আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন 'রোববারের আলাপন'। আপনাদের সঙ্গে আছি আলিম এবং শিয়েনান আকাশ।
বড় ভাই, আমি পাহাড় অনেক পছন্দ করি, এটা আপনি জানেন। উত্তরায় থাকার সময় আমার একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। উনি একজন চিত্রশিল্পী, বিশ্ববিদালয়ে পড়ান। উনার জন্মস্থান হচ্ছে ময়মনসিংহ। উনি মাঝে মাঝে আমাকে বলতেন, ওখানে ছোট ছোট পাহাড় আছে। উনি আমাকে উনার জন্মস্থানে নিয়ে যেতে চাইলেন। আমি তা শুনে অনেক খুশি হলাম। ভাইয়া, আপনি পাহাড় পছন্দ করেন? আপনি পাহাড়সম্পর্কিত কোনো গল্প আমাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন কি?
আলিম:...
আকাশ: বন্ধুরা, হয়ত আপনারাও অনেকে আমাদের মতই ছোটবেলা থেকে পাহাড় যেতে চাইতেন, তাইনা? চীনের তিব্বতে অনেক পাহাড় রয়েছে। আমরা আজকে তিব্বতের একটি গল্প আপনাদের শোনাবো।
বন্ধুরা, ৭১ দিনে আমরা কী করতে পারি? বিংশ শতাব্দির নব্বইয়ের দশকে জন্মগ্রহণকারী তৌ হাও পেই তার ৪ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে সাইকেলে করে তিব্বতের রাজধানী লাসা যান। এ সাইকেল ভ্রমণে তাঁরা অতিক্রম করেন মোট ৪১৩৯ কিলোমিটার।
পথে, পিতা ও মেয়ে, তুষারাবৃত পাহাড়, তৃণভূমি, হ্রদ সবকিছুই দেখেছেন এবং সেসব অতিক্রম করেছেন।
কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে চার বছরের তো তো-র কিন্ডারগার্টেন বন্ধ। এপ্রিলে তার জন্মদিন। পিতা তৌ হাও পেই খেলাধুলা অনেক বছন্দ করেন। তিনি আগে সাইকেলে করে তিব্বতে গিয়েছেন। এজন্য তিনি একটি বিস্তারিত ও সাহসী পরিকল্পনা করে ফেলেন: মেয়েকে নিয়ে সাইকেলে করে লাসা যাবেন। তিনি বলেন, "আমরা এখনও তরুণ। এজন্য মনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে কিছু করতে চাই। ভবিষ্যতে তা আমাদের বাবা-মেয়ের সুখস্মৃতি হয়ে থাকবে।'
তৌ হাও পেই ২০১৩ সালে লাসা গেছেন সাইকেল চালিয়ে। দীর্ঘপথ সাইক্লিং করার অনেক অভিজ্ঞতা তার রয়েছে। এ কারণে তিনি তার মেয়েকে নিয়ে সাইকেলে ভ্রমণ করার সাহস পান। রওয়ার হওয়ার আগে, তিনি মেয়ের কাছ থেকে তার মতামত নেন। তাঁর মেয়ে খুব দ্রুত তাঁকে হ্যাঁ সূচক উত্তর দেয়।
তৌ হাও পেই যাত্রার রুট ঠিক করেন। মেয়ে তো তো-র বসার জন্য সাইকেলে বিশেষ করে একটি ছোট ট্রেলার তৈরি করেন তিনি। ২ এপ্রিল, পিতা ও মেয়ে রওয়ানা হয়ে যায়।
পিতা মেয়েকে নিয়ে রাস্তায় অনেককিছু দেখেছেন। তারা দেখেছেন মাঠের পর মাঠ ভর্তি ফসল, ছোট ছোট গ্রাম, গোলাপের বাগান, হ্রদের পাড়ে লোকজনের আনাগোনা। তারা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৩১০ মিটার উঁচু তোং তা পাহাড়ে উঠেছেন। গোটা যাত্রায় পিতা মোবাইলে অনেক ভিডিও করেছেন, ছবি তুলেছেন। ভবিষ্যতে মেয়ে ছবিগুলো দেখে আনন্দ পাবে, এই প্রত্যাশায়।
কিন্তু এ সুন্দর স্মৃতির জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। পিতা হাসতে হাসতে বলেন, "সাইকেলের টায়ার নষ্ট হওয়া একটা অপেক্ষাকৃত ছোট সমস্যা ছিল।'
ইয়ুন নান প্রদেশের হং লা পাহাড় খাড়া। আরও আছে বৃষ্টি। এ কারণে পিতা ও মেয়েকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। ৭০ কিলোমিটারের পরিকল্পনা থাকলেও, এ দিন মাত্র ৩০ কিলোমিটার অতিক্রম করা গেছে। অবশেষে তারা পাহাড়ে একটি গ্রামে পৌঁছাতে সক্ষম হন। পিতা বলেন, 'শুরুতে থাকার জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমাদের সৌভাগ্য যে, অবশেষে একজন দয়ালু তিব্বতি আমাদের নিজের বাসায় থাকতে দেন। আমরা তাঁর বাসায় ঘুমিয়েছি ওই রাতে।"
তারা কখনওই জানতেন না যে, পরের মুহূর্তে কী ঘটতে যাচ্ছে। শরীরের শক্তি শেষ হয়ে গেলে, পিতা সাইকেল থেকে নেমে ঠেলে ঠেলে সামনে এগিয়েছেন। কখনও কখনও থেমে বিশ্রাম নিয়েছেন এবং আশেপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন। এসময় পিতা ও মেয়ের সবকিছু অভ্যাস হয়ে যায়।
জন্মদিনে তো তো একটি উইশ করেছে। সে চেয়েছে, তার বাবার তার সঙ্গে সবসময় থাকবে। তার বাবা বলেন, মেয়েকে নিয়ে লাসার উদ্দেশ্যে এ সাইকেল ভ্রমণ হলো মেয়ের জন্মদিনের উপহার। তিনি বলেন, "আমি আমার নিজের কাজের মাধ্যমে মেয়েকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে চাই। আরও জানাতে চাই যে, যদি অধ্যাবসায় থাকে, তাহলে আমরা যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে পারি, যে কোনো বাধা অতিক্রম করতে পারি।"
পিতা ও মেয়ে যাত্রাপথে অনেকের সাহায্য পেয়েছেন। পিতা বলেন, "গোটা পথে, আমি টিকটকে আমাদের ভিডিও শেয়ার করেছি। অনেকে আমাদের যাত্রার উপর নজর রেখে আসছিলেন। যাত্রায় অনেকে রাস্তায় আমকাদের খাবার দিয়েছে। খাবার বেশি হওয়ায় অনেক সময় তা নিতে পারিনি। এক রাতে একজন অজানা গাড়িচালক তার গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে আমাদের পথের দিশা দিয়েছেন। আমরা মুগ্ধ হয়েছি।"
একসময় পিতা ও মেয়ে তিব্বতে পৌঁছান। সেখানে পিতা কিছু রঙ-পেন্সিল কিনে স্থানীয় শিশুদের উপহার দেন।
পথে পিতা মেয়েকে উদ্দেশ্য করে একটি চিঠিও লিখেছেন। তিনি লিখেছেন:
"আশা করি এর মাধ্যমে জীবনের প্রথম শিক্ষা আমি তোমাকে দিতে পেরেছি। এ শিক্ষা হচ্ছে অধ্যাবসায়। তোং কুয়ান থেকে লাসা পর্যন্ত, মোট চার হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ। এর মধ্যে দশটিরও বেশি উঁচু পাহাড় রয়েছে। এ দূরত্ব দেখতে অনেক বেশি। কিন্তু অধ্যবসায় থাকলে ও চেষ্টা চালিয়ে গেলে এ দূরত্বও অতিক্রম করা যায়। জীবনের সব ক্ষেত্রেই একথা প্রযোজ্য।"