সচ্ছল জীবনের উদ্দেশ্য এগিয়ে যাও: আন হুই প্রদেশের গল্প
  2020-09-23 09:30:42  cri

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শক্তিশালী এক দেশের অস্ত্র এবং দেশের উন্নয়ন ও মানুষের জীবনমান এর ওপর নির্ভর করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন হুই প্রদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে নানান দিকে অগ্রগতি অর্জন করে। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা ইয়াংসি নদীর বদ্বীপ অঞ্চলের নতুন সদস্য আন হুই প্রদেশ দেখতে যাব। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কীভাবে জীবনকে পরিবর্তন করেছে? আন হুই প্রদেশে সচ্ছল সমাজ কীভাবে গড়ে উঠেছে?

গ্রামীণ চিকিত্সকদের সহকারী হিসেবে সেখানে এখন রোবট কাজ করে; শিশুরা স্মার্ট স্কুলে পড়াশোনা করে; স্মার্ট বাজারে শুরুতেই শাক-সবজির কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ চেক করা হয়। আন হুই প্রদেশে এমন দৃশ্য সবসময় দেখা যায়।

আনহুই প্রদেশে তা ওয়ান গ্রামের ইউয়ান লিং নামের একজন ডাক্তার আছেন। তিনি বলেন স্মার্ট চিকিত্সা সহকারী তাকে অনেক সাহায্য করে এবং তার ৮০ শতাংশ কাজের চাপ কমে গেছে। ২০১৭ সালের অগাস্ট মাসে আনহুই খ্য তা সুন ফেই কোম্পানি ও ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় একসাথে গবেষণা করে তৈরি করে স্মার্ট চিকিত্সা সহকারী ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থা চীনের জাতীয় ক্লিনিকেল পরীক্ষায় পাস করে এবং এখন আই হুই প্রদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে কাজ করছে। প্রতিদিন সক্রিয়ভাবে দরিদ্র পরিবারের সদস্যদের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে এই ব্যবস্থা।

আগে প্রতিদিন ইউয়ান লিং পাহাড়ে হেঁটে হেঁটে এ ৩০টি দরিদ্র পরিবারের খোঁজ-খবর নিতেন। এখন এআই সহকারী নিয়মিত ফোন ও মেসেজ পাঠায় এবং দরিদ্র পরিবার মানুষের নানান শারীরিক ডেটা রেকর্ড করে। যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে ডাক্তার ইউয়নকে সতর্ক করে দেয়। ২০২০ সালের অগাস্ট মাস পযর্ন্ত এক বছরের সময়ে এ সহকারী রোবট ১৫ হাজারের মতো সমস্যা শনাক্ত করেছে, যার সঠিকতা ৯৭.৮ শতাংশ।

অন্যদিকে, আনহুই প্রদেশের হ্যফেই শহরের লাং সি লু প্রাথমিক স্কুলে ১০ বছর বয়সী হান চিন পো বাস্কেটবল কোলে নিয়ে বলে, 'সম্প্রতি আমার শারীরিক সামর্থ্য অনেক উন্নত হয়েছে।' সে কেন এ কথা বলে? সে হাতে পরেছে একটি স্মার্ট ব্রেসলেট। তার পিই শিক্ষক এ ব্রেসলেটের মাধ্যমে তার শারীরিক তথ্য সম্পর্কে জানতে পারেন। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের আসল অবস্থা অনুযায়ী ক্লাসের বিষয় ঠিক করেন।

স্মার্ট এ স্কুলে ব্রেসলেট ছাড়া অন্য বিষয়েও বুদ্ধিমান প্রবণতা দেখা যায়। যেমন রোবট "মেকার" শ্রেণিকক্ষ, ডিজিটাল পাঠক, বৈদ্যুতিন ক্যালিগ্রাফি শ্রেণিকক্ষ, ইত্যাদি। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থী পরিবারের সঙ্গে এখানে স্থানান্তরিত হয় এবং তারা প্রতিদিন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সুবিধা উপভোগ করছে।

পাশাপাশি ৬২ বছর বয়সী হ্য ফেই নাগরিক ওয়াং চিয়াং রো 'স্মার্ট পড়া'-র সুবিধা উপভোগ করছেন। উইচ্যাটের একটি মিনি প্রোগ্রামে তিনি পড়তে চান এমন বইয়ের নাম ইনপুট দেন। অ্যাপ তাকে বইটি কোথায় পাওয়া যাবে, তা বলে দেয়। এভাবেই বোরিং ডেটায় একটু প্রযুক্তি যোগ করলে মানুষের জীবন সহজতর হতে পারে। হ্য ফেই শহরের বিগ ডেটা প্ল্যাটফর্মে ১০ বিলিয়ানের বেশি তথ্য যোগ দেয়া হয়েছে এবং এ ডেটাগুলো নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগছে।

গভীর রাতে, সবাই যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখনও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অব্যাহতভাবে কাজ করে যায়। হ্য ফেই গণনিরাপত্তা গবেষণালয়ের পর্যবেক্ষণরুমে কম্পিউটার চলছে। 'শহরের জীবন লাইন প্রকল্প' নামের এ ব্যবস্থা হ্য ফেই শহরের ৫১টি সেতু, ২০০০ কিলোমিটার পাইপলাইন থেকে প্রতিদিন ৮০ হাজারটির বেশি সেন্সরের মাধ্যমে ৫০ বিলিয়ানের বেশি ডেটা সংগ্রহ করে এবং তা বিশ্লেষণ করে। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে এ ব্যবস্থা চালু হবার পর এ পর্যন্ত গড়ে প্রতিমাসে ৯০টি সতর্কতা পাঠিয়েছে এই ব্যবস্থা এবং ৬০০০টির বেশি সংকট প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়।

অর্থনীতি উন্নত হলে সচ্ছল সমাজ গঠনের পদক্ষেপ স্থিতিশীল ও দৃঢ় হতে পারবে। মহামারিতে অর্থনীতি মন্দাবস্থায় পড়ে গেছে এবং এমন প্রেক্ষাপটেও হুয়া মি নামের কোম্পানির চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের পরিচালন আয় ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় ৩৬ শতাংশ বেশি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক কোম্পানির তৃণমূল কর্মীর অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, তাদের জীবন কীভাবে ভাল ও সহজ হয়ে উঠেছে। হুয়া মি কোম্পানির পুরাতন কর্মী কু চি ছিয়াং বলেন, ৬ বছর আগে যখন কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয় তখন তার আয় ছিল কম। কোনোমতে খাওয়া-পরার সমস্যা কেটে যেতো। এখন তার একটি বাচ্চা আছে। তার আয় এখন সারা পরিবারকে সমর্থন দিতে সক্ষম। প্রতিবছর এক-দু'বার তিনি ভ্রমণেও যেতে পারেন। ৬ বছর আগে তিনি কখনও ভাবেননি এমন জীবন সম্ভব হবে।

গেল ১০ বছরে, হ্য ফেই দ্রুত উন্নত হয়েছে। এর জিডিপি ২০০৯ সালে চীনে ৪১তম ও রাজধানীগুলোর মধ্যে ১৪তম ছিল। ২০১৯ সালে জিডিপির হিসেবে এটি চীনের ২১তম ও রাজধানীগুলোর মধ্যে নবম স্থানে উঠে আসে।

হ্য ফেইর উন্নয়ন ঠিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করেই হয়েছে। ত্রয়োদশ পাচঁসালা পরিকল্পনা গ্রহণের পর থেকে হ্য ফেই শহরে প্রতিদিন গড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি করে উচ্চ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কোম্পানি। হ্য ফেই ও বেইজিং, শাংহাই ও শেনচেন চীনের ৪টি কম্প্রিহেনসিভ জাতীয় বিজ্ঞানকেন্দ্র। লিয়ান পাও ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি কোম্পানির দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানিয়েছেন, চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে কোম্পানির আয় ছিল ৪৯৬০ কোটি ইউয়ান, যা গেল বছরের একই সমযের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি। মহামারির সম্মুখীণে আন হুই প্রদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো অসাধারণ সফলতা অর্জন করে। চলতি বছরে জার্মানির ভক্সওয়াগেন কোম্পানি ২১০ কোটি ইউরো বিনিয়োগ করে হ্য ফেই শহরে দুটি চীনা কোম্পানিতে। এর আগে অন্য একটি গাড়ি কোম্পানিও হ্য ফেই শহরে সদর দপ্তর স্থাপন করে বলে হ্য ফেই শহরে নতুন ধরনের জ্বালানিচালিত গাড়ি শিল্পের নতুন একটি হট জায়গায় পরিণত হয়। হ্য ফেইয়ে ডিসপ্লে ও আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সসংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো বিশ্বে অগ্রসর নতুন পণ্য উপহার দিয়েছে। বর্তমানে হ্য ফেই শহরে কৌশলগত নবায়ন শিল্পের ৪০০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নির্মিত হচ্ছে এবং তার মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ বিলিয়ান ইউয়ানের বেশি।

  কু চি ছিয়াং বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক কোম্পানিতে কাজ করেন বলে তার জীবনও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তার বাবার হার্টের সমস্য আছে তাই তিনি তাকে একটি স্মার্ট ব্রেসলেট উপহার দেন এবং বাবার হৃদয়ের অবস্থা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। যখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানুষের ধারণার উপর প্রভাব ফেলে, তখন জীবনরীতিতে দেখা যায় পরিবর্তন।

সকালে পর্দা স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যায়, ফ্রিজে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাজা সবজি ও ফল সরবরাহ হয়; কাপড় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ধোয়া ও শুকানো হয়; রান্না রোবট নাস্তা তৈরি করে; মালিক বের হয়ে গেলে বাসায় চালু হয় নিরাপত্তামূলক স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা; রোবটগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছতার কাজ শুরু করে মালিক বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে—এসব এখন আর শুধু কল্পনার বিষয় নয়। আন হুই চীনের গুরুত্বপূর্ণ গৃহস্থালী যন্ত্রপাতি উত্পাদন কেন্দ্র। বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি সবচেয়ে উন্নত গৃহস্থালী যন্ত্রপাতি কিনে আপনি উল্লেখিত এ স্মার্ট জীবন উপভোগ করতে পারেন। অবশ্যই সবাই এমন জীবন যাপন করতে পারবে, তা নয়। এর জন্য সময় লাগবে। তবে আমরা এর সম্ভাবনা দেখছি।

বিশ্বের প্রথম অপটিক্যাল কোয়ান্টাম কম্পিউটারের আন হুই প্রদেশে জন্ম হয়েছিল এবং আই হুই প্রদেশে বিশ্বের সবচেয়ে বেশী স্মার্ট ব্যবহারযোগ্য ডিভাইস উত্পাদন করা হচ্ছে।

গ্রামীণ ডাক্তার ইউয়ান লিং বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন ভবিষ্যতে আরও বেশি প্রযুক্তি পাহাড়ে প্রবেশ করবে এবং স্থানীয় মানুষ এ থেকে উপকৃত হবে। লিয়ান পাও কোম্পানির কর্মী ওয়ান চুন লং বিশ্বাস করেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভবিষ্যতে উন্নয়নের একমাত্র দিক।(শিশির/আলিম/রুবি)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040