এক্সচেঞ্জ করতে হলে কিছুটা লসে ভাঙ্গাতে হবে।
কায়রো শহরে বিদেশীদের ক্ষেত্রে সব জিনিসের দাম বেশী রাখা হয় তাই যতটা সম্ভব দামাদামি করবেন।
এখানে যাতায়াতের জন্য মেট্রোতে চলাফেরা করা সবচেয়ে ভালো, এতে খরচ ও সময় দুটোই বাঁচবে।
কিছু জায়গায় মেট্রো বাস যায় না সেই ক্ষেত্রে ট্যাক্সিতে যাতায়াত করা ভালো।
আল আযহার মসজিদে অবশ্যই জুতা খুলে প্রবেশ করবেন।