চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতভেদের সারমর্ম কী?
  2020-09-24 11:22:48  cri

সম্প্রতি চীনের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ফ্রান্সের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কলেজে বক্তব্য দেয়ার পর সংশ্লিষ্ট অতিথির প্রশ্নের জবাবে বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতভেদ বা দ্বন্দ্বকে ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা, অবস্থার প্রতিদ্বন্দ্বিতা, বা সামাজিক ব্যবস্থার প্রতিদ্বন্দ্বিতা বলা যাবে না। এই মতভেদ হচ্ছে বহুপক্ষবাদ ও একতরফাবাদ এবং পারস্পরিক কল্যাণ ও জিরোসাম গেমের মধ্যকার দ্বন্দ্ব। আর এটি হচ্ছে বর্তমানে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের সমস্যার মূল কারণ।

বিগত দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্র বার বার একদরফাবাদ ও সংরক্ষণবাদের পক্ষের শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র একদিকে নিজের স্বার্থ বিবেচনা করে বহু আন্তর্জাতিক বহুপাক্ষিক সংস্থা থেকে বেরিয়ে গেছে এবং বড় রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনে বিরত থেকেছে; অন্যদিকে নিজের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভারসাম্যহীনতার দোষ বাইরে চালান করতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক বিবাদ সৃষ্টি করেছে। উদাহরণস্বরূপ, চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ও বৈজ্ঞানিক লড়াইয়ের কথা উল্লেখ করা যায়।

দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, এর মধ্যে কোভিড-১৯ মহামারিও দেখা দিয়েছে। এতেও চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দোষ চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা বন্ধ হয়নি। বরং পরিস্থিতি হয়েছে উল্টো। চীনকে কোভিড-১৯ মহামারির জন্য বার বার দোষ দেওয়া, হংকং বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা, এবং দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক শক্তির দম্ভ দেখানোসহ বিভিন্ন ধারাবাহিক অপতত্পরতা চালিয়েছে মার্কিন প্রশাসন, সৃষ্টি করেছে দু'দেশের সম্পর্কের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। বস্তুত, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নষ্টের অপচেষ্টা চালিয়েছে ওয়াশিংটন। কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষার দায়িত্ব পররাষ্ট্রমন্ত্রীর, অথচ মাইক পম্পেও মতাদর্শের ব্যবধানের অজুহাতে চীনের ওপর নতুন দফার ঠাণ্ডাযুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে সেই কবে থেকেই। 'ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস্‌'এর একজন লেখক বলেছেন, ওয়াশিংটনে এমন একটা অনুভূতি কাজ করে যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের যুদ্ধ চলছে। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, এটা মোটেই সঠিক নয়। এ সম্পর্কে মার্কিন প্রশাসনের তেমন কোনো সচেতনতা আছে বলেও মনে হয় না।

'আধিপত্যবাদ' একটি দেশের সমৃদ্ধি বজায় রাখার উপায় হতে পারে না। দুই হাজার বছর আগে 'বসন্ত ও শরৎ যুগে' প্রাচীন চীনে 'আধিপত্যবাদ রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর' শীর্ষক ধারণা ছিল। দীর্ঘ ইতিহাসে চীনা জাতি কখনও অন্য দেশে গিয়ে উপনিবেশ স্থাপন করার চেষ্টা করেনি। কখনও 'সভ্যতার সংঘর্ষ' এবং 'রেস সংঘর্ষ'-সহ নেতিবাচক ধারণা দ্বারাও প্রভাবিত হয়নি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, এক দায়িত্বশীল বড় রাষ্ট্র হিসেবে, চীন 'এক অঞ্চল, এক পথ' শীর্ষক যৌথ উদ্যোগ বাস্তবায়নের প্রস্তাব তুলে ধরে। চীনের উদ্যোগে এশিয়া অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) স্থাপিত হয়েছে। এটি বিগত কয়েক দশকে যেসব দেশ অর্থনীতির বিশ্বায়নে তেমনভাবে যোগ দিতে পারেনি, তাদের বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

মার্কিন একতরফাবাদের কারণে, আরও উন্মুক্ত চীন অর্থনীতি, বিজ্ঞান, গণস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বেইজিং-থিয়ানচিন-হ্যপেই'র সমন্বিত উন্নয়ন, ইয়াংসী নদীর অর্থনৈতিক এলাকা, কুয়াংতুং- হংকং-ম্যাকাও গ্রেটার বে এরিয়া, ইয়াংসি নদীর বদ্বীপ অঞ্চলের একীকরণ এবং হাইনান অবাধ বাণিজ্য বন্দরসহ বহু প্ল্যাটফর্মের প্রতিষ্ঠাকাজ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

চীন ১৪০ কোটি মানুষের দেশ। এই দেশে মধ্যবিত্তের সংখ্যা, ৪০ কোটিরও বেশি। অথচ এহেন বিশাল বাজারের সঙ্গে সুসম্পর্ক জোরদার করার পরিবর্তে বর্তমান মার্কিন প্রশাসন বিবাদকে উস্কে দিচ্ছে, মূলত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কারণে। আর এটা করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মূলনীতিও লঙ্ঘন করে চলেছে ওয়াশিংটন। এতে শুধু চীন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা কিন্তু নয়; ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে খোদ যুক্তরাষ্ট্রও! কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ক্ষতি বেশি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রেরই। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে মার্কিন প্রশাসন এ ব্যাপারে উদাসীন। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040