মালভূমিতে শাকসবজি চাষের গল্প
  2020-10-07 17:07:10  cri

"তখন অনেক গ্রামবাসিন্দা শাকসবজিকে খাস মনে করতেন। তারা টমেটোর রঙ সবুজ থেকে লাল হয়ে যায় দেখে অবাক হতেন এবং আমার কাছে এসে জিজ্ঞাস করতেন, টমেটোর রঙ পরিবর্তন হয়েছে, এখন কী করা?' ২০ বছর আগের এ অভিজ্ঞতা স্মরণ করে ছাং চি মিং হাসেন।

২০ বছর আগে, চাং চি মিং তিব্বতে আসেন এবং এখানে শাকসবজি চাষের কৌশল শেখাতে শুরু করেন স্থানীয়দের। তিনি স্বচোখে মালভূমিতে শাকসবজি শিল্পের উন্নয়ন দেখেছেন।

আগে তিব্বতে কেবল অভিজাত সম্প্রদায়ের মানুষ শাকসবজি খেতেন। সারা তিব্বতে মাত্র লাসা ও শিগাটসের কোনো কোনো জেলায় বিক্ষিপ্তভাবে মূলা ও আলু চাষ হতো। পরিমাণ ও শাকসবজির ধরন খুবই কম ছিল।

২০ বছর আগে, তিব্বতে সহজে শাকসবজি পাওয়া যেত না। মূল তিব্বতের বাইরে থেকে এখানে শাকসবজি আসতো। অনেক মানুষ বাইরে থেকে তিব্বতে ফিরে আসার সময় শাকসবজি নিয়ে আসতেন। শাকসবজি নিয়ে বিমানযোগে আসা একসময় তিব্বতের বিশেষ একটি দৃশ্য ছিল। তখন মাংসের চেয়ে শাকসবজির দাম বেশি ছিল বলে শোনা যায়।

১৯৯৮ সালে, শিগাটসের পাই লাং জেলা ও শানতুং প্রদেশের চিনান শহরের মধ্যে সহায়তার সম্পর্ক গঠন করা হয়। শানতুং শাকসবজি চাষের বড় একটি প্রদেশ। চিনান সরকারের কর্মকর্তা পাই লাং জেলায় মালভূমি শাকসবজি চাষের পরিকল্পনা উত্থাপন করেন এবং দু'বছর পর চাং চি মিংসহ একদল শাকসবজি চাষের প্রযুক্তিবিদ পাইলাং জেলায় আসেন।

তিব্বতে আসার পর চাং চি মিংরা নানান ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন। প্রথম সমস্যা উচ্চতাজনিত অসুস্থতা। মাথা ঘোরা, শক্তির অভাব। এমনকি, তিনি খেতেও পারতেন না। আরও খারাপ ব্যাপার হল, শুরুতে জেলায় বিদ্যুত চালু হয়নি; তারা তিব্বতি ভাষাও বুঝতে পারতেন না। বিশেষ করে স্থানীয় মানুষ বিশ্বাস করতেন না যে, এখানে শাকসবজি চাষ সম্ভব হবে। এতো বেশি সমস্যার সম্মুখীন হয়ে চাং চি মিং একসময় হাল ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তিনি হাল ছেড়ে দেননি। প্রযুক্তিবিদরা সাইকেল চালিয়ে এক একটি পরিবারে যেতেন এবং তাদেরকে শাকসবজি চাষের কৌশল শেখাতেন।

গ্রামবাসিন্দাদের শাকসবজি চাষে রাজি করানোর জন্য চাং চি মিংকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। তিনি তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেন যে, শাকসবজি চাষ সফল হলে সব আয় তাদের, কিন্তু ক্ষতি হলে তা তিনি বহন করবেন। শাকসবজি কীভাবে চাষ করতে হবে, কীভাবে বিক্রয় করতে হবে, কীভাবে ওজন করতে হবে—ইত্যাদি সবকিছুই তিনি গ্রামবাসীদের শেখাতেন। সবকিছু তিনি স্থানীয় মানুষকে শুরু থেকে শিখিয়েছেন। এভাবে চাং চি মিংয়ের কাছে শাকসবজি চাষ শেখা মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে।

চীনে বৃহত্তম শাকসবজি চাষ কেন্দ্র শানতুং প্রদেশের সৌ কুয়াং জেলা এবং এখন তিব্বতে সবচেয়ে বড় ও আধুনিক শাকসবজি চাষ কেন্দ্র পাই লাং জেলা। এখন পাই লাং জেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় পর্যায়ের শাকসবজি উত্পাদন দৃষ্টান্ত এলাকা এবং ১০ হাজার মু পর্যায়ের শাকসবজি ও ফল চাষ শিল্প পার্ক নির্মিত হচ্ছে।

এখন পাই লাং ছাড়া আরও দূরে আলি ও না ছুসহ তিব্বতের নানা অঞ্চলে শাকসবজি শিল্প উন্নয়ন হচ্ছে। এমনকি, সীমান্তের ফাঁড়িতে নির্মিত হয়েছে গ্রীন হাউস এবং সৈনিকরাও এখন শাকসবজি খেতে পারেন।

২০১৯ সালে তিব্বতে শাকসবজি চাষের জমির আয়তন ৩.৯ লাখ মু এবং উত্পাদনের পরিমাণ ৯.৭ লাখ টন ছিল। গ্রীষ্মকাল ও শরত্কালে প্রধান শহর ও জেলার শাকসবজি সরবরাহের হার ৮৫ শতাংশ এবং বসন্তকাল ও শীতকালে বাজারে ৬৫ শতাংশ শাকসবজি তিব্বতে চাষ হয়।

সাংবাদিকরা শিগাটসের একটি বাজারে দেখেছেন প্রায় সব ধরনের শাকসবজি এখানে পাওয়া যায়। মুলার দাম প্রতি কেজি ৪ ইউয়ান, স্কোয়াশ প্রতি কেজি ৩ ইউয়ান, বাঁধাকপি প্রতি কেজি ২ ইউয়ান। স্থানীয় মানুষ সস্তা ও ভাল মানের শাকসবজি এখন খেতে পারেন।

পাই লাং জেলার পেং ছাং গ্রামের বাসিন্দা ৭৩ বছর বয়সী পিয়ান পা তুন চু বলেন, আগে স্থানীয় মানুষ এমনকি শসা, টমেটো কখনও দেখেনি। কীভাবে খাওয়া হবে—তাও জানতো না। এখন সবাই শাকসবজি খায় এবং রান্নার বিভিন্ন পদ্ধতিও শিখে নিয়েছে। স্থানীয় প্রথম শাকসবজির গ্রীন হাউস এ গ্রামে নির্মিত হয় এবং চাং চি মিংয়ের কাছ থেকে পিয়ান পা তুন চু শাকসবজি চাষ শিখেন। এ শিল্পের মাধ্যমে পেং ছাং গ্রামও উন্নত একটি গ্রামে পরিণত হয়। শাকসবজি চাষ করার পর স্থানীয় মানুষের টেবিলে গরু ও খাসীর মাংস ছাড়া এখন শাকসবজিও দেখা যায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তিব্বতের মানুষের গড় আয়ু ৩৫.৫ থেকে ৭০.৬ বছরে উন্নীত হয়েছে। মনে করা হয়, চিকিত্সার পরিবেশ উন্নয়ন ছাড়া শাকসবজি খাওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে।

পিয়ান পা তুন চু বলেন, এখন গ্রামে ৬০ বছর বা তার চেয়ে বয়সী মানুষের সংখ্যা ৪০ জনের বেশি এবং এর মধ্যে একজনের বয়স ৯০ বছর ছাড়িয়েছে।

পাশাপাশি শাকসবজি চাষ দারিদ্র্যবিমোচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিও বটে। পাই লাং জেলায় ৪০০০ জনের বেশি মানুষ শাকসবজি ও ফল চাষের মাধ্যমে দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছেন এবং পাই লাং এখন মালভূমি শাকসবজি ও ফল চাষের নবায়ন ও প্রযুক্তি কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

জ্বালানি সাশ্রয়ী গ্রীন হাউস, কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ... শান তুং চু নুং সেং ইউয়ু কৃষি প্রযুক্তি কোম্পানির দায়িত্বশীল ব্যক্তি সাংবাদিককে পরিচয় দেন মালভূমি শাকসবজি চাষের বিশেষ ও নতুন প্রযুক্তির। তিনি বলেন, এখানে কোনো শিল্প নেই। বায়ু, জমি ও পানি সব ভালমানের। শীত এবং দিন-রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান বেশি হওয়া স্থানীয় আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্য এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে স্থানীয় আবহাওয়ার অসুবিধা প্রাধান্যে পরিণত হতে পারে। মালভূমির শাকসবজির বিশেষ স্বাদ আছে এবং দেশ-বিদেশের মানুষের খাবারের টেবিলে এ ধরনের সবজি পৌঁছে দেওয়া কোম্পানির একটি উদ্দেশ্য।(শিশির/আলিম/রুবি)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040