বিদ্যাবার্তা ০৯২৮
  2020-09-29 10:28:54  cri

 


২০১১ সালে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের উদ্যোগে 'গ্রামাঞ্চলের বাধ্যতামূলক শিক্ষার্থীদের জন্য পুষ্টিকর খাবার প্রদান পরিকল্পনা' প্রকাশিত হয়। এতে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য খাবারের মান উন্নত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এ পরিকল্পনা গ্রহণের ১০ বছর পর এখন চীনের গ্রামাঞ্চলের বাচ্চাদের খাবার কেমন হয়েছে? আজকের অনুষ্ঠানে এ বিষয় সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরবো।

খাবারের মান অনেক উন্নত হয়েছে ও শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থাও ভালো হয়েছে

কুইচৌ প্রদেশের সিথাং জেলার থাংথৌ প্রাথমিক স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র থাং ইয়ু খাং হাসিমুখে সহপাঠীদের সাথে লাঞ্চ খায়। কারণ, প্রতিদিন দুপুরবেলায় স্কুলের কান্টিনে তিনটি ডিশ ও একটি সুপ খেতে পারে সে। অতীতে অনেক পরিবারের বাবা-মা কাজের জন্য লাঞ্চ তৈরি করতে পারতেন না। তাই বাচ্চারা শুধু রাস্তায় কিছু খাবার কিনে খেয়ে তৃপ্ত থাকতো। তবে স্কুলে পুষ্টিকর খাবার ব্যবস্থা চালু করার পর বাচ্চারা সুস্বাদু খাবার খেতে পারছে।

চীনা সরকারের নিয়ম অনুসারে, বর্তমানে বিভিন্ন স্কুলে পুষ্টিকর খাবার বিতরণ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে। স্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন মাথাপিছু ৪ ইউয়ান ভর্তুকি দেওয়া হয়। এ সম্পর্কে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষক ব্যুরোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, চীনের গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দাদের মাথাপিছু খাবারের ব্যয় অনুসারে এ ভর্তুকি নির্ধারিত হয়েছে। এতে স্কুল ছাত্রছাত্রীদের খাবার সরবরাহ করতে পারে। কান্টিন চালুর খরচ ও কর্মীদের বেতন আঞ্চলিক সরকার দিয়ে থাকে। গ্রামাঞ্চলের দ্রব্যমূল্য নিম্ন পর্যায়ের, তাই এ ভর্তুকি ছাত্রছাত্রীদের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। বর্তমানে চীনের ২৯টি প্রদেশের ১৭৬২টি জেলায় এ পুষ্টিকর খাবার কার্যক্রম চালু আছে। এ কার্যক্রমের আওতায় গ্রামাঞ্চলের প্রায় ১.৫ লাখ স্কুল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা মোট সংখ্যার ৮৪.১২ শতাংশ। মোট ৪ কোটি ৬ লাখ ১ হাজার শিক্ষার্থী এতে উপকৃত হচ্ছে। এরা গ্রামাঞ্চলের মোট শিক্ষার্থীর ৪২.৪ শতাংশ।

কুইচৌ প্রদেশের বিচিয়ে শহরের চুছাং প্রাথমিক স্কুলের প্রেসিডেন্ট ওয়াং লুং বলেন, প্রতিদিন মাথাপিছু ৪ ইউয়ান দিয়ে তিনটি ডিশ ও একটি সুপ পাওয়া যায়। এর মধ্যে মাংসও থাকে। প্রতি সপ্তাহে ডিশও হয় ভিন্ন ভিন্ন। পুষ্টিকর খাবার সরবরাহকারী সংশ্লিষ্ট খাবার-কোম্পানি ডিশের তালিকাও দিয়ে থাকে।

বাচ্চাদের নিরাপদ খাবার প্রদানে ইয়ুননান প্রদেশের ইয়ুলুং জেলার নাসি জাতিঅধ্যুষিত জেলায় ২০১২ সাল থেকে বিভিন্ন স্কুলে ফ্রেশ ক্যাবিনেট প্রদান করা হয়েছে এবং নতুন কান্টিনও নির্মিত হয়েছে। এ সম্পর্কে ইয়ুলুং জেলার শিক্ষা ব্যুরোর প্রধান ইয়াং সিয়াও ছুয়ান বলেন, বর্তমানে জেলার ১১০টি সরকারি স্কুলের মধ্যে ৯২টিতে ক্যান্টিন নির্মিত হয়েছে এবং অন্যান্য ১৮টি স্কুলের জন্য প্রতিদিন সময়মতো পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের সময়টা বাচ্চাদের বড় হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সময়পর্ব। তাই ভারসাম্য ও পুষ্টিকর খাবার তাদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। কুইচৌ প্রদেশের সিনান জেলার থাংথৌ প্রাথমিক স্কুলের প্রেসিডেন্ট উ তা ছুয়ান বলেন, গত কয়েক বছরে পুষ্টিকর খাবার ও হোস্টেলের মান উন্নতির সাথে সাথে বাচ্চাদের স্বাস্থ্যেও ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। প্রতিবছরের নভেম্বর মাসে খেলাধুলা প্রতিযোগিতায় স্কুলের বাচ্চাদের ফলাফল আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে।

চলতি বছরের মে মাসে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা পর্যবেক্ষক ব্যুরোর প্রকাশিত 'গ্রামাঞ্চলের বাধ্যতামূলক শিক্ষার্থীদের পুষ্টিকর খাবার পরিকল্পনা সারাংশ প্রতিবেদন' থেকে জানা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ব্যাপক উন্নত হয়েছে এবং শারীরিক মানও স্পষ্টভাবে উন্নত হয়েছে। চীনের রোগ প্রতিরোধক ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০১৯ সালে এ কার্যক্রমের মাধ্যমে ছাত্র ও ছাত্রীদের গড়পড় উচ্চতা যথাক্রমে ১.৫৪ সেন্টিমিটার ও ১.৬৯ সেন্টিমিটার এবং ওজন যথাক্রমে ১.০৬ কেজি ও ১.১৮ কেজি বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ সম্পর্কে চীনের শিক্ষা ও বিজ্ঞান গবেষণাগারের গবেষক রেন ছুন রুং বলেন, গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের বাবা-মারা অনেকে বড় শহরে চাকরি করেন, বাচ্চাদের জন্য লাঞ্চ করার সময় ও সুযোগ থাকে না। গ্রামাঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে অনেকের বাড়ি ও স্কুলের সাথে দূরত্ব বেশি। তাই বাড়িতে লাঞ্চ খাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য অসম্ভব। পুষ্টিকর খাবার পরিকল্পনার মাধ্যমে বাচ্চাদের লাঞ্চ নিশ্চিত করা হয়েছে এবং বাচ্চাদের বাবা-মাও চিন্তা ছাড়া ভালভাবে কাজ করতে পারছেন।

খাবারের মান ও নিরাপত্তা

পুষ্টিকর খাবার কার্যক্রম চালু করার পর থেকে এ পর্যন্ত চীনের কেন্দ্রীয় সরকার ও বিভিন্ন অঞ্চলের সরকারি বিভাগ খাবার ও বরাদ্দের নিরাপত্তা নিশ্চিতে মনোযোগ দেয়। ২০১১ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এ পরিকল্পনায় মোট ১৪৭.২ বিলিয়ন ইউয়ান বরাদ্দ দিয়েছে চীন সরকার।

প্রতিটি নতুন সেমিস্টারের আগে ইয়ুননান প্রদেশের ইয়ু লুং জেলার চিউহ্য মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষার্থীদের বাবা-মাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বাচ্চাদের খাবার টেস্ট করানো হয়। এভাবে খাবারের মান ও স্বাদ সম্পর্কে জানতে সক্ষম বাবা-মা।

খাবারের মান নিশ্চিত করতে স্কুল ও রেস্তোরাঁর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুসারে দুধ ও ডিমসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার কেনা হয়। তা ছাড়া, খাবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন স্কুলে খাবারের কাঁচামাল কেনা, টেবিলওয়্যার নির্বীজনসহ বিভিন্ন তদারকি-ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

গত বছরের মার্চ ও সেপ্টেম্বর মাসে ইয়ুননান প্রদেশের লিচিয়াং শহরের বিভিন্ন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে দু'বার সার্বিক পরীক্ষাব্যবস্থা চালু করা হয়। স্থানীয় তদারকি আইন প্রয়োগকারীরা খাবারের কাঁচামাল কেনা, খাবার স্যাম্পল চেকআপ এবং কর্মীদের স্বাস্থ্যপত্রসহ বিভিন্ন বিষয় তদারকি করেন।

পুষ্টিকর খাবার কার্যক্রমের বরাদ্দ রক্ষায় কঠোর ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এ বরাদ্দের প্রত্যেক সেন্ট ছাত্রছাত্রীদের জন্য খাবার কিনতে হয়। এসব টাকা ছাত্রছাত্রীদের জীবনমান উন্নত করার জন্যই কেবল ব্যবহার করতে হয়। তাই সাবধানে তা ব্যবহার করতে হবে। এ সম্পর্কে কুইচৌ প্রদেশের সিনান জেলার স্কুলের প্রেসিডেন্ট উ বলেন, প্রতিসপ্তাহে খাবারের ব্যয় হিসাব করা হয়ে থাকে এবং নিয়মিতভাবে সবাইকে জানানো হয়। বিচিয়ে শহরের শিক্ষা ব্যুরোর পুষ্টিকর খাবার কার্যালয়ের কর্মী ক্য তি বলেন, পুষ্টিকর খাবার বরাদ্দ অনলাইনে দেওয়া হয়, তাই স্কুল শুধু অনলাইনে টাকার পরিমাণ দেখতে পায়। তবে আসল টাকা দেখতে পায় না। এতে দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব হয়। স্কুলে পড়াশোনার সময়, শিক্ষার্থীদের মোট সংখ্যা হিসাব করার পর সংশ্লিষ্ট স্কুলের কাছে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

গত বছরের অগাস্ট থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মীরা সিছুয়ান ও ইয়ুননান প্রদেশের বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শন করেন এবং সেখানকার খাবার সরবরাহ কোম্পানি বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো পর্যবেক্ষণ করেন। এ বরাদ্দ ব্যবহারের অবস্থাও তদারকি করা হয়। বিশেষ প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে তেল, ময়দা, চাউল কেনার মানদন্ড আরও সুশৃঙ্খল হয়েছে এবং অর্থ প্রশাসনের চেতনাও জোরদার করা হয়েছে।

ফুচিয়ান প্রদেশের ইউশি জেলা দুই বছর আগে পরীক্ষামূলক জেলায় পরিণত হয়। সেখানকার একটি কোম্পানি স্কুলের খাবারের কেনা ও সরবরাহের দায়িত্ব পালন করছে। এ সম্পর্কে কোম্পানির দায়িত্বশীল ব্যক্তি ছেন ই জি বলেন, বর্তমানে ফুচৌ, সিয়ামেন ও ইউশিসহ ২০টিরও বেশি সবজিঘাঁটির সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। বাজার, সরবরাহকারী ও কোম্পানি তিন তিন বার টেস্টে পাস হলেই কেবল স্কুলের জন্য খাবার সরবরাহ করতে পারে।

আসলে চীনের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে পুষ্টিকর খাবারের দামও আলাদা। এ সম্পর্কে শিক্ষা খাতের গবেষক রেন ছুন রুং বলেন, চীনের অবস্থা অনুসারে গুণগত মানসম্পন্ন খাবার প্রদানে '৪ প্লাস এক্স' নীতি চালু করা ভালো। চীনের আনহুই প্রদেশের চিনজাই জেলার পুষ্টিকর খাবার কর্মদলের দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানান যে, দ্রব্যমূল্য ও কর্মীদের খরচ বৃদ্ধির সাথে সাথে ৪ ইউয়ানের ভর্তুকি আর যথেষ্ট মনে হচ্ছে না। তাই বাচ্চাদের গুণগত মানসম্পন্ন খাবার নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকারের ভর্তুকিও কিছুটা বাড়াতে হবে। 'এক্স' মানে ভিন্ন স্থানের অবস্থা অনুসারে শিক্ষার্থীদের বাবা-মার পক্ষ থেকে ভিন্ন পরিমাণের ফি জমা দেওয়া। বড় শহরের দ্রব্যমূল্য বেশি এবং বাচ্চাদের আর্থিক অবস্থাও দূরবর্তী দরিদ্র এলাকার চেয়ে ভালো। তাই এ পরিমাণ কিছুটা বেড়ে যায়।

সুপ্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়, আজকের বিদ্যাবার্তা অনুষ্ঠানের সময় শেষ হয়ে এলো। সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারেন বা মিস করেন, আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali.cri.cn,আমাদের যোগাযোগ ইমেল ঠিকানাben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn

তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে একই সময় একই দিনে আবার কথা হবে। যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040