লংশেং জেলায় দাচাই নামের একটি গ্রাম আছে। গ্রামটিও পাহাড়ী অঞ্চলে অবস্থিত। এখানে পরিবহনের অবস্থা খারাপ ছিল। ২০০৩ সালে গ্রাম পর্যটন উন্নয়ন শুরু করে। তখন স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতি বছরে গড় আয় ৭শো ইউয়ান আরএমবিরও কম ছিল। বর্তমান গ্রামটির কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক ফান বাও ইউ'র পুরানো বাড়িঘর হলো গ্রামটির সর্বশেষ পুরানো ঘর।
ফান বাও ইউ ১৭ বছরের আগে পর্যটন শিল্প উন্নয়ন শুরু করেন। এ বছরে তিনি ৫০লাখ ইউয়ান দিয়ে পুরানো বাড়িঘরের কাছাকাছি একটি চার তলোর ভবন নির্মাণ করেছেন। এটি হলো তাঁর দ্বিতীয় হোটেল।
১৯৯৯ সালে ফান বাও ইউ বেইজিংয়ের একটি পর্যটন স্থানে কাজ করতেন। বেইজিংয়ে কাজ করার এক বছরে ফান বাও ইউ'র আয় বেশি ছিল না। তখন তিনি নিজের জন্মস্থানে পর্যটন শিল্প উন্নয়নের তথ্য পেয়েছেন। সেজন্য তিনি দাচাই গ্রামে ফিরে গেছেন।
তখন দাচাই গ্রামের পরিবর্তন অবস্থা খারাপ। গ্রাম থেকে বাইরে যাওয়ার কোন সড়ক ছিল না। কিন্তু এখানে দৃশ্য খুবই সন্দর। অনেক ফটোগ্রাফার দৃশ্য তুলার জন্য এখানে আসেন। ফান বাও ইউ মনে করেন, তাঁর জন্মস্থানের পর্যটন শিল্প অবশ্যই উন্নীত হতে পারে।
কিন্তু ২০০৩ সালে দাচাই'র মাথাপিছু বার্ষিক আয় ৭০০ ইউয়ানেরও কম ছিল। ফান বাও ইউ নিজের হোটেল নির্মাণ করতে চান। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের চোখে এটি একটি খুবই কঠিন কাজ।
ফান বাও ইউ বলেন, আমি বেইজিংয়ে কাজ করার সময় বেতন কম ছিল। কিন্তু আমি কিছু অর্থ সঞ্চয় করেছি। পরে আমি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি। আমি গরুগুলো বিক্রয় করেছি। তিন বছরের মধ্যে আমি নিজের প্রথম হোটেল নির্মাণ করেছি।
এভাবে ফান বাও ইউ নিজের প্রথম হোটেল খুলেছেন। ২০০৩ সালের ২৬ জুন দাচাই গ্রামের পর্যটন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়্ একই দিন ফান বাও ইউ'র হোটেল খোলা হয়।
তিনি বলেন, আমার হোটেল খোলা হওয়ার প্রথম দিন আমি ৩৫০ ইউয়ান পেয়েছি। তখন আমাদের গ্রামের মাথাপিছু বার্ষিক আয় শুধু ৭শো ইউয়ান।
দীর্ঘমেয়াদী দরিদ্র গ্রামবাসীরা নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের পদ্ধতি পেয়েছেন। কিন্তু তাঁরা জানেন পর্যটন শিল্প উন্নয়নের ভিত্তি হলো গ্রামটির অবকাঠামো উন্নয়ন করা। ২০০৭ সালে দাচাই গ্রাম একটি পর্যটন কোম্পানির সঙ্গে সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। দু'পক্ষ একসাথে অবকাঠামো উন্নয়ন করে।
এ সম্পর্কে ফান বাও ইউ বলেন, আমাদের গ্রামের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য হলো আমাদের টেরেস। আমরা ভালভাবে টেরেস চাষ করলে, সুন্দর দৃশ্য পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে আরো বেশি পর্যটককে আকর্ষণ করা হবে।
২০১৫ সালে নির্মূল দারিদ্র বিমোচনের পরিকল্পনা কার্যকর হওয়ার পর, লংশেং জেলার পৌর সরকার ৫০কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করে দাচাই গ্রামসহ বিভিন্ন স্থানের পর্যটন অবকাঠামো উন্নয়ন করে। গোটা জেলায় পর্যটন স্থানের মধ্যে সড়ক নিয়াণ করে সংযুক্ত হয়েছে।
ফান বাও ইউ বলেন, এ কয়েক বছরের পরিবর্তন অনেক। পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে, আমাদের আয় বৃদ্ধি হয়েছে। আমাদের গ্রামে ২৯৩টি পরিবার আছে। বর্তমান গ্রামে পরিবার হোটেল১৮৬টি। প্রতি পরিবার হোটেলের বার্ষিক আয় কমপক্ষে ৬০ হাজার ইউয়ান, সর্বোচ্চ আয় ৩ থেকে ৪ লাখ ইউয়ানের মধ্যে।
প্রিয় শ্রোতা, এতোক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাদের সবাইকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আমাদের এ অনুষ্ঠান আপনাদের ভালো লাগে, তাহলে মনে করবো আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। আপনাদের জন্যই আমাদের সকল প্রচেষ্টা ও আয়োজন। আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং শুনতে থাকুন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান।
এছাড়াও গ্রামীণ সমষ্টিগত মোট টিকিটের মূল্যের ৭ শতাংশ লভ্যাংশ উপভোগ করতে পারে এবং ছাঁটাইযুক্ত চাষের ক্ষেত্রের ভিত্তিতে গ্রামবাসীরা পুরষ্কার ও লভ্যাংশ পাব।
২০১৯ সালে কালেকটিভ অর্থনৈতিক লভ্যাংশ মোট ৭২ লাখ ইউয়ান, মাথাপিছু ৫৮০০ ইউয়ানেরও বেশি। এটি হলো গ্রামটির ইতিহাসের নতুন রেকর্ড।
গ্রামবাসী ফান ইং ফান গত বছরে ৫.৮ হাজার ইউয়ানের লভ্যাংশ পেয়েছেন। তিনি টানা তিন বছরে গ্রামটির সর্বোচ্চ লভ্যাংশ পেয়েছেন। ২০১৯ সালে দাচাই গ্রাম সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হয়েছে।
গ্রামটি পর্যটন শিল্প উন্নয়নের আগে ফান ইং ফাংয়ের স্থানীয় কাজ ছিল না।
২০১৫ সালে দাচাই গ্রাম নির্মূল দারিদ্র্য বিমোচন পরিকল্পনা কার্যকর হওয়ার পর গ্রামটির কমিশন ৩০জনেরও বেশি তরুণ নিয়ে সিডির ধাপের মত থাককাটা মাঠ সুরক্ষা করেন।
ফান ইং ফাংয়ের চাষ করার ক্ষেত্রে দক্ষতা বেশি। তিনি নিজের চাষ ক্ষেত্র ছাড়াও অন্যান্য গ্রামবাসীদেরকে সহায়তা করেন। সেজন্য প্রতি বছরে তাঁর লভ্যাংশ অনেক বেশি।
এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ২০১৭ সালে আমার লভ্যাংশ ছিল ৫.২ হাজার ইউয়ান, ২০১৮ সালে ছিল ৫.৬ হাজার ইউয়ান, ২০১৯ সালে ছিল ৫.৮ হাজার ইউয়ান। আমি শুধু মাত্র এ ক্ষেত্র চাষ করার মাধ্যমে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হয়েছি।
বর্তমান দাচাই গ্রামের বাসিন্দারা শুধুমাত্র দৃশ্য স্থান হিসাবে টেরেসের চাষই তা নয়, বরং বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থার নির্মাণ করেছে, যাতে খাদ্যশস্য উত্পাদনের পরিমাণও অব্যাহতভাবে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।
আসলে দাচাই গ্রামের দৃশ্য গ্রাম, চাষ ক্ষেত্র ও বন নিয়ে সংগঠিত।
গ্রামটির আদ্য বন সুরক্ষার জন্য গ্রামটির কমিশন ২০জন বাসিন্দা নিয়ে সংগঠিত একটি বন রক্ষী দল প্রতিষ্ঠা করেছে। বন রক্ষী দল দুই দিনে এক বারের মত বনে চৌকি করে।
গত শতাব্দীতে বনের ক্ষতি ছিল। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দা বনের সম্পদ ক্ষতিগ্রস্থ করার মাধ্যমে ধনী হন নি। বর্তমান তাঁরা পর্যটন উন্নয়নের মাধ্যমে মুনাফা পেয়েছেন। পাশাপাশি তাঁদের প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষার নতুন চেতনা আছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বন না হলে আমাদের গ্রাম নেই। বন, চাষ ক্ষেত্র ও গ্রাম হলো আমাদের জনস্থান। বন সুরক্ষা করা হলো নিজের পাড়ি সুরক্ষা।
গ্রাম পর্যটন উন্নয়নের মাধ্যমে দাচাই গ্রাম সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হয়েছে। গ্রামটির মাথাপিছু বার্ষিক আয় ২০০৩ সালের ৭শো ইউয়ানেরও কম থেকে ২০১৯ সালের ১৫হাজারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন, সবুজ পাহাড় ও পানি হলো স্বর্ণ ও রৌপ্য পাহাড়।