আসলে প্রাচীনকালেও চীনে জাতীয় দিবস ছিলো, তবে তা ছিলো সম্রাটের সিংহাসনে আরোহণের তারিখ। তাই তখন জাতীয় দিবসের তারিখ বার বার বদলাতো। আর এ দিবস ছিলো রাজকীয় পরিবারের ব্যাপার----যেমন উপাসনা, রাজকীয় ভোজ, ইত্যাদি। সাধারণ লোক এতে অংশ নিতে পারতো না। ১৯৫০ সাল থেকে পয়লা অক্টোবর সারা দেশের জনগণের একটি দিবসে পরিণত হয়।
জাতীয় দিবসে রাজধানী বেইজিংয়ের থিয়ান আন মেন মহাচত্বর সবার নজরের কেন্দ্রে থাকে। থিয়ান আন মেন বেইজিং শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত। থিয়ান আন মেন তোরণ-ভবন হলো প্রাচীনকালে সম্রাটের প্রাসাদ 'নিষিদ্ধ নগরের' তোরণ-ভবন । ১৯৪৯ সালের পয়লা অক্টোবর থিয়ান আন মেন তোরণ-ভবনের উপরেই চীনা নেতা মাও সে তোং গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন এবং এ খবর বেতারের মাধ্যমে সারা দেশে প্রচারিত হয়। তাই এই থিয়ান আন মেন চীনাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ।
জাতীয় দিবসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে থিয়ান আন মেন তোরণ-ভবনের সামনে আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান। চীনের শীর্ষ নেতা ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এ কুচকাওয়াজ দেখেন। আর এ অনুষ্ঠান টেলিভিশনে সরাসরি প্রচার করা হয়। তবে এ অনুষ্ঠান প্রতিবছর আয়োজিত হয় না, শুধু গুরুত্বপূর্ণ বছরে তা আয়োজিত হয়। যেমন দেশ প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী, ৬০ তম বার্ষিকী ইত্যাদি।
কুচকাওয়াজ ছাড়া, থিয়ান আন মেন মহাচত্বরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। পয়লা অক্টোবর ভোরে সামরিক ব্যান্ডের সদস্যরা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এটা খুব জাঁকজমকপূর্ণ একটি অনুষ্ঠান। অনেক লোক এ অনুষ্ঠান দেখার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে আসেন এবং সারা রাত মহাচত্বরে অপেক্ষা করেন।
জাতীয় দিবসে কুচকাওয়াজ ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন ছাড়া থিয়ান আন মেন মহাচত্বরের আরো একটি আকর্ষণীয় ব্যাপার হলো ফুলের সাজসজ্জা।
এ সময় থিয়ান আন মেন মহাচত্বর অসংখ্য ফুল দিয়ে সুন্দরভাবে সাজানো হয়। স্থানটি পরিণত হয় এক অপূর্ব ফুল-বাগানে।
জাতীয় দিবসে চীনে সাত দিনের সরকারি ছুটি থাকে এবং আবহাওয়া থাকে বেশ চমত্কার। তাই এই সাত দিনের ছুটিকে চীনারা 'স্বর্ণ সপ্তাহ' বলে।
জাতীয় দিবসের সময় দেশের প্রায় সব পর্যটন স্থানে খুব ভিড় থাকে। বিশেষ করে বেইজিংয়ের পর্যটন স্থান। এমন ভিড় এড়ানোর জন্য অনেকে বিদেশ ভ্রমণ করে বা শুধু বাড়িতে বিশ্রাম নেয়। তবে যেখানেই যাওয়া যাক না কেন, সবখানেই এ দিবসের আমেজ চোখে পড়ে।
এ বছর কোভিড-১৯ মহামারির বছর। চীনে মহামারি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তারপরও সবাই সতর্ক। এই সতর্কতার মধ্যেই চীনের মানুষ জাতীয় দিবসের ছুটি কাটাবে। দেখা যাবে, পরিবারের সদস্যদের একসাথে রেস্তোরাঁয় খেতে বা শপিংমলে জিনিস কিনতে। আবার কেউ কেউ ভ্রমণে বের হবেন। এ বছরের জাতীয় দিবসের দিনেই চীনের ঐতিহ্যবাহী উত্সব –মুন কেক উত্সব। এবার দুটি উত্সব এক দিনে পালিত হচ্ছে বলে, এর আলাদা তাত্পর্য রয়েছে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)