চীনা পরিচালক ক্লোয়িও জাও
  2020-09-23 15:54:13  cri

গত সপ্তাহের অনুষ্ঠানে আমরা ৭৭তম ভেনিস চলচ্চিত্র উত্সব এবং এই উত্সবে বিজয়ীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তুলে ধরেছিলাম।

চীনা চলচ্চিত্র প্রযোজক ক্লোয়িও জাওয়ের 'নোম্যাডল্যান্ড' চলচ্চিত্রটি গোল্ডেন লায়ন পুরস্কার জয় করেছিল। নিশ্চয়ই সবার মনে আছে।

আজকের অনুষ্ঠানে আমরা ক্লোয়িও জাওয়ের বিস্তারিত গল্প আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।

সম্প্রতি চলচ্চিত্রাঙ্গনে এক চীনা নারী সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, তিনিই হলেন আমাদের আজকের মূল ব্যক্তিত্ব ক্লোয়িও জাও। তার পরিচালিত 'নোম্যাডল্যান্ড' চলচ্চিত্রটি ৭৭তম ভেনিস চলচ্চিত্র উত্সবের সর্বোচ্চ পুরস্কার বা গোল্ডেন লায়ন পুরস্কার অর্জন করে।

তিনিই চাং ই মৌ, হৌ সিও সিয়েন, অ্যান লি, ছাই মিং লিয়াং এবং চিয়া চাং খ্য'র পর গোল্ডেন লায়ন পুরস্কার অর্জন করা ষষ্ঠ চীনা পরিচালক। একই সঙ্গে তিনি তিনটি চলচ্চিত্র উত্সবের সর্বোচ্চ পুরস্কার পাওয়া প্রথম চীনা নারী চলচ্চিত্র প্রযোজকও বটে। তাঁর নতুন চলচ্চিত্র 'নোম্যাডল্যান্ড' অন্য চলচ্চিত্র উত্সবে অংশ নেবে এবং ক্লোয়িও জাও আরো বেশি রেকর্ড তৈরি করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

৩৮ বছর বয়সী ক্লোয়িও জাও অনেক অসম্ভব চ্যালেঞ্জ জয় করেছেন এবং অনেকগুলো 'প্রথম' অর্জন করেছেন।

যারা আমাদের গত সপ্তাহের অনুষ্ঠান শুনেছেন, তারা অবশ্যই জানেন যে, ভেনিস চলচ্চিত্র উত্সবের গোল্ডেন লায়ন পুরস্কার অর্জনের আগে তিনি মারভেল স্টুডিও'র বিশাল ক্যানভাসের ছবি 'এটারনালস' পরিচালনা করেন। এ চলচ্চিত্রে ২০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করা হয়। অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ও কিট হ্যারিটনসহ হলিউডের জনপ্রিয় তারকারা এতে অভিনয় করেছেন।

ক্লোয়িও জাও বেইজিংয়ে বাস করতেন। তার শৈশবকাল ছিলো বিদ্রোহী ও স্বাধীন। তিনি কমিকস পড়তে ও উপন্যাস লিখতে পছন্দ করতেন। লেখাপড়ায় খুব ভালো ছিলেন না তিনি। তবে, বাবা-মা কখনও তার সমালোচনা করতেন না।

বাব মা'র এই সমঝোতা ও সহনশীলতার কারণে ক্লোয়িও জাও নিজের ইচ্ছামতো জীবন কাটাতে পারেন। তার উপন্যাস লেখার অভ্যাসও আছে। বিদেশে অধ্যয়ন থেকে শুরু করে চাকরি করা পর্যন্ত যে কাজ তিনি করতে পছন্দ করেছেন, সে কাজে কখনও কোনও দ্বিধা করেন নি তিনি। সমবয়সী মানুষের তুলনায় ক্লোয়িও জাওয়ের চরিত্র ছিল স্বাধীন ও শক্তিশালী।

৩০ বছর আগে তিনি চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো কাজ করেন নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে লেখাপড়া করতেন এবং চলচ্চিত্রের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

তবে চলচ্চিত্রের প্রতি তাঁর আগ্রহ কখনওই থামে নি। বিশেষ করে ওয়োং কার-উয়াইয় নামের চীনা চলচ্চিত্র প্রযোজকের 'Happy Together' সিনেমাটি তিনি উপভোগ করেছেন এবং তা থেকে অনেক অনুপ্রেরণা পেয়েছেন।

তা ছাড়া, অ্যান লি, মিশেলাঙ্গেলো অ্যান্তোনিওনি এবং চিয়া চাং খ্যসহ বিভিন্ন চলচ্চিত্র পরিচালক তার ওপর প্রভাব ফেলেছে।

বিদেশে অধ্যয়নরত অনেক শিক্ষার্থীর মতো ক্লোয়িও জাও অনেক কাজ করেছেন, যেমন, বারে ওয়েটার হিসেবে কাজ করা এবং অন্যদের জন্য পার্টির প্রস্তুত করা প্রভৃতি।

এসব কাজের একটি অভিন্ন বৈশিষ্ট্য আছে, তা হলো অন্যদের গল্প শোনা এবং নিজের গল্প তুলে ধরা।

বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন গল্প শোনার পর ক্লোয়িও জাও বুঝতে পারেন যে, গল্প বলার সবচে ভালো পদ্ধতি হলো চলচ্চিত্র নির্মাণ করা।

তাই তিনি নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির চলচ্চিত্র কলেজে লেখাপড়ার আবেদন করেন এবং তখন থেকে তাঁর চলচ্চিত্রের পথ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।

গোল্ডেন লায়ন পুরস্কার পাওয়ার পরও ইন্টারনেটে ধনী পরিবারের মেয়ে হিসেবে তার বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে পুরস্কার কেনার কথাও মাঝেমাঝে শোনা যায়।

অনেকে শুধু জানেন যে, তিনি ধনী একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন। তবে, তারা জানেন না যে, ক্লোয়িও জাওয়ের প্রথম চলচ্চিত্র 'সংস মাই ব্রাদার টট মি' কান চলচ্চিত্র উত্সবের 'ডিরেক্টাস ফোর্টনাইট' ইউনিটে অন্তর্ভুক্ত ছিলো।

যাদের চরিত্র শক্তিশালী তাদের সঙ্গে এর একটি মিল আছে। তা হলো সহজেই ব্যর্থতা মেনে না নেওয়া।

প্রথম চলচ্চিত্রের তুলনায় তাঁর দ্বিতীয় চলচ্চিত্র 'দ্য রাইডার' নির্মাণে খরচ অনেক কম হয়। মাত্র ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। তবে তিনি নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠে কান চলচ্চিত্র উত্সবের মনোনয়ন পান। তিনি গোথ্যাম ইন্টিভেন্টেন্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডসের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

বলা যায়, 'দ্য রাইডার' হলো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রাঙ্গনে ক্লোয়িও জাওয়ের জনগণের কাছে পরিচিতি পাওয়ার শিল্পকর্ম। 'দ্য রাইডার' চলচ্চিত্রের গল্পটি এমন।

আকস্মিক দুর্ঘটনায় আহত হওয়া একজন ঘোড়-সওয়ারি কীভাবে ঘোড়া ছাড়া অন্য এক ধরনের জীবন কাটানো শুরু করেন। স্বপ্ন খুব মূল্যবান। তবে, এ জগতে প্রত্যেকই নিজ নিজ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারেন, তা কিন্তু নয়। আর এটাই বাস্তব জীবন।

আকস্মিক দুর্ঘটনায় আহত হওয়া রাইডার নিজেকে আর ঘোড়া না চালানোর খবর জানার পর তিনি ঘোড়ার সঙ্গে নিজের ভাবানুভূতি, সমাজে টিকে থাকার উপায় এবং জীবন কাটানোর পদ্ধতি নিয়ে আবার পর্যালোচনা করতে বাধ্য হন।

চলচ্চিত্রে রাইডারের শেষ প্রতিযোগিতা প্রসঙ্গে একটি দৃশ্য অনেক মনোমুগ্ধকর। রাইডার বুঝতে পারেন, যদি তিনি সেই ঘোড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন, তিনি হয়তো ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে মেরে যেতেন। তারপর ঘোড়ার পিঠে ওঠার আগে তিনি পরিবারের সদস্যদের দিকে তাকান এবং এই প্রতিযোগিতা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এখানে জীবনের মুখোমুখি হওয়া এবং বাস্তবতা গ্রহণ করার সাহস সত্যিই মুগ্ধকর।

ক্লোয়িও জাওয়ের চলচ্চিত্রের বিষয়গুলো সবসময়ই যুক্তরাষ্ট্রের সংখ্যালঘু, পারিবারিক সম্পর্ক এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানবজাতির সম্পর্কের সঙ্গে জড়িত।

তুলনামূলক ভারী বিষয় সামাজিক বাস্তবতায় তার অন্তর্দৃষ্টি প্রতিফলিত হয়। ৭৭তম ভেনিস চলচ্চিত্র উত্সবের সর্বোচ্চ পদক 'গোল্ডেন লায়ন' জিতে নিয়েছে তার 'নোম্যাডল্যান্ড'। ২০১৭ সালে প্রকাশিত জেসিকা ব্রুডারের নন-ফিকশন গ্রন্থ 'নোম্যাডল্যান্ড': সার্ভাইভিং আমেরিকা ইন দ্য টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি অবলম্বনে নির্মিত একটি চলচ্চিত্র। এতে আমেরিকান ক্যারাভ্যানবাসী কমিউনিটিকে ফুটিয়ে তোলা হয়।

'নোম্যাডল্যান্ড' নির্মাণের আরেকটি কারণ, পরিচালক ক্লোয়িও জাওয়ের অভিজ্ঞতা। ১৫ বছর বয়সে তিনি অধ্যয়ন করতে বিদেশে যান। তারপর তিনি বিভিন্ন দেশে লেখাপড়া করেন এবং কাজ করেন। তিনি সবসময়ই পথে হেঁটেছেন। পথের নানা দৃশ্য, সৌন্দর্য বা প্রতিবন্ধকতা- সবই তার কাছে বেশ পরিচিত।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040