আজকের টপিক: মহামারি-উত্তর সময়পর্বে বিদেশি পুঁজি আকর্ষণে চীনের শক্তি প্রবল
  2020-09-03 15:16:55  cri


এ বছর কোভিড-১৯ মহামারীর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন দেশে অর্থনীতি পর্যায়ক্রমে নিম্নমুখী প্রবণতায় চলে আসে। বৈশ্বিক বাণিজ্য ও আন্তঃদেশীয় পুঁজি বিনিয়োগে অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। এই পটভূমিতে চীনা অর্থনীতির অবস্থা কেমন? চীন কি বিদেশি পুঁজি আকর্ষণে আগের মতোই দক্ষতা দেখাতে সক্ষম হবে? আজকের টপিক আসরে আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করবো।

এই সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের জবাবে চীনের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিনিময় কেন্দ্রের মহাব্যবস্থাপক ও অর্থনীতিবিদ ছেন ওয়েন লিং বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিকোণ থেকে মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্ব ব্যাংক, আর্থ-সহযোগিতা সংস্থা (ওইসিডি)—এই তিনটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা কমিয়ে দিয়েছে। তাদের অভিমত হচ্ছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বে অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুতর নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

চলতি বছরের প্রথমার্ধে চীনে বিদেশি পুঁজি ও বৈদেশিক বাণিজ্য রক্ষার কার্যকারিতা সম্পর্কিত আলোচনায় তিনি বলেন, বৈদেশিক পুঁজি ও বৈদেশিক বাণিজ্য রক্ষা ও স্থিতিশীল করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশি পুঁজি থেকে সৃষ্ট শুল্কের আয় ইতোমধ্যেই গোটা শুল্কের ২০ শতাংশে পৌঁছেছে। এতে কর্মসংস্থানের হার মাত্র ২০ শতাংশ। ২০০৭ সালে বিদেশি পুঁজি রপ্তানির ৮৫ শতাংশে দাঁড়ায়, বর্তমানে যা প্রায় ৫০ শতাংশ। এ থেকে স্পষ্ট যে, বিদেশি পুঁজি চীনা অর্থনীতির জন্য কতো গুরুত্বপূর্ণ!

চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে, চীন সম্ভবত বিশ্বে একমাত্র দেশ, যেদেশে বিদেশি পুঁজি বৃদ্ধির প্রবণতা বজায় রয়েছে। বছরের প্রথম ৭ মাসে ৫৩০ বিলিয়ন ইউয়ান বিদেশি পুঁজি সংগ্রহ করেছে চীন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ০.৫ শতাংশ বেশি। এ সময় বিশ্বে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে এই ফলাফল অর্জন করা সহজ ছিল না। বৈদেশিক বাণিজ্য খাতে এ বছরের প্রথম সাত মাসে প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক থেকে ইতিবাচক দিকে চলে এসেছে। বিশেষ করে জুলাই মাসে রপ্তানির পরিমাণ ১০.৪ শতাংশ বেশি ছিল। পরপরই ৪ মাসের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি বাস্তবায়িত হয়েছে, অর্থাত্ চীনা অর্থনীতির দ্রুত পুনরুদ্ধার হচ্ছে।

চীনে মহামারীর অবস্থা দ্রুত ভাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ বছরের মার্চ মাসের শেষ দিক ও এপ্রিল মাসের শুরুর দিক থেকে চীনে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উত্পাদনকাজ পুনরায় শুরু হয়ে যায়। শিল্প চেইন, সরবরাহ চেইন, সেবা চেইন ও মূল্য চেইনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম ক্রমশ তেজীয়ান হয়ে ওঠে। চীনা অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে 'ডাবল লুপ' একটি বহুল ব্যবহৃত টার্ম। এটি চীনা অর্থনীতির উন্নয়নে কৌশলগত নির্দেশনা দিয়েছে। চীনের আরও বিশাল উন্নয়নের সম্ভাবনা খুলতে সহায়ক হবে এটি।

তাহলে, ডাবল লুপ মানে কী? 'দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া' এর একটি অর্থ। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনা জনগণের সমস্যাগুলোর ভালভাবে সমাধান করতে হবে। বর্তমানে সংরক্ষণবাদ বাড়ছে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির নিম্নদিকে চলে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বাইরের বাজারের ওপর অতিরিক্তভাবে নির্ভর করা সহজেই প্রভাবিত হচ্ছে। সুতরাং, দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা সুষ্ঠুভাবে মেটানো তথা 'দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া' নিঃসন্দেহে বাইরের ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক।

এই ক্ষেত্রে চীনে বেশ অনেক সুবিধা রয়েছে। চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ হওয়ার বিগত ৪০ বছরে দেশটিতে ব্যাপক মাত্রায় বস্তুগত ভিত্তি সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বে সবচেয়ে সুসম্পূর্ণ ও সর্বোচ্চ মাত্রার শিল্প সরবরাহ চেইন রয়েছে চীনে। এতে ১৪০ কোটি মানুষের বড় বাজার ও ৪০ কোটি মধ্যবিত্ত মানুষ রয়েছে। এসব ফ্যাক্টর চীনকে নিজের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণসংক্রান্ত অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও চালিকাশক্তি যোগাবে।

সুতরাং, মহামারি-উত্তর সময়পর্বে বিদেশি পুঁজির আকর্ষণে চীনের শক্তি প্রবল। চীনে বৈদেশিক উন্মুক্তকরণের নীতিগত পরিবেশ ক্রমশ ভালো থেকে আরও ভালো হচ্ছে। পাশাপাশি, চীনে ব্যবসায়িক পরিবেশও উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে। চলতি বছরে বিশ্ব ব্যাংকের প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, ব্যবসায়িক পরিবেশের দিক দিয়ে চীন বিশ্বে ৩১তম স্থান দখল করে আছে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040