বিদ্যাবার্তা ০৯০৭
  2020-09-07 15:58:55  cri

 


গত পয়লা সেপ্টেম্বর ছিল চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের উপকন্ঠ এলাকায় অবস্থিত মিইয়ুন জলাধার নির্মাণের ৬০তম বার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে জলাধারের নির্মাণকারী ও রক্ষাকারীদের উদ্দেশ্যে চিঠি লেখেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। তিনি লিখেছেন, অতীতকালে জলাধার নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল বন্যা প্রতিরোধ করা। তবে তা বেইজিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ জলঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। এখন এ জলাধার শ্রেষ্ঠ সম্পদ।

এক চীনা প্রবাদে বলা হয়েছে, দেশ-প্রশাসন যেন বন্যা প্রতিরোধ করার মতো, দেশ ভালভাবে শাসন করতে চাইলে নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। চীনাদের ইতিহাসে বিভিন্ন রাজবংশ আমলে বন্যা প্রতিরোধক বীর ও শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়েছেন। বন্যা প্রতিরোধ হলে দেশের উন্নয়নও নিশ্চিত হবে।

১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর, বেইজিংয়ের ছাও নদী, বাই নদী ও হাই নদীর শাসন জরুরি হয়ে পড়ে। কারণ, ছাও নদীতে জলের স্রোত তীব্র। বাই নদীর দুই তীরে সাদা বালি দেখা দেয়। সেখানে কোনো গাছ বা ঘাস বেঁচে থাকতে পারত না। দুই নদী মিইয়ুন এলাকায় মিলিত হয়েছিল। ফলে তখন সহজে বন্যা দেখা দিত।

১৯৫৮ সালের জুন মাসের শেষ দিকে চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে মিইয়ুন জলাধার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯৬০ সালের পয়লা সেপ্টেম্বর মিইয়ুন জলাধারের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। নির্মাণকাজের শুরুতে দুই দফায় স্থানীয় ৬৫টি গ্রামকে স্থানান্তর করা হয় এবং ৯ মাসের মধ্যে ৫০ হাজারেরও বেশি গ্রামবাসীকে নতুন বাড়িঘরে স্থানান্তর করা হয়।

১৯৭৪ সালে মিইয়ুন জলাধারের জলের পরিমাণ ১৫৩ মিটার উঁচু হয়, যা নির্মাণের পর সর্বোচ্চ রেকর্ড সৃষ্টি করে। তখন জলাধারের আশেপাশের গ্রামগুলো ডুবে যায়। তখন থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত আশেপাশের ১৩টি গ্রামের ৪০০০ গ্রামবাসীকে নতুন বাড়িতে স্থানান্তর করা হয়।

১৯৮২ সাল থেকে মিইয়ুন জলাধার থেকে শুধু বেইজিং শহরবাসীদের জন্য জলসেবা দেওয়া শুরু হয়। তখন থেকে রাজধানীর 'বড় বেসিন' হিসেবে এটি পরিচিত হয়ে আসছে।

১৯৯৫ সালে কয়েকবার গ্রামবাসীদের স্থানান্তর করার পর জলাধারের মোট আয়তন প্রায় ২০ হাজার হেক্টরে দাঁড়ায়। তবে গত শতাব্দীর ৯০ দশকে জলাধারের কাছে বসবাসকারী লোকসংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। স্থানীয় প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ এবং কাছাকাছি বন্যার ঝুঁকি দূর করার জন্য কাছের ১৫ হাজার গ্রামবাসীকে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তখন থেকে টানা ৬ বছরের মধ্যে প্রায় ১২ হাজার ৫০০ জন গ্রামবাসী থুংচৌ আর শুনই এলাকায় চলে যান এবং আরো ২৭০০ জনেরও বেশি লোক আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বসবাস করতে শুরু করেন। তাদের বসবাস অবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয় এবং বাচ্চাদের শিক্ষাদানের অবস্থানও পরিবর্তন ঘটে। তাদের দারিদ্র্যবিমোচনে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়।

২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর জলাধারের জলের পরিমাণ ২০০০ সালের পর প্রথমবারের মতো ২ বিলিয়ন ঘনমিটারে দাঁড়ায় এবং ২০১৮ সালের ১৭ জুলাই জলাধারের জলের উচ্চতা ১৪৬.৩ মিটারে পৌঁছায়, যা ১৯৯৯ সালের পর নতুন রেকর্ড।

জলাধারের নির্মাণকাজে স্থানীয় গ্রামবাসীরা ব্যাপক অবদান রেখেছেন। এ সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, পাহাড়, নদী, বন, কৃষিক্ষেত ও হ্রদ যেন জীবনের কমিউনিটির মতো; কৃষিক্ষেত গুরুত্বপূর্ণ হলেও নদী, পাহাড়, মাটির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এসব গাছ, নদী ও মাটি হবে প্রাকৃতিক পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

স্থানীয় প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রাধান্য কাজে লাগিয়ে গ্রামবাসীদের জীবন অনেক সুখের হয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাধা দেয়নি, বরং পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে ব্যাপক সুযোগ বয়ে এনেছে।

তাই প্রেসিডেন্ট সি মনে করেন মিইয়ুন জলাধার অমূল্য সম্পদ। চীনের সমাজ ও অর্থনীতির উন্নয়নের সাথে সাথে জলের অভাব একটি দুর্বলতায় পরিণত হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের জরিপ থেকে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে বেইজিং, থিয়ানচিন ও হ্যপেই'র শহরবাসীদের পানি ব্যবহারের পরিমাণ চীনের গড়পড়তা পরিমাণের ৯ ভাগের ১ ভাগে দাঁড়িয়েছে। এ ঝুঁকির সম্মুখীনে দক্ষিণ চীন থেকে জল স্থানান্তর পরিকল্পনা চালু করা হয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৪৫ কোটি ঘনমিটার পানি দক্ষিণ চীন থেকে উত্তর চীনে প্রবাহিত হয়েছে।

এ উপলক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট সি মিইয়ুন গ্রামবাসীদের উদ্দেশ্যে লেখা চিঠিতে বলেছেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থা পূরণ করা হবে চীনের সবুজ পাহাড় ও পরিচ্ছন্ন নদী রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। চীনের সবুজ পাহাড় ও পরিচ্ছন্ন নদী অবিচ্ছেদ অংশ। ছাও নদীর উত্স হ্যপেই প্রদেশের ফেংনিং জেলায়, বাই নদীর উত্স কুইউয়ান জেলায় এবং ইয়োংতিং নদী, তাছিং নদীর উত্স শানসি প্রদেশে।

চীনের ইয়াংসি নদী, হুয়াং হ্য নদী এবং মিইয়ুন জলাধারসহ বিভিন্ন নদী ও হ্রদের কথা প্রেসিডেন্ট সি সবসময় মনে রাখেন।

আসলে মিইয়ুন এলাকার ব্যাপক পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক পরিবেশের উন্নয়নের চীনের পরিবেশ সংরক্ষণ ব্যবস্থার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। স্থানীয় জলদূষণ এড়াতে আবর্জনা, দূষিত পানির পরিশোধন এবং গ্রামে বায়োগ্যাস ও সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়ানো হয়েছে।

২০১১ সাল থেকে স্থানীয় পানি, নদী, বন, পাহাড় ও মাটির সংরক্ষণে ৭০০০ জন বন রক্ষক, ২০০০ জনেরও বেশি নদীরক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা নিয়মিতভাবে জলাধার পর্যবেক্ষণ করেন এবং স্থানীয় গ্রামবাসীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে জলসংরক্ষণ দল গঠন করেন। প্রতিদিন তাদের কর্মসময় ৬ ঘন্টার বেশি। কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পর মিইয়ুন জলাধারের জলের মান অনেক উন্নত হয়েছে। এখানকার বায়ুও অনেক পরিস্কার।

জলাধারের নিরাপত্তায় ৩৯৮ কিলোমিটার দীর্ঘ রক্ষকজাল তৈরি করা হয়েছে। জলাধারের কাছে ৯০০ মিটার উঁচু পাহাড় আছে। বেইজিংয়ের শহরবাসীরা ছুটির সময় সেখানে বেড়াতে পছন্দ করেন। জলাধারে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। পরিচ্ছন্ন জলাধারের মাছ খেতে বেশ মজা। তাই মিইয়ুন এলাকার মাছও অনেক জনপ্রিয়।

সুপ্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়, আজকের বিদ্যাবার্তা অনুষ্ঠানের সময় শেষ হয়ে এলো। সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারেন বা মিস করেন, আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali.cri.cn,আমাদের যোগাযোগ ইমেল ঠিকানাben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn

তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে একই সময় একই দিনে আবার কথা হবে। যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040