দেশে করোনা সংক্রমণের হার গত কিছু দিন যাবত ক্রমশ কমতির দিকে রয়েছে। সব শেষ ৬ সেপ্টেম্বর এ হার দাঁড়িয়েছে সর্বনিম্ন ১৪ দশমিক ২০ শতাংশে। তবে গড় সংক্রমণ হার এখনো ২০ শতাংশের এদিকে-ওদিকে। ক্রমশ বাড়ছে সুস্থতার হারও। সবশেষ এ হার দাঁড়িয়েছে ৬৮ দশমিক ৫০ শতাংশে। তবে মৃত্যুর সংখ্যা এখনো নিয়মিতভাবেই ৩০-৪০-এর কোঠায় ওঠানামা করছে। আর হারও বাড়ছে একটু একটু করে। সবশেষ এ হার দাঁড়িয়েছে ১ দশমি ৩৮ শতাংশে।
ওপরে তথ্যউপাত্তে বোঝা যায় করোনা পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলবার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু ধীরে ধীরে কমছে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা। করোনা চিকিৎসায় অনেক বিশেষায়তি হাসপাতাল এখন স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে গেছে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে করোনা পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে গেছে গণপরিবহন। সব আসনে যাত্রী তো বটেই সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কোথাও কোথাও দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহনের অভিযোগও রয়েছে। আর স্বাস্থ্যবিধি বলতে কোনো কিছুর বালাই নেই যথারীতি। অনেক যাত্রীকে দেখা গেছে মাস্ক ছাড়া। আর স্যানিটাইজার রাখা হচ্ছে না বেশিরভাগ গণপরিবহনে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অবশ্য বারবার হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছেন গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি না মানা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু মন্ত্রীর হুঁশিয়ারিতে কাজ হচ্ছে বলে কোনো প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে। দুএকবার ডিএমপি ও বিআরটিএকে অভিযান পরিচালনা করতেও দেখা গেছে। কিন্তু অভিযান শেষে পরিস্থিতি যেই কে সেই। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে- করোনা নামক প্রাণঘাতি এ ভাইরাস দেশের মানুষ আর খুব একটা ভয়ডর করছে না। আর এর ফল যা হবার তা হচ্ছে।
দেশের অফিস-আদালত, কলকারাখানা প্রায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে গেলেও সরকার স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত দেয়নি। এই একটি মাত্র ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। স্কুল না খুলতে পারায় এরই মধ্যে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল করেছে সরকার। এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেয়া হয়নি। সবশেষ ৬ সেপ্টেম্বরও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন জানিয়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিবেশ এখনো হয়নি। আর বিদ্যালয় খোলা না হলে স্কুলে স্কুলে বার্ষিক সমাপনী পরীক্ষা নাও হতে পারে বলে জানান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম আল হোসেন। করোনা পরিস্থিতির লক্ষ্যণীয় উন্নতি না হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খোলার এ সিদ্ধান্ত সঠিক বলে মনে করেন ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টরা।
করোনার এ পরিস্থিতিতে কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে এর টিকা নিয়ে। চীনের তৈরি টিকার ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা বাংলাদেশে হবে- এ বিষয়ে সরকার আগেই সিদ্ধান্ত দিয়েছে। অক্সফোর্ডের টিকা পেতে বাংলাদেশের বেক্সিমকোর সঙ্গে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের চুক্তি হয়েছে। আর সবশেষ ৩১ আগস্ট সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, রাশিয়া বাংলাদেশকে টিকা দিতে আগ্রহী। টিকা তৈরির অবকাঠামো থাকলে বাংলাদেশেই সে টিকা উৎপাদনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে রাশিয়া।
এরইমধ্যে আরেকটি ভালো খবর বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের টিকা কর্মসূচির রোডম্যাপ তৈরিতে নেতৃত্ব দেবেন দুটি ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহাম তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, প্রয়োজন অনুযায়ী যাতে কোভিট-নাইনটিনের টিকা পাওয়া যায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে তাদের বিজ্ঞানীরা বাংলাদেশে কাজ করবেন। ইউকে রিসার্চ এন্ড ইনোভেশন-ইউকেআইয়ের সহযোগিতায় ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা তাদের কাজটি করবেন।
তারা বাংলাদেশে কোল্ড চেইন ফ্রেমওয়ার্কের সক্ষমতা ও প্রস্তুতি মূল্যায়ন করে টিকা দেয়ার একটি রোডম্যাপ ও মডেল তৈরি করবেন। তাদের এ কাজে সহায়তা করবে বাংলাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েট ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।
যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীদের করোনা টিকার রোডম্যাপ ও মডেল তৈরি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত ফলদায়ী হবে বল মনে করেন সংশ্লিষ্ট মহল।
ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।