দেশি-বিদেশি সহযোগিতা করে চলচ্চিত্র নির্মাণের গতি দ্রুত হচ্ছে
  2020-09-10 15:05:30  cri

২২ থেকে ২৯ অগাস্ট বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত দশম বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে জাপানের চলচ্চিত্র পরিচালক শুনজি ইওয়ায়, ফিনল্যান্ডের পরিচালক রেন্নি হার্লিন এবং চায়না ফিল্ম কো-প্রোডাকশন কর্পোরেশনের প্রধান লিউ ছুনসহ দেশি বিদেশি চলচ্চিত্র ব্যক্তিরা অনলাইনে বিদেশের সঙ্গে চীনের সহযোগিতা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে মতামত ও ব্যক্তিগত উপলব্ধি শেয়ার করেছেন।

গত ২০ বছরে চীন ও বিদেশের সহযোগিতায় তৈরি চলচ্চিত্র ধাপে ধাপে দেশি-বিদেশি চলচ্চিত্রাঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে উঠেছে। চায়না ফিল্ম কো-প্রোডাকশন কর্পোরেশনের প্রধান লিউ ছুন বলেন, আপাতত চীন ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান ও ভারতসহ ২২টি দেশের সঙ্গে চলচ্চিত্র নির্মাণে সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ২০০০ সাল থেকে ২০১৯ সালের শেষ পর্যন্ত অন্যান্য দেশের সঙ্গে চীনের সহযোগিতায় নির্মিত এবং প্রদর্শিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা ২৪৪টি এবং এর মধ্যে চীনের মুলভূভাগের বক্সঅফিসে ১০ কোটি ইউয়ানের বেশি আয় করা সিনেমার সংখ্যা ৪৯টি।

দেশি-বিদেশি সহযোগিতা অব্যাহত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব গভীরভাবে অনুভব করেছেন যে, চলচ্চিত্র খাতে দেশি-বিদেশি সহযোগিতার প্রক্রিয়া হলো চীনের চলচ্চিত্র শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।

'আমাদের বাজার বড়। চলচ্চিত্রের সংখ্যা বাড়লে স্ক্রিনের সংখ্যা ও দর্শকসংখ্যাও বাড়বে। এক বছরে কয়েকটি দেশীয় চলচ্চিত্র বা আমদানিকৃত চলচ্চিত্র চীনের মতো বড় একটি বাজারের চাহিদা পূরণ করতে পারে না এবং ভালো মানের চলচ্চিত্রের প্রতি দর্শকদের ব্যাপক চাহিদাও পূরণ করতে পারে না। তাই বর্তমানে চলচ্চিত্রের গুণগত মান বৃদ্ধি এবং শিল্পায়ন প্রক্রিয়া দ্রুততর করার সময় এসেছে।' চায়না ফিল্ম কো-প্রোডাকশন কর্পোরেশনের প্রধান লিউ ছুন এমন কথাই বলেন। তিনি বলেন, আগামী ২/৩ বছরে সহযোগিতার মাধ্যমে তৈরি চলচ্চিত্রের সংখ্যা আরো বাড়বে; এতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সুবিধা প্রতিফলিত হবে।

সহযোগিতার ভিত্তিতে চলচ্চিত্র নির্মাণ বরাবরই একটি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, তা হলো স্থানীয়করণ এবং আন্তর্জাতিকীকরণ সমকালীন হওয়ার ক্ষেত্রে কঠিনতা। কীভাবে সাংস্কৃতিক পার্থক্য অতিক্রম করা যায় এবং স্থানীয় বাজার ও আন্তর্জাতিক বাজারে উইন-উইন বাস্তবায়ন করা যায়, তাই হলো বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র ব্যক্তিদের আলোচনা করা ও কেন্দ্রীয় বিষয়।

মালয়েশিয়ার জাতীয় চলচ্চিত্র উন্নয়ন কোম্পানির স্থায়ী ভাইস চেয়ারম্যান নোমান আব্দুলাহ হালিমু বলেন, সাংস্কৃতিক পার্থক্যের সমস্যা দূর করতে চাইলে স্থানীয় বাজারকে বিশ্বমুখী হওয়া উচিত্। স্থানীয় চলচ্চিত্র নির্মাণকাজ গুরুত্বপূর্ণ বাজারের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং স্থানীয় দর্শক স্বীকৃতি পাওয়া একটি গল্প তৈরি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অস্কার পুরস্কার জয়ী দক্ষিণ কোরিয়ার চলচ্চিত্র প্যারাসাইটের অভিজ্ঞতা গ্রহণযোগ্য বলে তিনি মনে করেন।

ফিনল্যান্ডের পরিচালক রেন্নি হার্লিন বলেন, হলিউড চলচ্চিত্রের গ্লোবাল মার্কিটিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সারা বিশ্বের জন্য প্রচলিত প্রতীক বানানো এবং একই আবেদন সৃষ্টি করা হলো চলচ্চিত্রের ভবিষ্যত নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে তিনি বলেন।

সহযোগিতা করে সফল একটি চলচ্চিত্র হিসেবে চীন ও বিদেশের বাজারে ক্ষেত্রে সফল হতে হবে- এতে দেশি-বিদেশি চলচ্চিত্র ব্যক্তিরা একমত হয়েছেন।

২০১৮ সালে চীনের ইনরি চলচ্চিত্র ও টিভি নাটক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্নার ব্রাদার্স এন্টারটেন্মেন্টের সহযোগিতায় নির্মিত বিজ্ঞানভিত্তিক চলচ্চিত্র 'দ্যা মেগ' নিঃসন্দেহে দেশি-বিদেশি সহযোগিতার সফল চেষ্টা।

দশম বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের ফোরামে ওয়ার্নার ব্রাদার্স এন্টারটেন্মেন্টের চীনের অঞ্চলের প্রধান চাও ফাং ওই চলচ্চিত্রটির সফল হওয়ার ক্ষেত্রে তিনটি বৈশিষ্ট্য শেয়ার করেন। প্রথমত শক্তিশালী শিল্পায়নের মান প্রয়োজন। যেমন 'দ্য মেগ' চলচ্চিত্রে মেগ-কে কেন্দ্র করে তৈরি নানা দৃশ্য-বিন্যাস অনেক বাজে ছিল। দ্বিতীয়ত, সারা বিশ্বের দর্শকদের পছন্দসই একটি আধুনিক গল্প বলা উচিত্,যথাসম্ভব সাংস্কৃতিক পার্থক্য কমানো উচিত্। তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক মাধ্যমে প্রকাশ করা উচিত্, যাতে বিভিন্ন দেশের দর্শকেরা গল্পটি বুঝতে পারেন।

চাও ফাং আরো বলেন, বর্তমানে চীনের তৈরি চলচ্চিত্রের গুণগত মান নিশ্চিত করতে চাইলে আরো বেশি ব্যয় করতে হবে। তাই চীনের একক বাজার থেকে অর্জিত অর্থে চলচ্চিত্রের খরচ কভার করা একটু কঠিন। চীনের চলচ্চিত্রের শিল্পায়নের প্রক্রিয়ায় চীনা গল্পের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রকাশ আরো গুরুত্বপূর্ণ, যা মুনাফা বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং চীনের সংস্কৃতি বিস্তারের অনুকূল বলে তিনি মনে করেন।

আকস্মিক নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বিশ্ব চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়ন এবং উত্পাদন পদ্ধতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়েছে। এ সময় স্বাভাবিকভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে না পারলেও সারা বিশ্বের চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বরা নিজস্ব ক্ষমতার মধ্যে চলচ্চিত্র শুটিংয়ের নতুন পদ্ধতি ও ধারণা অনুসন্ধান করছেন।

চীনা দর্শকদের কাছে খুব সুপরিচিত জাপানি চলচ্চিত্র পরিচালক শুনজি ইওয়ায় অনলাইনে এ বারের ফোরামের আলোচনায় অংশ নেন। তিনি বলেন, মহামারীর সময় তিনি অন্যভাবে 'The 12 Day Tale of the Monster that Died in 8' নামে একটি চলচ্চিত্রের শুটিং সম্পন্ন করেন।

তিনি বলেন, গত মে মাসে তিনি মহামারীর পরিপ্রেক্ষিতে টোকিও'র দৃশ্য ফুটিয়ে তোলার জন্য একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। অবশেষে তারা দূরবর্তী চিত্রগ্রহণের মাধ্যমে এ চলচ্চিত্রটি শেষ করেন। নির্দিষ্ট উপায় হলো অভিনেতা-অভিনেত্রীরা নিজ নিজ উদ্যোগে দৃশ্য-বিন্যাস শুটিং করেন এবং তাদের শুটিং করা উপাদান চলচ্চিত্র পরিচালককে দেওয়া হয়। তারপর পরিচালক বাসায় বসে তা সম্পাদনা করেন এবং চলচ্চিত্র তৈরি করেন। এ চলচ্চিত্রটি জুলাই মাসের শেষ দিকে জাপানের ছোট আকারের সিনেমা হলে প্রদর্শন করা হয়। শুনজি ইওয়ায় বলেন, মহামারী শেষ হওয়ার পর তিনি চীনে আসবেন এবং 'Last Letter' নামক এ চলচ্চিত্রের পরবর্তী সিরিজ নির্মাণের প্রস্তুতি নেবেন।

প্রিয় বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশ একসঙ্গে ফাইভ-জি যুগে চলচ্চিত্রের উন্নয়ন ও সংস্কারের ওপর নজর দেবো।

দশম বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব চলাকালে 'ফাইভ-জি যুগে চলচ্চিত্রের উন্নয়ন ও সংস্কার' শিরোনামে একটি ফোরামের আয়োজন করা হয়। চীনের চলচ্চিত্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তি, চলচ্চিত্র শিল্পের প্রথম ফ্রন্টের ধীশক্তি ও চলচ্চিত্রের শিল্পায়ন-বিষয়ক গবেষণা খাতের প্রবীণ বিশেষজ্ঞ ও পণ্ডিতগণ ফাইভ-জি যুগের পরিপ্রেক্ষিতে চলচ্চিত্রের উন্নয়নে ফাইভ-জি'র প্রভাব, ইন্টারনেট ফিল্ম ও টেলিভিশন সংস্থার ওপর ফাইভ-জি'র বয়ে আনা সুযোগ ও চ্যালেঞ্জসহ বিভিন্ন দিক থেকে ফাইভ-জি যুগে চলচ্চিত্রের উন্নয়ন ও সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা করেন।

চায়না ফিল্মের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত গবেষণালয়ের প্রধান চাং উই তার বক্তৃতায় বলেন,

'ফাইভ-জি প্রযুক্তি শুটিংয়ের সুবিধা বাড়াতে এবং খরচ কমাতে সক্ষম। ফাইভ-জির ব্যবহার ফটোগ্রাফারের বুদ্ধিমান সহকারী হয়ে উঠবে। ফাইভ-জি প্লাস ক্লাউড কম্পিউটিং চলচ্চিত্র শিল্পে আরো সুগভীর প্রভাব ফেলবে বলে আমি মনে করি। এতে আমাদের চলচ্চিত্র নির্মাণ, প্রকাশ ও প্রদর্শনের উপায়, পরিচালনায় উপায় এবং দর্শকদের ফিল্ম উপভোগের অভ্যাসে নানা প্রভাব ফেলবে।'

ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইন হোং ফাইভ-জি যুগে চলচ্চিত্রের রূপ নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি বলেন, ফাইভ-জি প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে চলচ্চিত্রের সংস্কার হবে। আরো ভিজ্যুয়াল, আরো বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং আরো আন্তঃসংযুক্ত চলচ্চিত্র ভবিষ্যতে সৃষ্টি হবে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন,

'বর্তমানে আমাদের ফিল্মে অনেক দৃশ্য-বিন্যাস পরবর্তীতে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়। ফাইভ-জি জনপ্রিয় করে তোলার সঙ্গে সঙ্গে এই দক্ষতা আরো জোরদার হবে। দর্শকদের ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতা আরো বৈচিত্র্যময় হয়ে যাবে।'

ফোরামে অংশগ্রহণকারীরা নিজ নিজ অভিজ্ঞতা থেকে পুঁজি বিনিয়োগ, নির্মাণ, প্রযুক্তি, প্রদর্শন এবং বাজারসহ বিভিন্ন দিক থেকে বর্তমান প্রযুক্তি সংস্কারের প্রেক্ষাপটে চীনের ফিল্মের সম্ভাব্য নতুন চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ নিয়ে আলোচনা করেন।

প্রকাশ ও প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ফাইভ-জি প্রযুক্তির সংস্কার প্রসঙ্গে চীনের ফিল্ম প্রকাশ ও প্রদর্শন সমিতির প্রধান হান সিও লি মনে করেন, চলচ্চিত্রের জন্য ফাইভ-জি চ্যালেঞ্জ নয়, সুযোগও বটে।

তিনি বলেন,

'২০১০ সালের কাছাকাছি সময় আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করেছি। চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা শুরু হয় তখন থেকে। নতুন প্রযুক্তি চলচ্চিত্রের জন্য জনালা খুলে দিতে পারে, যেমন ডিজিটাল প্রযুক্তি। ফাইভ-জি প্রযুক্তি যেন একটি নতুন জানালার মতো, এর সাহায্যে ফিল্ম আরো উপভোগযোগ্য হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।'

বেইজিং ফিল্ম একাডেমির উপপ্রধান ইউ চিয়ে তোং মনে করেন, চলচ্চিত্র হলো শিল্প, প্রযুক্তি ও শিল্পের নিখুঁত সমন্বয়। ফাইভ-জি কেবল ফাইভ-জি নয়, ক্লাউড কম্পিউটিং, বিগ ডেটা, ইন্টারনেট অফ থিংস, ব্লকচেইন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ের চলচ্চিত্রের ওপর বিশাল প্রভাব ফেলবে। ভালোভাবে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায়,এটা হলো চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

লিলি/তৌহিদ

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040