আরব আমিরাতে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং বুর্জ খলিফার পাশে অবস্থিত দুবাই মল শপিং প্রেমীদের জন্য এক স্বপ্নময় স্থান। প্রায় ১২ মিলিয়ন বর্গ ফুট জায়গা জুড়ে বিস্তৃত দুবাই মল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শপিং মল। প্রায় ৫০ টি ফুটবলের মাঠের সমান জায়গা জুড়ে গড়ে উঠা এই মলে রয়েছে প্রায় ১,২০০ টি দোকান, এক্সক্লুসিভ ফ্যাশন হাউজ, ২০ টি বিলাসবহুল হোটেল, ২২ টি সিনেমা হল, বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোর এবং কয়েকশ রেস্টুরেন্ট। এছাড়া দুবাই একুয়ারিয়াম, আন্ডার ওয়াটার জু ও থিম পার্ক সহ বিনোদনের নানা আয়োজন রয়েছে দুবাই মলে। আর তাই দুবাই বেড়াতে গেলে পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে থাকে এই দুবাই মল।
দুবাই মলে কি দেখবেন ও কি করবেন
শপিং ছাড়াও আরব আমিরাতের দুবাই মলে বিনোদনের জন্য রয়েছে নানা আয়োজন। মলের ভিতরে মধ্যপ্রাচ্যের ৭০ দশকের ব্লুমিংডেল, গ্যালারিস লাফায়েতের মতো শপগুলো পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ফ্যাশন সচেতনদের জন্য বিশ্বখ্যাত ডিজাইনারদের নানা কালেকশন রয়েছে এখানে। এদের মধ্যে আছে ভার্সেস, বারবেরির মতো স্বনামধন্য সকল ব্রান্ড। দুবাই মল "গোল্ড সৌক" সোনার গহনার জন্য বিখ্যাত।
এ ছাড়াও দুবাই মলে পরিবার নিয়ে ঘুরার জন্য আছে দ্যা দুবাই একুরিয়াম ও আন্ডার ওয়াটার জু, বাচ্চাদের পছন্দের কিন্ডাজিয়া সহ দ্যা দুবাই ফাইন্টেন, আইস রিঙ্ক সহ আরও অনেক কিছু।
দুবাই একুয়ারিয়াম এন্ড আন্ডার ওয়াটার জু
দুবাই মলের নিচ তালায় অবস্থিত এই দুবাই একুয়ারিয়ামটি প্রায় ৫১ মিটার লম্বা, ২০ মিটার গভীর ও ১১ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট। এই একুয়ারিয়ামে প্রায় ৩,০০০ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী রয়েছে, এদের মধ্যে প্রায় ৪০০ এর বেশী শার্ক ও রেইস আছে। আর সবচেয়ে বড় কথা এই মলের ভিতরে অবস্থান করলে এক্রাইলিক প্যানেলের মধ্যে দিয়েই একুয়ারিয়ামটি দেখা যায়। তবে টিকেট কেটে ৪৮ মিটার লম্বা টানেলের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করলে এই একুয়ারিয়ামকে ভিন্ন ভাবে দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। যেখানে খুব কাছ থেকে শার্ক, রেইস, অক্টোপাস সহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী কাঁচের প্রাচীরের গায়ে ঘুরে বেড়াতে দেখবেন। আর যদি আপনি খুব সাহসী হন তাহলে ১০ লিটার পানির ট্যাঙ্কিতে ডুব দিয়ে স্যান্ড টাইগার শার্কের মুখোমুখি হতে পারবেন।
দ্যা দুবাই ফাউন্টেন
পুরো দুবাই শহরের মধ্যে দুবাই মলের সামনে অবস্থিত দ্যা দুবাই ফাউন্টেন পর্যটকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে এখানে ছবি তুলতে সবাই খুব পছন্দ করে। এই ফাউন্টেনের কোরিওগ্রাফি এমন ভাবে করা হয়েছে যে দেখলে মনে হবে ফাউন্টেনের পানি যেন আকাশ ছুঁয়েছে। আর এরই সাথে হালকা বিটের আরাবিক ক্লাসিক থেকে শুরু করে মাইকেল জ্যাকসনের থ্রিলার ধাঁচের গান সবসময়ই বাজতে থাকে। এখানে সন্ধ্যা ৬ টা থেকে প্রতি ৩০ মিনিট পর পর এক ধরনের লাইট ইলুমিনেটিং শো হয় যা দেখতে অনেক মানুষের ভিড় হয়।
এছাড়াও দুবাই আইস রিঙ্কে অলিম্পিক আকারের বরফের মধ্যে স্কেটিং করার সুযোগ পাবেন। আবার বাচ্চাদের খেলার ছলে বিভিন্ন জিনিস শেখার জন্য আছে "আর কিন্ডাজিয়া"। এছাড়াও পরিবারের সবাইকে নিয়ে সিনেমা দেখার জন্য ইনডোর সিনে কমপ্লেক্স ও দুবাই এর বিভিন্ন আর্টসের প্রদর্শনী দেখার জন্য আছে দুবাই অপেরা। একদম উপরে আছে বুর্জ খলিফা অবজারভেশন ডেক যেখান থেকে একদম উপর থেকে ৩৭০ ডিগ্রি এঙ্গেলে বুর্জ খলিফার চমৎকার দৃশ্য চোখে পড়বে। বিশেষ করে সন্ধ্যার সময় বেশী সুন্দর লাগে।
দুবাই মল কীভাবে যাবেন
বাংলাদেশ থেকে এমিরাটস এয়ারলাইন্সে দুবাই যাওয়া যায়। এক্ষেত্রে খরচ পড়বে ৫৫,০০০ থেকে ৬০,০০০ টাকা। তবে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সে দুবাই গেলে কলম্বোতে ১ ঘণ্টার ট্রানজিট থাকলেও খরচ অনেক কম পড়ে তাই অনেকেই এমিরেটসে দুবাই গেলেও ফেরার সময় শ্রীলঙ্কান এয়ার লাইন্সে ফিরে। দুবাই এয়ার পোর্ট থেকে মেট্রো, বাস বা ট্যাক্সিতে শহরের ভিতরে যেতে পারবেন। তারপর মেট্রোতে দুবাই মল যেতে হবে।
দুবাই কোথায় থাকবেন
একা থাকার জন্য কম খরচের মধ্যে বেশ কিছু ভালো হোস্টেল আছে। আর কয়েকজন মিলে গেলে পুরাতন দুবাইতে থাকার চেষ্টা করবেন। পুরাতন দুবাইতে রুমগুলো বেশ বড় তাই এক রুমে ৬ জন শেয়ার করে থাকা যায়। দুবাই মলের কাছে ওয়েলকাম হোস্টেল, সিগনেচার ইন দেইরা, দুবাই পাল্ম হোটেল, ইউরেকা হোটেল, সিটি স্টার হোটেল, এমিরেটস হোটেল, টুরিস্ট হোস্টেল, মে ফেয়ার হোটেল, আরাবিয়ান পার্ক হোটেল গুলোতে ১৩০০- ১৭০০ টাকায় দুই জন থাকতে পারবেন। আর দুবাই মলের ভিতরে স্লিপ এন শপ, রোভ ডাউন টাউন হোটেল গুলোতে থাকতে জন প্রতি ৩,৫০০- ৫,৫০০ টাকার মতো খরচ হবে।
ভ্রমণ টিপস
দুবাই মলে জিনিসে দাম একটু বেশী তাই কেনাকাটা করার ক্ষেত্রে খরচ বেশী হবে সেটা মনে রেখে শপিং করবেন।
দুবাই মল ভালো ভাবে ঘুরার জন্য এক দিন পুরো দিন সময় নিয়ে যাবেন। অল্প সময়ে দুবাই মল ভালো ভাবে ঘুরতে পারবেন না।
এখানের বিভিন্ন শপে ডিস্কাউন্ট দেওয়া হয় তবে কেনার সময় নিজে থেকে ডিস্কাউন্টের কথা জিজ্ঞাসা করে নিবেন। অনেক সময় জিজ্ঞাসা না করলে অনেক শপেই ডিস্কাউন্ট দেয় না।
দ্যা দুবাই একুয়ারিয়াম ও আন্ডার ওয়াটার জু তে ঘোরার ক্ষেত্রে প্যাকেজে বেছে নিলে ঘুরতে সুবিধা হবে।
দ্যা দুবাই একুয়ারিয়াম ও আন্ডার ওয়াটার জুতে মেম্বার শিপ কার্ডের সুবিধা আছে। যদি সম্ভব হয় এই কার্ড করে নিলে খরচ ও কম হবে সাথে প্রতিবার গিফট শপ সহ অন্যান্য রাইডে ডিস্কাউন্টও পাওয়া যাবে।
দুবাইে যাতায়াতের ক্ষেত্রে মেট্রো ব্যবহার করা সুবিধাজনক তাই প্রথমেই একটি মেট্রো কার্ড কিনে নেওয়া ভালো।